বয়স ২৬। ধীর স্থির। শান্ত। তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দপ্তরে যখন ফরাসি সাংবাদিক টিমকে স্বাগত জানালেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তখন দুপুর ছুঁই ছুঁই। তার দুই সহকর্মী একজন নোট নিচ্ছেন। অন্যজন নানা বিষয়ে সহায়তা করছেন তরুণ উপদেষ্টাকে।
ফ্রান্স থেকে আসা লা লিবারেশন পত্রিকার দুই তরুণ সাংবাদিক পিয়ের তেরেজ ও পল বইয়ার সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের। জানতে চেয়েছিলেন আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার নেপথ্য কাহিনী, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার, সংখ্যালঘু ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মৌলবাদসহ নানা প্রসংগে। টেপ রেকর্ডারে ধারণকৃত সাক্ষাৎকারটির আংশিক সম্পাদনা করে পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন সিনিয়র সাংবাদিক অম্লান দেওয়ান।
প্রশ্ন: ছাত্রজীবনের অতীত স্মৃতিচারণ করবেন? রাজনীতিতে কিভাবে জড়িত হলেন?
নাহিদ: এটাতো অনেক লম্বা ইতিহাস। সংক্ষেপে বলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জীবনের প্রথম থেকেই বিভিন্ন আন্দোলনে জড়িত ছিলাম। ডাকসু ছাত্র সংসদের ইলেকশন করেছিলাম ২০১৯ সালে। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে দুইটা গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হয়েছিল। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমি অংশগ্রহন করেছিলাম। নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এটাই মূলত শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন নেওয়ার পর ফার্স্ট ইয়ার থেকেই ছাত্রদের দাবি দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ছিলাম। এভাবেই আন্দোলনের শুরু। এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে নির্দলীয় ছাত্র সংগঠন গনতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি (ডেমোক্রেটিক স্টূডেন্ট ফোর্স) গঠনের কাজ শুরু করি। আমি এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ছিলাম। এটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি সংগঠন। শুধু ছাত্রদের দাবি দাওয়ার কাজ করতাম। ছাত্রদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করতাম।
প্রশ্ন: ২০১৭ সালে সুন্দরবনের কাছাকাছি রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে আপনি প্রথম রাজপথে আন্দোলনে অংশ নেন বলে শুনেছি। সে আন্দোলনের কথা মনে আছে?
নাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় ঢুকেই আমরা এ আন্দোলনটা দেখতে পাই। বিবেকের তাড়নায় তখন সে আন্দোলনে অংশ নিই। সেটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আন্দোলনে আমার প্রথম পার্টিসিপেশন ।
প্রশ্ন: জুলাই মাসে আন্দোলন করতে গিয়ে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছিলেন। আপনার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে আপনাকে মৃত ভেবে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে আমরা শুনেছি। আসলে কি ঘটেছিল সেদিন?
নাহিদ: জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলনটা শুরু করলাম। তারপর ফ্যাসিস্ট সরকার দমনপীড়ন শুরু করে দিল। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হল। সারাদেশে প্রায় ৩/৪শ মানুষ হত্যা করা হলো। এ অবস্থায় আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে গুম করা হয়। আন্দোলন থামিয়ে দিতে তারা এসব করছিলো। এটা বাংলাদেশে নতুন কিছু না। গত ১৫/১৬ বছর ধরে বিরোধীমতের মানুষকে গুম করে দেওয়া একটি পলিটিক্যাল সিস্টেমে দাড়িয়ে গিয়েছিল।
আমরাতো সেই গুমের ঘটনাগুলি এখন দেখতে পাচ্ছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫/১৬ বছরের শাসনামলে প্রায় কয়েক হাজার মানুষকে গুম করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখা হতো। নির্যাতন করা হতো। অনেককে এখনো পাওয়া যায়নি। আয়নাঘর নামে যে টর্চার সেলের কথা আমরা শুনি আমাকেও ওই রকম একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন: আপনাকে কখন কিভাবে কিডন্যাপ করা হয়?
নাহিদ: আমাকেতো রাতেই নিয়ে যাওয়া হয়। এটা ২০ তারিখ দিবাগত রাতে। আমি এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম। সেখানে রাত ২ টা থেকে ৩ টা নাগাদ ২০/২৫ জনের একটি দল সিভিল ড্রেসে এসে চোখ বেধে গাড়িতে উঠিয়ে আমাকে অজানা স্থানে নিয়ে যায়। আমার হাত বেধে ফেলেছিল। এ সময় বুঝতে পারিনি দেখতে পারিনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি কি মৃত্যুর ভয় পেয়েছিলেন? আপনার উপর শারীরিক বা মানসিকভাবে কি ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে?
নাহিদ: আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তারাতো আমাকে বলেছে যে, আমাকে গুম করা হয়েছে। আর কখনো বের হতে পারবো না এবং তারা বিভিন্ন ইন্টারোগেশন করে। এক পযায়ে ফিজিক্যাল টর্চার শুরু করে। মেন্টাল টর্চারতো ছিলই। আমি কয়েকবার সেন্সলেস হয়ে যাই। আর এভাবে ২৪ ঘন্টা নির্যাতনের ভিতর পার করেছি। আমি নিজেও ভাবিনি আর কখনো পৃথিবীর আলো দেখবো। গুম হওয়ার পুরোটা সময় আমার হাত ও চোখ বাধা ছিলো।
প্রশ্ন: জুলাই মাসের শেষে আপনি কিডন্যাপ হলেন আর কয়েকসপ্তাহ পর হাসিনা হেলিকপ্টারে পালিয়ে গেল। জনগনের অনেক বছরের আন্দোলন সংগ্রামের সফল পরিসমাপ্তি হল। এ বিজয় কিভাবে উদযাপন করলেন?
নাহিদ: এটি ছিলো বাংলাদেশের জনগনের বিজয়। বিরাট সফলতা। মানুষের কল্পনারও বাইরে ছিল যে শেখ হাসিনার পতন সম্ভব। এ অসম্ভবকে সম্ভব করে জনগন বিজয় অর্জন করেছে। একদিকে যেমন তার পতন হয়েছে অন্যদিকে আমাদের দায়িত্ব দ্বিগুন হয়ে গেছে। সে সময় কোন সরকার ছিল না। কাজেই একটা সরকার গঠন করা ছিল আমাদের প্রথম দায়িত্ব। তাছাড়া দেশে স্ট্যাবিলিটি আনার কাজে মনোনিবেশ করেছিলাম। বিজয় সেলিব্রেশন করার সুযোগ সময় পাইনি।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে আছে সরকার পতনের পর কার ফোন পেয়ে প্রথম জানলেন যে, আপনি সরকারের মন্ত্রী পদমর্যাদায় একজন উপদেষ্টা হয়েছেন? ড. ইউনুস কি আপনাকে ফোন করেছেন? কিভাবে প্রথম জানলেন?
নাহিদ: সরকারে কারা উপদেষ্টা হবে এটাতো আমরা ঠিক করেছি। আমরাই অন্য উপদেষ্টাদের অবহিত করেছি। আমরাই ঠিক করেছি ছাত্রদের মধ্য থেকে দুইজন থাকবে। আমরাই অন্যদের জানিয়েছি যে আমরা আপনাকে উপদেষ্টা হিসাবে পেতে চাই।
প্রশ্ন: মানে উপদেষ্টা পরিষদের তালিকাটা আপনারা আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছিলেন?
নাহিদ: না। এটি আগে থেকে কোন পরিকল্পনা করে হয়নি। শেখ হাসিনা সরকার চলে যাওয়ার পর একটি ভেকুয়াম তৈরি হলো। সেটি পূরন করার রেসপনসিবিলিটি আমাদের উপর আসলো। আমলা ও অন্যান্য যারা জনগনের পক্ষে ভূমিকা রেখেছে তাদেরকেই আমরা উপদেষ্টা হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে গন্যমান্য আরও অনেকেই ছিলেন। কিন্তু আপনার ড. ইউনুসকেই বেছে নিলেন। কেন? অন্য কারও নাম কি সামনে এসেছিল?
নাহিদ: না। অন্য কারও নাম মাথায় আসেনি। আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। ড. ইউনুস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। জিও পলিটিক্যালি ইম্পর্টেন্ট । বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী। এজন্যই ড. ইউনুসকে ঠিক করি। ৫ তারিখে ড. ই্উনুস যখন রাজি হলেন এর পরের দিন লাইভে ফেইসবুকে ডিক্লায়ার করে দিই। অন্যদের মধ্যে সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি ও ব্যুরোক্রেটকে ঠিক করি। যারা সবার কাছে গ্রহনযোগ্য ও যারা আন্দোলনের সময় ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন।
প্রশ্ন: আপনার পদবিটা আসলে কি? দায়িত্ব কি কি? সারাদিন কি কি কাজ করেন?
নাহিদ: আমার দুইটা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব। মন্ত্রীর মতো একই ধরনের কাজ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয় ছাড়াও আমাকে ডাক ও টেলিযোগাযোগও দেখতে হয়। আইসিটি, ইন্টারনেট ইত্যাদির মতো বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয়। মিনিস্টারের যে রোল সেটাই আমাকে করতে হয়।
প্রশ্ন: আপনি কি মিনিষ্টারের মতো নাকি মিনিষ্টার?
নাহিদ: আমাদের পদটাকে মূলত এডভাইজার বলা হয় কিন্তু এটা মূলত মিনিস্টার। মিনিষ্টারের মতোই কাজ।
প্রশ্ন: আপনার উপর যে সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা কতটুকু চ্যালেন্জিং?
নাহিদ: চ্যালেন্জতো আছেই। যেহেতু আমাদের এ ব্যাপারে এক্সেপেরিয়েন্স নাই। গত তিন মাসে আমরা অনেকটাই কাভার করেছি। আমরা চেস্টা করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: আপনার উপর তথ্য ও সম্প্রচারসহ টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রনালয়ের যে সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে- গত ৩ মাসে সেটি কতটুকু করতে পেরেছেন? মৌলিক কি পরিবর্তন আনতে পেরেছেন ?
নাহিদ: আমরাতো সংস্কারের কথা বলছি। সুতরাং আমরা সংস্কার সংক্রান্ত কাজগুলিই করছি। আইন কানুন নিয়ে কাজ করছি। কিছু জনবান্ধব কাজ করছি। ইন্টারনেটের দাম কমানোর চেষ্টা করছি। আরও বেশ কিছু কাজ চলমান। পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রশ্ন: সরকারে এসে কি কাজটা প্রথমে অগ্রাধিকারভিত্তিতে করলেন ?
নাহিদ: এখানে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমেই আমরা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের জন্য সুপারিশ করেছি। এই অ্যাক্ট নিয়ে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট কেন বন্ধ করা হল তার তদন্তের ব্যবস্থা করেছি। দুর্নীতির যে প্রজেক্টগুলি ছিল সেগুলি বন্ধ করে দিয়েছি।
প্রশ্ন; সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট কি নিপীড়নমূলক কোন আইন?
নাহিদ: এটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে পরিচিত ছিল। এটা দিয়ে মূলত সাংবাদিকদের গনমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা হত। অনলাইনে লেখালেখি বা ভিন্ন মতকে দমন করতে এ আইনটি ব্যবহার করা হত।
প্রশ্ন: তথ্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসাবে কিভাবে জনগনের আস্থায় আনবেন? স্বৈরাচারের সাথে আপনাদের পার্থক্যটা কিভাবে করবেন?
নাহিদ: সরকারের পক্ষ থেকে একটা গনমাধ্যম সংস্কার কমিশন করা হয়েছে। তারা সকল অংশীজনের সাথে আলোচনা করে স্বাধীন গনমাধ্যমের একটি রুপরেখা প্রনয়ন করবে। সে অনুযায়ী আমরা ভবিষ্যতে কাজ করব। পাশাপাশি গনমাধ্যমের সাথে আমরা নিয়মিত মতবিনিময় করছি। তাদের অনুপ্রানিত করছি যাতে তারা স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে।
মিসইনফরমেশন রোধে সরকারের দিক থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা বলছি।
প্রশ্ন: এ প্রশ্নটা অনেকটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন মনে হতে পারে। আগে নিজেই আন্দোলনকারি ছিলেন। এখন যে সব আন্দোলন হয় সেগুলি কিভাবে মোকাবিলা করেন?
নাহিদ: এটাতো ইন্টারেস্টিং। দুইদিন আগে যে পুলিশের মুখোমুখি আমরা দাড়িয়ে ছিলাম এখন সেই পুলিশের সাথেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। যে গোয়েন্দা সংস্থা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তাদের সাথে বসেই আমার কাজ করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনারা কি কোন সাবোটাজের ভয় পান ? আস্থাহীনতার কোন সংকট রয়েছে কিনা?
নাহিদ: মানুষের আস্থা-বিশ্বাসতো এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি। এ কারনে পুলিশ কনফিডেন্স নিয়ে কাজ করতে পারছে না। নেগেটিভ যে চিন্তাধারা এখনো রয়ে গেছে তা সমূলে বিনাশ করতে হবে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরাতো প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস করে দিতে পারিনা। রাস্ট্রের প্রয়োজনে এগুলি সচল রাখতে হবে।
প্রশ্ন: সিভিল সোসাইটি ও ছাত্র জনতার সাথে কথা বলে জেনেছি সরকার অনেক ভাল কাজ করছে। আপনারা কি আশংকা করেন না যে আওয়ামীলীগ কি বলপ্রয়োগ করে আবারো ক্ষমতা নিতে পারে?
নাহিদ: সম্ভাবনাতো থাকেই। যেখানে বিপ্লব সেখানেই প্রতিবিপ্লবের সম্ভাবনা থাকে। তবে জনগন যেভাবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে তাদের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছে আমারতো মনে হয় না তারা আর ফিরে আসতে পারবে। জনগন আর তাদের ফিরে আসা মেনে নেবে না। তবে লুটপাট করা অর্থ ব্যবহার করে তারা নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে। কিন্ত জনগন তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আর হাসিনাতো পালিয়ে গেছে।
প্রশ্ন: সেনাবাহিনীর দিক থেকে ক্ষমতা গ্রহনের কোন সম্ভাবনা দেখেন কি?
নাহিদ: সেনাবাহিনীর ভিতর থেকেও ক্যু হওয়ার সম্ভাবনা একবারেই নেই তেমনটা বলা যায় না। তবে অতীতে যখনই সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে তখনই তারা বিতর্কিত হয়েছে। ফলাফল ভালো হয়নি। সে কারনে আমরা এবার পরিস্কার করে বলেছি যে, আমরা সেনাশাসন মানবো না।
প্রশ্ন: এ সরকার আসার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনসহ ৮ দফা দাবি দিয়েছে। এ ব্যাপারে কি বলবেন?
নাহিদ: আমরা সংখ্যালঘু কমিউনিটির প্রতি তাদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে কমিটেড। তাদের নানাভাবে আশ্বস্ত করেছি। তাদের সিকিউরিটির কথা বলেছি। তবে এ সরকার সবেমাত্র তিন মাস সময় পার করলো। কিন্তু অতীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কোন সরকারের কাছেই সুবিচার পায়নি। আমাদেরতো সেই সময়টা দিতে হবে। আন্দোলনের পর যে অস্থিরতা ছিলো সে সময় কয়েকজন মারা গেছে। অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সাম্প্রদায়িক কারনে তাদের কেউ মারা যাননি বা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়নি। কাজেই এসব অভিযোগ সত্যি নয়। আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে তাদের অনেকে মারা গেছে। তাদের হিন্দু হিসাবে নয়, আওয়ামীলীগ হিসাবেই দেখা হয়েছে। এটা পলিটিক্যাল ঘটনা। রিলিজিয়াস ঘটনা নয়। আর তারা এটাকে কমিউনাল হিসাবে পোট্রেট করেছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির উত্থান হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। আসলে কি ঘটছে?
নাহিদ: মৌলবাদের সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে নেরেটিভ প্রচার করা হচ্ছে তার একটা সম্পর্ক রয়েছে। এটা আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য ব্যবহার করেছে। সেইম নেরেটিভ এখন ইন্ডিয়াও প্রচার করছে। আগষ্টের গনঅভ্যুত্থানকে তারা ইসলামিক মুভমেন্ট হিসাবে প্রচার করতে চাচ্ছে। আসলে এটা ছিলো ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমরা পূজার ছুটি বৃদ্ধি করেছি। ৪৩ হাজার পূজামন্ডব ছিল। কিছু ছোট ঘটনা ঘটেছে।
প্রশ্ন: এত কাজের চাপে আপনি কি নিজের পরিবারকে বা বন্ধুদের আগের মত সময় দিতে পারেন?
নাহিদ: আমরা সবসময় একটা কথা বলি যে, আমরা যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছি আমরা সবাই শহীদ। বিপ্লবের অপর পিঠেতো মৃত্যু। সেটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করি। আর পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবনেতো আগের মত সময় দিতে পারিনা। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চা এর আড্ডা থেকে দূরে। সেসব দিন অনেক মিস করি। তারপরও চেষ্টা করি বন্ধু পরিবার পরিজনকে সময় দিতে।
প্রশ্ন: ভারত সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। আপনার মতামত কি ?
নাহিদ: বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব আমাদেরই। তাদের ব্যাপারে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। ভারতের পক্ষ থেকে আওয়ামীলীগের সহিংসতা নিয়ে কোন বক্তব্য আসেনি। অনেক দেশ বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রতি তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ভারত নীরব। তাছাড়া ভারত এমন একজনকে আশ্রয় দিয়েছে যিনি গনহত্যার জন্য দায়ী।
প্রশ্ন: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নাহিদ: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
এবি/আরএ