ঝিনাইদহ শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। দখল-দূষণ আর ভরাটের কারণে এখন মৃতপ্রায় নদীটি। কিন্তু এক সময় এ নদী থেকে পাওয়া যেত ঝিনুক। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে ঝিনুক কুড়াতে দলে দলে লোক আসতেন। ঝিনুক থেকে চুন ও বোতাম তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখানে ঝিনুক কুড়াতে একদল শ্রমিক রেখেছিলেন।
জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ঝিনুক ও মুক্তা আহরণ ও ক্যাসেল ব্রিজের পূর্বপাশে এবং পুরোনো কোর্ট-ভবনের উত্তর দিকে বর্তমান সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডাকবাংলো-ঘেঁষা ‘দোহা’ এখনো বর্তমান। ঝিনুক-প্রাপ্তির স্থানটিকে ‘ঝিনুকদহ’ বলা হতো। কেউ কেউ বলেন, ‘ঝিনুক’ ও ‘দহ’ (বড় জলাশয়) মিলিয়ে হয় ‘ঝিনুকদহ’ বা ঝিনেইদহ যা রূপান্তরিত হয়ে আজকের ‘ঝিনাইদহ’ হয়েছে।
নবগঙ্গা নদীর কূলে দাঁড়িয়ে আছে শত বছরের পুরাতন দেবদারু গাছ। নদীর তীরবর্তী এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নবগঙ্গা ইকোপার্ক।
যান্ত্রিকতার শহর ছেড়ে প্রতিদিন এখানে একটু নির্জনতা আর প্রশান্তি খুঁজতে আসে সাধারণ মানুষ। ছায়াশীতল পরিবেশে অনেকেই বিশ্রাম নেয় ইকো পার্কে। কিন্তু ঘুরতে আসা বেশিরভাগ মানুষই জানেন না, এই দেবদারু গাছের ইতিহাস।
১৮৮৫ সালে ১ জুলাই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঝিনাইদহের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেকক্টর হয়ে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক পদে যোগদান করেন। তখন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর বাংলো ছিল নবগঙ্গা নদীর তীরে; যা বর্তমানে সড়ক ও জনপদ বিভাগের বাংলোর সামনে। আর খরস্রোতা নবগঙ্গা নদীর পাড়ে এই দেবদারু গাছগুলো রোপন করেছিলেন স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র ।
সে সময় যে ভবনে তিনি দাপ্তরিক কাজগুলো করতেন সে ভবনটি এখনো রয়েছে, তবে আজ তা অনেকটাই জরাজীর্ণ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে এখনই যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
প্রখ্যাত এই সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছিল ১৮৩৮ সালে ২৬ জুন কলকাতার উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি গ্রামে।
এই সাহিত্য সম্রাটের রয়েছে অসংখ্য উপন্যাস তার মধ্যে অন্যতম হলো বিষবৃক্ষ, দূর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, আনন্দমঠ, দেবীচৌধুরানী, মৃণালিনী ইত্যাদি ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে লাগানো ৩০টি দেবদারু গাছ এখনো জীবিত রয়েছে; যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন ঝিনাইদহ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
আমারবাঙলা/এমআরইউ