বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৫ বরণ করেছে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ। আতশবাজি, পটকা ফাটানো ও ফানুস ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রতিবছরের মতো এবারো এসব থেমে থাকেনি। মুহুর্মুহু পটকার শব্দে কেঁপে ওঠে রাজধানী। সেই সঙ্গে আতশবাজির আলোয় রঙিন ছিল আকাশ, উড়েছে ফানুস।
এর মাঝে মিরপুর ও ধানমন্ডি ল্যাবএইডের পেছনে আগুনের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। অন্যদিকে সড়কে পটকা ফাটানোর কারণে দগ্ধ হয়ে দুই শিশু জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট চিকিৎসা নিতে আসে।
অবশ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বছরের শেষ দিন ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’ ও খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন ঘিরে রাজধানীজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় পুলিশ-র্যাব মোতায়েন ছিল। সড়কে বাড়ানো হয় টহল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হাতিরঝিল এবং রাত ৮টার গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় বহিরাগতদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিছু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি এবার মাঠে ছিল পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া রাজধানীর বাসা, বাসাবাড়ির ছাদ ও সব ভবন, উন্মুক্ত স্থান, পার্কে আতশবাজি, পটকা ফাটানো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিটও দায়ের করা হয়েছে।
উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিভিন্ন ভবনের ছাদে আনন্দ-উদযাপন করে মানুষ। বেশির ভাগ বহুতল ভবনের ছাদেই দেখা গেছে সংগীতানুষ্ঠানসহ নানারকম আয়োজন। রাত ১২টার আগেই শুরু হয় পটকা ফাটানো। সেই সঙ্গে ছিল ফানুস। ঘণ্টাখানেক ধরে চলে আলোর ঝলকানি। পাঁচতারকাসহ বিভিন্ন আবাসিক হোটেলেও ছিল থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে পার্টি আয়োজন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থলে ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীরা তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন। কিন্তু এবার প্রাণিকুলের কথা বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়সড় আয়োজন হয়নি থার্টিফার্স্ট রাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে সন্ধ্যা থেকে আইডি কার্ড ছাড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। যানবাহন চলাচলও বন্ধ ছিল সন্ধ্যা থেকে। ফলে কিছুটা শান্তই ছিল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
এদিকে সাধারণ মানুষ থার্টিফার্স্ট নাইটে অতিরিক্ত শব্দের কারণে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা এতে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ‘থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে গত এক সপ্তাহে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৭২ কেজি আতশবাজি, পটকা, ক্লাস্টার বোমা, রকেট বোমা জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পাঁচটি মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আগামী বছর নির্দিষ্ট স্থানে থার্টিফার্স্ট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এ বছর ঢাকা মহানগরীর একটি নির্দিষ্ট স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজন করার চিন্তা করেছিলাম; কিন্তু পারিনি।
অন্যদিকে মিরপুরে ডাস্টবিনের ময়লায় ও ধানমন্ডিতে একটি দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছানোর আগেই আগুন নিভে যায়। অন্যদিকে ধানমন্ডিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক।
তিনি বলেন, রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে আমাদের কাছে সংবাদ আসে মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় একটি ডাস্টবিনের ময়লায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওয়ানা হলে খবর আসে আগুন নিভে যায়। অন্যদিকে রাত ১২টা ৫৩ মিনিটে আমাদের কাছে সংবাদ আসে ধানমন্ডি ল্যাবএইডের পেছনে একটি দোকানে আগুন লেগেছে।
দুটি আগুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে আতশবাজি ফোটানোর কারণে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) ডা. শাওন বিন রহমান জানান, ইংরেজি নতুন বছর বরণে পটকা ফাটানোর কারণে দুই শিশু দগ্ধ হয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে একজনের নাম ফারহান (৮)। তার শরীরের ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরেক শিশুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের বিস্তারিত ঘটনা জানা যায়নি। তাদের পরিবার বলেছে, নতুন বছর বরণ করতে রাস্তাঘাটে পটকা ফাটানোর কারণে তারা দগ্ধ হয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ