নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আশা করি, একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ সব প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করছে। তারপর শুরু হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার জন্য ও আমাদের দলীয় কর্মীদের আহ্বান জানাচ্ছি।
আগামী ২০ ডিসেম্বর নেত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল ও শাহ পরানের মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে সিলেটে নির্বাচনের প্রথম জনসভা করবেন। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আগামী ২৭ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৭ টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আমরা জাতীয় পার্টির জন্য ২৬ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শরিক দলের প্রার্থীরা ৬ টি আসনে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবেন। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের ২৬৩ জন প্রার্থী। এতে ১৪ দলসহ নৌকার প্রতীকে থাকছেন ২৭০ জন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের জনগণ ভোট প্রদানের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এ পর্যন্ত ১৮৮৬ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। স্বতন্ত্র আছে ৩৫৭ জন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা তো বিএনপিকে নির্বাচনে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারা আসেনি। নির্বাচনে আসলে একটা সম্ভাবনা নিয়ে থাকতে পারতেন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসেনি। সেহেতু জোট করার প্রয়োজনীয়তা নেই। জাতীয় পার্টির সাথে আমাদের সমন্বয় হয়েছে। এটা আমাদের নির্বাচনী কৌশল। আমরা কৌশলটা এভাবেই ঠিক করেছি। তবে বিএনপি নির্বাচনে থাকলে নির্বাচনী কৌশল ভিন্ন হতো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা নজরুল সাহেব বলেছেন, সোমবারের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে কারা এমপি হচ্ছেন।
বিএনপির আমলেই এ ধরনের ভাগবাটোয়ারা করে নির্বাচন সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ, নূর, হুদা ছাড়া প্রার্থীই পাননি। উনি এখন জ্যোতিষী, গণকের ভূমিকা নিচ্ছেন। এতোই যদি ভবিষ্যৎ পড়তে পারেন, তাহলে জানান তারেক রহমান কবে দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢালাওভাবে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গাজীপুরে রেল লাইন কাটার নাশকতার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন কাউন্সিলর। গ্রেফতার হওয়ার ৭ জনই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী।
সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছেন ৪০ বুদ্ধিজীবী- এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আসলে তারা বিএনপির রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত।
তাদের বিবৃতি দেওয়ার আগে উচিত ছিল বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো। যখন তাদের বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল, তখন তারা দেয়নি। তাদের উচিত ছিল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বলে তিরস্কার করা।
আমি ৪০ জন নাগরিককে বলব, আপনারা কেন জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেননি। হরতাল-অবরোধ কি তারা সাপোর্ট করেন? যে বুদ্ধিজীবীরা আজ জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ সাপোর্ট করছেন তারা আসলে বিএনপির দালাল। ২৭ টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তারপরও তারা বলছেন একতরফা নির্বাচন।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা দেশের জনগণকে নিয়ে ভাবেন না। তারা কায়েম করতে চায় বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ, যারা বাংলাদেশের জন্মের চেতনাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি।
জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতার বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে তারা সাপোর্ট চেয়েছে। আরও বড় সংখ্যায় আসন চেয়েছিল। আমরা ২৬ টি আসনে সমঝোতা করতে পেরেছি। সেজন্য আমরা নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করেছি। বাকি আসনগুলোতে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তারা প্রতিযোগিতা করবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আসন সমঝোতা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনেও এমন সমঝোতা হয়েছিল। তবে এবার আমরা খুব কমই সহযোগিতা করতে পেরেছি।
জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬ টি আসনে নৌকার প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ২৬ টি আসনে নৌকা প্রত্যাহার করেছি। তারা তাদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। তারা নৌকা চায়নি।
নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি নেতাদের মুক্তি- কৃষিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা তার ব্যক্তিগত। আওয়ামী লীগ কোনো দেউলিয়া দল নয়।
আওয়ামী লীগ দলীয় নিয়মনীতি ভঙ্গ করে এ ধরনের উদ্ভট প্রস্তাব বিএনপিকে দেবে, এটা সঠিক নয়। এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমাদের সরকারও দেয়নি। আর যারা পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, হাসপাতালে হামলা করেছে, তাদের তো আইনের আওতায় আসতেই হবে।
বিএনপি নেতা মঈন খানের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখানে ভাগাভাগির কোনো বিষয় নেই। নির্বাচনের জোট আগেও হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আমরা একটা কৌশল নিয়েছি। এজন্য এ ব্যবস্থা।
সবার সাথে যুদ্ধ লাগিয়ে, নির্বাচন প্রতিহত করার ভূমিকা নেবে- এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা কৌশল নিয়েছি। কৌশলটা এখন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অনুকূলে।
বিএনপি নেতা মঈন খানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের এসব বক্তব্য জনগণ বিশ্বাস করে না। যারা ভোট দেবে, তারাও বিশ্বাস করে না। ৭ জানুয়ারি সারা বাংলাদেশের দিকে একটু নজর রাখবেন, ভোটকেন্দ্রের দিকে তাকাবেন, তাহলে বুঝতে পারবেন এ দেশের মানুষ কতটা নির্বাচনের পক্ষে।
এবি/এইচএন