নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ সরকারের ‘আইওয়াশ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘লুটপাট, অব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে যাত্রাপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ভয়াবহতা ও জনদুর্ভোগ শীর্ষক’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (অ্যাব) ঢাকা সেন্টার এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
রিজভী বলেন, ‘জনগণ ও ভোটারদের বাদ দিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় থাকার পেছনে সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের মতো অফিসাররা যে ভূমিকা রেখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী তাদের অবদান ভুলে যাবেন?
তিনি বলেন, ‘সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের আরব্য উপন্যাসের মতো যে ঘটনাগুলো আমরা প্রতিদিন শুনছি, এ ঘটনাগুলো কি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জানতো না? নিশ্চয়ই জানতো, কিন্তু তারা (কিছু) করেনি। আন্তর্জাতিক চাপ এবং কথাবার্তা এমন হচ্ছে, সে কারণে এখন তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। আমি আপনাদের বলি, এগুলো কিছুই হবে না, একটা আইওয়াশ করছে সরকার। এদের ঠিকই প্রটেকশন দেবে সরকার, কারণ এই বেনজির আহমেদ র্যাবের ডিজি থাকা অবস্থায় যত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, অসংখ্য মানবতাবিরোধী কাজ তাকে দিয়ে বাস্তবায়ন করানো হয়েছে। শেখ হাসিনা কি ভুলে যাবেন তার অবদান?’
রিজভী বলেন, ‘জনগণকে বাদ দিয়ে, ভোটারদের বাদ দিয়ে এ সরকার ক্ষমতায় থাকার পেছনে এসব কর্মকর্তা যে ভূমিকা রেখেছেন, যে অমানবিক রক্তাক্ত ভূমিকা রেখেছেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পেছনে দায়ী এই সব অফিসাররা। এখন আইওয়াশ করছে, দেখবেন যে কিছুই হবে না। দেখবেন কিছুদিন পর আরেকটি ঘটনা ঘটিয়ে সেদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবেন।’
রিজভী বলেন, ‘২০১৮ সালের মিডনাইট নির্বাচনের টোটাল আর্কিটেকচার হচ্ছেন সাবেক সেনাপ্রধান। আমরা এর আগে কখনো দেশের কোনো সেনাপ্রধানকে কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করতে শুনিনি। ওই নির্বাচনের পর তিনি বলে দিলেন স্বাধীনতার পর এত সুষ্ঠু নির্বাচন এই দেশে আর হয়নি। অর্থাৎ জোর করে ক্ষমতায় থাকার সব প্রটেকশন দিয়েছেন এই ব্যক্তি, সাবেক সেনাপ্রধান।’
রিজভী বলেন, ‘সরকারের জবাবদিহি নেই বলে কোনো কিছুর জন্যই ব্যবস্থা নিতে পারে না। যে সবচেয়ে বড় দুর্বৃত্ত সে এখন শ্রমিক লীগের নেতা। যারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিবাজ এবং দুর্বৃত্ত তারা এখন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা। বেআইনি অর্থের সঙ্গে বেআইনি ব্যক্তির মিশ্রণ ঘটে খুব দ্রুত। আমরা তারই পরিণাম দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘‘এই যে আনোয়ারুল আজীম আনারের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলে ফেললেন, ‘দেখুন তিনি এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন।’ আপনার এলাকার যদি কোনো মাফিয়া সেই এলাকায় কিছু হতে চান আর সেখানে যদি সরকার তাকে নিরাপত্তা দেয়, তাহলে কোনো ভদ্রলোক এমপি ক্যান্ডিডেট হতে পারবেন না, এটাই হচ্ছে সত্য কথা।’’
তিনি বলেন, ‘আগে তো কোনো দিন তার নাম শুনিনি। এই ঘটনা ঘটার পর জানতে পারলাম তিনি সেখানকার একজন ভয়ংকর রকমের মাফিয়া ব্যক্তি ছিলেন। সেরকম একজন ব্যক্তি আবার একটি দলের নমিনেশন পাচ্ছেন, তাও একবার না তিনবার। এ ধরনের ব্যক্তিরা কী করে এমপি হলেন এটা একটা সবচেয়ে বড় ঘটনা।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত হওয়ার আগেই কী করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিলেন এখানে ভারতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কনফিউশন সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি যে টাইপের লোক হোক না কেন, তার সংসদ সদস্যের একটা সিল আছে। তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যাকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে, এই ধরনের লোকেরা ভারতে আশ্রয় পান কী করে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পাই বাংলাদেশের নাকি শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিভিন্নভাবে ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকেন। তারা সেখান থেকে বাংলাদেশে চাঁদাবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। এটা আমার কথা না, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে আসছে। এদের মধ্য থেকে আবার কোনো দিন হয়তো কেউ কেউ এ দেশের এমপি হয়ে যাবেন, যদি এই কর্তৃত্ববাদী শাসক থাকে, যদি এই একনায়কোচিত শাসন থাকে। যদি এই ডামি নির্বাচনের মিডনাইট সরকার ক্ষমতায় থাকে, এরা নানাভাবে ম্যানেজ করে দেশে এসে এমপি হয়ে যেতে পারেন।’
সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অ্যাব সভাপতি এবং বিএনপির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, অ্যাব মহাসচিব আলমগীর হাসিন আহমেদ, মো. মাহবুব আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এবি/এইচএন