প্রাণিজগতে স্ত্রী প্রজাতিই গর্ভধারণ করে এবং সন্তান জন্ম দেয় বলে আমরা জানি। ব্যতিক্রমও আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি পৃথিবীতে এমনও প্রাণী আছে, যারা পুরুষ হয়েও সন্তানের জন্ম দেয়! এই প্রাণীর পুরুষ সন্তান প্রসবের দায়িত্ব পালন করে। এই সামুদ্রিক প্রাণীগুলো এমন এক অভিনব উপায়ে সন্তান জন্ম দেয়; যা প্রাণিজগতে বিরল।
প্রকৃতির এই বিস্ময়কর প্রাণী সিংনাথিডি পরিবারের এক বিশেষ মাছ; যার মধ্যে রয়েছে সি-হর্স, পাইপ ফিশ এবং সি-ড্রাগন। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? কেমন করেই বা তারা গর্ভধারণ করে আর সন্তান জন্ম দেয়?
এখানে মূলত স্ত্রী প্রাণীটি ডিমগুলোকে পুরুষ প্রাণীর দেহে স্থানান্তর করে। পুরুষ সি-হর্সের পেটে থাকে বিশেষ একটি থলি, যেখানে ডিমগুলো সুরক্ষিত থাকে এবং সেখানেই ডিম থেকে ছানা জন্মায়।
ডিম নিষিক্ত হওয়ার পর পুরুষ সি-হর্স এই ডিমগুলোতে পুষ্টি সরবরাহ করে প্রয়োজনীয় যত্ন নেয়। ডিম থেকে ছানা বের হওয়া পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় দুই থেকে চার সপ্তাহ। এই সময়কালে পুরুষ সি-হর্স তার সন্তানদের সুরক্ষিত রাখতে নিজের মতো করে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জন্মের সময় এটি একসঙ্গে প্রায় ৫০ থেকে এক হাজার ছানার জন্ম দেয়। তবে ছানা জন্মের পরপরই সমুদ্রে নানা শিকারির মধ্যে বেঁচে থাকতে হয়। অনেক সময় এক হাজার ছানার মধ্যে একটি মাত্র ছানাই বড় হয়।
পাইপ ফিশের প্রজনন প্রক্রিয়াটিও অনেকটা একই রকম। স্ত্রী পাইপ ফিশ ডিমগুলো পুরুষের পেটে থাকা একটি থলিতে পাড়ে। এখানেও ডিমগুলো নিষিক্ত হয় এবং পুরুষ পাইপ ফিশ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এগুলোতে যত্ন নিয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। একসঙ্গে প্রায় পাঁচ থেকে ৪০টি ছানা জন্মাতে পারে এই প্রক্রিয়ায়।
তবে পাইপ ফিশের আরেকটি মজার বিষয় হলো, তারা ছানার যত্নের ক্ষেত্রে স্ত্রী সঙ্গীকে গুরুত্ব দেয়। যদি স্ত্রী পাইপ ফিশটি বড় ও আকর্ষণীয় হয়, তবে পুরুষটি তার ছানাদের বেশি যত্ন নেয়। অন্যদিকে, দুর্বল বা অসুন্দর স্ত্রী পাইপ ফিশের ডিম থেকে জন্ম নেওয়া ছানাদের জন্য কম পুষ্টি সরবরাহ করে।
প্রকৃতির এই বিস্ময়কর বৈচিত্র্য শেখায়, স্নেহ, যত্ন আর দায়িত্ব কেবল গঠনগত ভিন্নতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ যেন প্রকৃতির এক চমৎকার বার্তা, যে কখনো কখনো প্রচলিত নিয়মও ভেঙে দিয়ে জীবনের এক অন্যরকম মায়ার গল্প তৈরি হয়।
আমারবাঙলা/এমআরইউ