মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌর এলাকার বসতঘর থেকে চুরি হওয়া প্রায় দুই মাস বয়সী শিশুর লাশ পাওয়া গেছে।
সোমবার (২ অক্টোবর) সকাল ৭ টার দিকে মিরকাদিম পৌর এলাকার গোপালনগর বসত ঘরের ২০ মিটার অদুরে একটি ডোবা থেকে চুরি হওয়া শিশুর লাশটি উদ্ধার করে স্বজনরা।
নিহত শিশুটির নাম আজান। সে নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জ এলাকার মো. শরীফ হোসেনের ছেলে। আজান জন্মের কয়েক দিন আগে থেকে শরীফের স্ত্রী শ্রাবণী বেগম মিরকাদিমের গোপালনগরে বাবার বাড়িতে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে ঘর থেকে শিশুটি নিখোঁজ হয়।
নিহতের নানি ময়না বেগম বলেন, আজান নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমাদের ঘরের শোক চলছে। আমার দুইটি মেয়ে, কোন ছেলে ছিল না। মেয়ের ঘরে ছেলে হওয়াতে আমরা খুব খুশি ছিলাম। খুব আদরের ছিল। নিখোঁজের পর থেকে আমরা আজানকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছিলাম। সকালে বাড়ির পাশের ডোবার দিকে কুকুর ডাকাডাকি করছিল।
তখন আমি আমার মেয়েকে ও বোনকে বাড়ির পাশে ডোবা গুলোতে খুঁজতে বলি। তারা সেখানে খুঁজতে যায়। একপর্যায়ে আদা ডুবন্ত অবস্থায় আজানের লাশটি দেখতে পায় তারা। পরে আমরা পুলিশে খবর দেই।
ঘরের ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেলো, ছেলে হারানোর শোকে জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে শ্রাবণী আক্তার। স্বজনরা তার হুশ ফেরাতে চেষ্টা করছেন। অনেক চেষ্টার পর জ্ঞান ফেরে শ্রাবণীর। জ্ঞান ফিরতেই ছেলেকে খুঁজতে থাকেন এই মা। একটু সাবলীল হয়ে সেদিনের ঘটনার বিষয়ে শ্রাবণী বলেন, আমার বাবা বাচ্চার পাশে ঘুমিয়ে ছিল। সকাল পৌনে সাতটার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যাই।
তিনি আরও বলেন, সে সময় পাশের বাড়ির চাচি রমিজা বেগম ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁকে বাচ্চার দিকে খেয়াল রাখতে বলে শৌচাগারে গিয়ে ছিলাম। এসে দেখি, ওই চাচিও নেই, বাচ্চাও নেই। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি, চাচি তাঁদের ঘরে, বাচ্চা কোথাও নেই। কত বললাম চাচি বাচ্চাটারে কোথাও লুকাইয়া রাখলে কও। কে জানতে বাচ্চাটারে ডোবার মধ্যে ডুবাইয়া রাখছিল।
রমিজা বেগমের সাথে আমাদের শত্রুতা ছিলনা তার পরেও কত নিষ্ঠুর ভাবে আমার দুধের বাচ্চাটারে মাইরা ফেললো গো... বলতে বলতে আবারো জ্ঞান হারান শ্রাবণী।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, ছোট একটা বাচ্চা তার সাথে তো কারো সঙ্গে শত্রুতা থাকতে পারেনা। বাচ্চাটির স্বজনদের সঙ্গেও রমিজাদের কোন শত্রুতা ছিলনা। তার পরেও এমন একটি দুধের বাচ্চাকে কিভাবে হত্যা করতে পারলো রমিজা বেগম। এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে রমিজা বেগমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
শিশুর বাবা শরীফ হোসেন বলেন, তিনি একজন ট্রাকচালক। তাঁকে বাড়ির বাইরেই বেশি সময় থাকতে হয়। দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন শ্রাবণীকে। সন্তান জন্মের কয়েক দিন আগে গোপালনগরে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসেন স্ত্রীকে। এখানেই আজানের জন্ম হয়। কয়েক দিন পর আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসার কথা ছিল।বাচ্চাটাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে পারলাম না। মেরে ফেললো। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
যে ঘর থেকে শিশুটি নিখোঁজ তার প্রায় ১০০ ফুট দক্ষিণে রমিজা বেগমদের ঘর। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রমিজা বেগমকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে পুলিশ ও স্বজনদের নজরদারিতে ছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থান্দার খাইরুল হাসান বলেন, শুরু থেকেই বাচ্চার স্বজন ও রমিজা বেগম নামে ওই প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের সন্দেহ ছিল। রমিজা বেগমকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
শিশুটির লাশ ময়না তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় রোববার রাতে অজ্ঞাত আসামি করে একটি চুরির মামলা করা হয়েছিল। সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে।
এবি/এইচএন