ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুতা কারখানাগুলো এখন সরগরম। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে জেলার পাদুকাশিল্পের কারিগরেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার জুতা সারা দেশে যায়। এই ঈদ মৌসুমে ১৮ লাখ থেকে ২১ লাখ জোড়া জুতা তৈরি হবে। ৫০ কোটি থেকে ৭০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলার জুতা তৈরির ব্যবসায়ীদের সংগঠন ও বিভিন্ন কারখানা সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাতে তৈরি ও মেশিনে তৈরি— দুই ধরনের জুতার কারখানা আছে। মেশিনে তৈরির জুতার কারখানাকে বলা হয় পিও ফুটওয়্যার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিও ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় জেলায় পিও ফুটওয়্যারের কারখানা ৩৮টি। আর হাতে তৈরির জুতা কারখানা আছে ২০ থেকে ২৫টি। এসব কারখানায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিন গড়ে এসব কারখানায় প্রায় সোয়া এক লাখ জোড়া জুতা তৈরি হয়। এক জোড়া জুতার পাইকারি মূল্য সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা। সে হিসাবে জেলায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় পৌনে দুই কোটি থেকে দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকার জুতা তৈরি হয়।
জানা যায়, রোজার এই এক মাসে ১৮ লাখ থেকে ২১ লাখ জোড়া জুতা তৈরি হবে, যা ৫২ কোটি থেকে ৭৩ কোটি টাকায় বিক্রি করা হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এসে জুতা দেখে কাভার্ড ভ্যানে করে নিয়ে যান।
সম্প্রতি জেলা শহরতলির পীরবাড়ি ও সদর উপজেলার শরীফপুর এলাকায় অবস্থিত একাধিক কারখানা ঘুরে দেখা যায়, কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ সেলাই করছেন, কেউ করছেন আঠা লাগানোর কাজ, কেউ কাটছেন সোল, রং ও ব্লক বসাচ্ছেন কেউ কেউ, আবার কিছু কারিগর মোহর বসাতে ব্যস্ত। পাশেই স্বয়ংক্রিয় মেশিনে কারিগরদের একদল প্লাস্টিকের সোল প্রস্তুত করেছেন। চলছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। দম ফেলার ফুরসত নেই।
সেভেন স্টার পিও ফুটওয়্যারের কারিগর মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ বলেন, ‘এক মাস ধরে ১০ ঘণ্টা করে কাজ করছি। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জুতার তিন হাজার জোড়া ফাইবারে (সোল) সিল মারতে পারি।’ আরেক কারিগর জসিম উদ্দিন বলেন, ঈদ এলে ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে জুতা নিতে এসেছেন আল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমি সারা বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জুতা নিয়ে বিক্রি করি। সামনে ঈদ, তাই ৬০ কার্টন জুতা নিয়েছি। এখানকার জুতার কোয়ালিটি অনেক ভালো, দামেও সাশ্রয়ী।’
নিউ চায়না ফুটওয়্যারের মালিক ফারুক ওসমান বলেন, কারখানায় উৎপাদিত জুতার পাইকারি মূল্য ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা। জুতার গুণগত মানে আমরা আপসহীন। এ জন্যই সারা দেশে এই জুতা যায়। গত বছর রাসায়নিক সংকট ছিল। এবার সেই সংকট নেই। তবে জেলায় পিও কারখানা অনেক হয়েছে। ব্যবসা মোটামুটি চলছে, তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী না। সরকারি সহায়তা পেলে আমরা আরো ভালো মানের জুতা উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবেন।
ভরসা সুজের ব্যবস্থাপক রাজু ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যবসার অবস্থা ভালো। প্রতিদিন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার জোড়া জুতা তৈরি হয়। আমাদের জুতা উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয় বেশি। স্যান্ডেল, দুই ফিতা ও বেল্টের জুতার পাইকারি মূল্য ২৭০-৩৫০ টাকা।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিও ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সেভেন স্টার পিও ফুটওয়্যারের মালিক মো. হানিফ মিয়া বলেন, সাধারণ মাসের তুলনায় এ মাসে উৎপাদন ভালো হচ্ছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ