রাজধানীর মহাখালী সড়ক থেকে সরে গেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপর থেকেই তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করার দাবিতে সড়কটি অবরুদ্ধ করে রাখেন প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীরা। অববোধ তুলে নেওয়া ফলে আবারও স্বাভাবিক হয়েছে মহাখালীর যান চলাচল।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান। এর পর থেকে সড়ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর আগে এই অবরোধকে ঘিরে এ এলাকায় কয়েকবার নাশকতা তৈরি হতে দেখা যায়।
তিতুমীর কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করার দাবিতে সকাল থেকেই রাজধানীতে অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলশ্রুতিতে রাজধানীর মাহাখালীতে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক দিন ধরে আমাদের কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানিয়ে আসছি। তবে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছেড়ে যাবেন না বলেও জানান তিনি।
ভোগান্তিতে পড়া এক যাত্রীরা বলেন, দেশে যেন এখন মানুষের দাবি আদায়ের খই ফুটছে। গত ১৬ বছরে কেউ-কোনো কথা বলে নাই। এখন একটু-কিছু হলেই দাবি আদায়ের জন্য সড়ক অবরোধ। এর ফলে সাধারণ জনগণ পড়েছেন ভোগান্তিতে।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেন বলেন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় দাবিতে অবরোধ করেছেন। সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট কমানোর চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে আরও জানা গেছে, মহাখালীর রেলক্রসিং অবরোধ করাকালে আন্তঃনগর দুটি ট্রেন থামিয়ে তাতে ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন দুই ট্রেনের বেশ কিছু যাত্রী।
আরও জানা গেছে, মাথায় ইটের আঘাত লেগে এক শিশুও আহত হয়েছে। ১৮ নভেম্বর (সোমবার) সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলন করছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। ট্রেনে ঢিল মারার অভিযোগটি উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
আজ বেলা ১১টার পর থেকে মহাখালীর রেলগেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে মহাখালী রেল ক্রসিং অবরোধ করেন তারা। এতে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খল আন্দোলনের কারণে মহাখালী রেল ক্রসিং এলাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ঘটতে পারত। এতে শত শত শিক্ষার্থীসহ অনেক সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের বিধিনিষেধ না মেনে রেললাইনের ওপর হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যান এবং আন্দোলন করতে থাকেন। এ সময় রেললাইন দিয়ে আসা দুই আন্তঃনগর ট্রেন তড়িঘড়ি করে থামাতে বাধ্য হন চালকরা। চালকরা যদি সতর্কতার সঙ্গে ট্রেন না থামাতেন তাহলে মহাখালীতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মহাখালী এলাকায় লাইনে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন আটকা পড়ে। সেগুলো হলো জামালপুরের তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী বনলতা এক্সপ্রেস।
কন্ট্রোল রুম থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে– নোয়াখালী থেকে আসা ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা চালিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের হামলায় ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন ট্রেনে থাকা যাত্রীরা। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় আসার পথে উপকূল এক্সপ্রেসে আন্দোলনকারীরা হামলা চালিয়ে জানালার কাচ ভেঙে ফেলেছেন। পরে ট্রেনটি পুলিশ পাহারায় সেখান থেকে ঢাকা স্টেশনে আনা হয়েছে।
রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, উপকূল এক্সপ্রেসে হামলার ঘটনায় কয়েকজন আহত আছেন। এই মুহূর্তে সঠিক সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না।
.
আমার বাঙলা/এসএইচ