মাত্র ১২ দিনের বিদ্রোহী অভিযানে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে। এতে দীর্ঘ ৫৪ বছর দেশটিতে চলা আসাদ পরিবারের শাসন শেষ হলো। দুই যুগ ধরে চলা বাশারের শাসনের অবসান হলো। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাশার আল-আসাদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় আশ্রয় নিয়েছেন।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস ও রিয়া নভস্তির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাশিয়া আসাদ ও তার পরিবারের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে।
বাশার আল-আসাদের শাসনকাল শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে, তার বাবা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর। প্রথমে তিনি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তী সময়ে বাবার মতোই কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে।
২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’-এর ঢেউ সিরিয়ায় এসে পৌঁছালে বাশারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। যদিও এতদিন ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনে ক্ষমতায় ছিলেন বাশার।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে বাশার পদত্যাগে সম্মত হন এবং দেশত্যাগ করেন। তবে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে তখন কিছু জানা যায়নি।
রাশিয়ার বার্তা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি এবং কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একইসঙ্গে রুশ কূটনীতিকরা বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
এদিকে সিরিয়ার এই সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। এক জ্যেষ্ঠ রুশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ এখন বিদ্রোহীদের হাতে। এ খবরে সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে উল্লাস করেছেন। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে লুটপাটও চালিয়েছেন অনেকে।
দামেস্ক থেকে এএফপির প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাশার আল–আসাদের পতনের পর দামেস্কে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের ছয়তলা বাসভবনে ঢুকে পড়েন সাধারণ জনতা। তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও পুরুষ ছিলেন। অনেককে সেখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা গেছে। বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করে ফেলা হয়েছে। সম্মেলনকক্ষে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ