ইউনুস রিয়াজ, গবি প্রতিনিধি: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভূয়া পরিপত্রে সোয়া কোটির গাছ ২৩ লাখে বিক্রির অভিযোগে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা রাজীব মুন্সীসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৫ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসীব হাসান।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যজন হলেন- নালিতাবাড়ি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাতকুচি গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়া।
নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়া শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার বাতকুচি এলাকার মৃত বাহাদুর আলীর ছেলে। এছাড়া রাজীব মুন্সী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানার লক্ষীপুরা গ্রামের মৃত লালু মুন্সীর ছেলে। তিনি ২০১১ সাল থেকে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।
গত ২৬ এপ্রিল মামলার আসামি বাতকুচি গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেয়া তথ্য মতে মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকার নিজ বাসা থেকে রাজীব মুন্সীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১০ জানুয়ারি সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা রাজীব মুন্সী নালিতাবাড়ি থানার বাতকুচি গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রে যান। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়াকে গাছ বিক্রির একটি পরিপত্র দেখান। পরে সেখানকার ১২ একর পাহাড়ি জমিতে ১৮ বছর আগে রোপণ করা ৫ হাজার আকাশি প্রজাতির গাছ বিক্রি করে দেন।
ঘটনার তিন মাস পরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপকেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়ে জানতে পারেন সেখানকার ৫ হাজার গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে গাছ বিক্রির ব্যাপারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছুই জানতেন না।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে গত ২৬ এপ্রিল নিরাপত্তা কর্মী লাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার জবানবন্দি অনুযায়ী মঙ্গলবার সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিরাপত্তাকর্মী লাল মিয়ার জবানবন্দি মতে, উপকেন্দ্রের ১২ একর জমির ৫ হাজার গাছ পাহারার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। প্রায় তিন মাস আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে শাকিল নামের এক ব্যক্তিসহ দুইজন বাগানে আসেন। পরে গাছ বিক্রির একটি কাগজ দেখান তারা। এর কিছুদিন পর সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র হিসাব কর্মকর্তা রাজীব মুন্সী ও শাকিল বাগানে এসে গাছ বিক্রি করেন।
বিষয়টি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ম্যানেজারকে জানাতে চাইলে রাজীব মুন্সী নিজেকে বড় স্যার পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করতে বাধা দেন। পরে ২৩ লাখ টাকায় গাছগুলো বিক্রি করেন তিনি। সহযোগিতা করায় তাকে এক লাখ টাকা দেন রাজীব মুন্সী।
গাছ চুরির বিষয়ে শেরপুর জেলার ভাতশালা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক রেহেনা পারভীন বলেন, বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রায় তিন মাস উপকেন্দ্র পরিদর্শন করা হয়নি। আমরা নিরাপত্তাকর্মীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছিলাম। কিন্তু একবারও তিনি গাছ বিক্রির খবর দেননি। আমরা উপকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে গাছ না দেখতে পেয়ে নিরাপত্তা কর্মীকে জেরা করি।
তখন তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা তাকে পরিপত্র দেখিয়ে গাছ কেটে নিয়ে গেছেন। আমরা সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা জানান সেখান থেকে কোনো ধরনের পরিপত্র দেওয়া হয়নি। তখন আমরা থানায় অভিযোগ করি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি সদস্য মঞ্জুর কাদির আহম্মেদ বলেন, ঘটনা জানার পর তিনি নিজেই পরিদর্শন করেছেন। যে পরিপত্র দেওয়া হয়েছে সেখানে যে পদ ও নাম ব্যবহার করা হয়েছে সেটা ভূয়া। স্বাক্ষর জাল করে এই পরিপত্র বানানো হয়েছে।
নালিতাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) হাসীব হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করা হয়। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দি যাচাইয়ের পর রাজীব মুন্সী নামের একজনের সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া যায়।
গতকাল তাকেও সাভারের নিরিবিলি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটির সঙ্গে জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং এ ঘটনায় বিক্রিত গাছ ও টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলমান রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এবি/এইচএন