ক্রীড়া ডেস্ক: গত নভেম্বরের কথা। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ দেখায় অস্ট্রেলিয়ার পেস অলরাউন্ডার ১৩২ বলে করেন ১৭৭ রান। ওয়ানডে বিশ্বকাপে মার্শের হাঁকানো ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ।
সেই দিনটি এখনো মনে আছে মার্শের, ‘ওইটা দারুণ স্মৃতি। তবে ফরম্যাটটা ভিন্ন ছিল। এখন ফরম্যাটটা আলাদা। কন্ডিশন আলাদা। দেশ আলাদা। পুনেতে ওই সপ্তাহটা আমাদের দারুণ কেটেছে। আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে একই চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছি।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটের ম্যাচে শুক্রবার ভোরে অ্যান্টিগায় মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া। গত নভেম্বরে মার্শ ছিলেন দলের সাধারণ এক ক্রিকেটার। এখন মার্শ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক। তাই দায়িত্বটাও বেশি তার। এই ফরম্যাটে এবার শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে চায় অজিরা। প্রথম পরীক্ষায় তারা উতরে যেতে চায় ভালোমতো। তবে কাজটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। তার মতে, বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
মাঠে নামার আগে মার্শ বলেছেন, ‘আসলে তারা বেশ অভিজ্ঞ। সঙ্গে তরুণ কিছু খেলোয়াড়ও এসেছে। তারা কিন্তু ভালো দল। এজন্যই কিন্তু সুপার এইটে খেলার সুযোগ পেয়েছে। সুতরাং, আমরা চ্যালেঞ্জের জন্য মুখিয়ে আছি।’
বিশ্বকাপে এবার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান নেই। টপ অর্ডার প্রতিদিনই ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের লড়াই শুরু হয় মিডল অর্ডার থেকে। তাহলে কোথায় ভালো করছে বাংলাদেশ? উত্তর একটাই, বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ দলকে সাফল্যে ভাসাচ্ছে। যেখানে পেসাররা আগুনে পারফরম্যান্স করছেন। স্পিনে ভেল্কি দেখাচ্ছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। মাঠে এই চতুষ্টয়ের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশে গেছে সুপার এইটে।
বাংলাদেশের বোলাররা হুমকি হতে পারে সেই ধারণা অজি অধিনায়কের আছে। তাই তো তিনি বাংলাদেশের একটি নিষ্প্রভ দিনের আশায় আছেন, ‘আশা করছি তারা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি তাসকিন। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন অ্যাভেইলেভেল। ৪ ম্যাচে ডানহাতি পেসার পেয়েছেন ৭ উইকেট। যেখানে তার বোলিং গড় ১৪.৫৭। আর ইকোনমি ৬.৮০।
তানজিম হাসান সাকিব ৪ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৯ উইকেট পেয়েছেন । যেখানে তার বোলিং গড় কেবল ৮। ইকোনমি ৪.৮০। নেপালের বিপক্ষে ২৪ বলের ২১টিই ডট দিয়ে বিশ্বকাপের ম্যাচে সর্বোচ্চ ডট বল দেওয়ার রেকর্ডও গড়েছিলেন তানজিম।
মোস্তাফিজ এবারের প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত দুর্বোধ্য। উইকেট একেবারেই তার জন্য মানানসই। একটু ধীরে বল আসা। বল গ্রিপ করা। অসমান বাউন্স। সবকিছুই মোস্তাফিজের পক্ষে গেছে। কন্ডিশনের পুরোপুরি ব্যবহার করে মোস্তাফিজ দেখিয়েছেন কারিশমা। ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট পেয়েছেন। যেখানে তার বোলিং গড় ৭.৭১, ইকোনমি ৩.৩৭। ডেথ ওভারে বিশেষ পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। স্লোয়ার ও কাটারে বিভ্রান্ত করে ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো খাবি খাওয়াচ্ছেন।
রিশাদ হোসেন এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রাপ্তি। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর নায়ক তিনি। চার বলের ব্যবধানে তিন উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শ্রীলঙ্কার থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে আনেন রিশাদ। ৭ উইকেট পেয়েছেন রিশাদও। যেখানে তার বোলিং গড় ১৪.৫৭। ইকানোমি ৬.৮০। শরিফুল ইনজুরিতে থাকায় তার এখনো মাঠে নামা হয়নি। চোট থেকে প্রায় সেরে উঠা শরিফুল ফিট হলে কোথায় খেলবেন সেটাও এখন বিরাট প্রশ্ন।
২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে বাংলাদেশে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল। যে সিরিজটি বাংলাদেশ জিতে নেয় ৪-১ ব্যবধানে। এর চার বছর আগে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারায় বাংলাদেশ। শক্তি ও সামর্থ্যে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। তবুও অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচে ফেভারিট। তবে বাংলাদেশ যে চমকে দিতে পারে সেই ধারনা অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে।
মার্শ যোগ করেন, ‘আমি মনে করি আগেও যেটা বলেছি, সুপার এইটে যারা এসেছে প্রত্যেকেই কিন্তু ভালো ক্রিকেট খেলে এসেছে। আমরা প্রত্যেকেই জানি, এসব কন্ডিশনে বাংলাদেশ শক্তিশালী দল। প্রতিপক্ষ হিসেবে আমরা তাদেরকে সম্মান করি এবং আশা করছি আমরা আমাদের ‘এ গেম’ (সেরা খেলা) খেলতে পারব।’
এবি/এইচএন