নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা বিশ্বের মধ্যে রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ অবস্থান করায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
গণমাধ্যমে বায়ুদূষণে ঢাকা শীর্ষে- এ সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি নজরে এনে সর্বোচ্চ আদালত মন্তব্য করেন, কর্মকর্তাদের সন্তানরা বিদেশে থাকে, তাই পরিবেশ অধিদফতর ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দেশের বায়ুদূষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে জারি করা রুলের শুনানি হয়।
সেখানে বায়ুদূষণ রোধে আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের সময়সীমা বেধে দেন হাইকোর্ট। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ আদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া টায়ার পোড়ানো ও ব্যাটারি রিসাইকেলিং বন্ধ।
সেই সাথে ঢাকার সংলগ্ন ৪ জেলা- গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা এবং ঢাকায় বালু, ময়লা ও বর্জ্য বহনের সময় ট্রাকসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন ঢেকে চলাচল করার ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ ৯ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার পর ফেব্রুয়ারি থেকে বায়ুদূষণ কিছুটা কমতে থাকে। বর্তমানে ঢাকা আবারও সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের শহর বলে গণমাধ্যমে জানানো হচ্ছে। গণমাধ্যমের খবর যুক্ত করে গত ১৫ নভেম্বর আবেদনটি করা হয়।
গণমাধ্যমে বায়ুদূষণের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তা উদ্বেগজনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে নাগরিকদের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার খর্ব হতে পারে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি পত্রিকায় ‘ঢাকার বাতাসে নতুন বিপদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে এইচআরপিবির পক্ষে একই বছরের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করা হয়।
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা দেন।
এর ধারাবাহিকতায় বায়ুদূষণ রোধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক শুনানিতে দূষণ রোধে কয়েক দফা নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক একটি আবেদন করে রিট আবেদনকারী।
এর প্রেক্ষিতে গত ১৩ জানুয়ারি কয়েক দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, ৯ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ঢাকায় মাটি, বালু, বর্জ্য পরিবহন করা ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা, নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি, বালু, সিমেন্ট, পাথর, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা। রাস্তায় পানি ছিটাবে সিটি কর্পোরেশন।
পাশাপাশি রাস্তা, কালভার্ট, কার্পেটিং, খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দরপত্রের শর্ত পালন নিশ্চিত করা। সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ি চলাচলের সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া এবং সময়সীমার পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা।
এছাড়া পরিবেশগত সনদ ছাড়া চলমান টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা। মার্কেট ও দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগে ভরে রাখা। বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের পদক্ষেপ নেওয়া।
এবি/এইচএন