সংগৃহীত ছবি
জাতীয়

পদন্নোতি না হলে আমরণ অনশন করবেন উপসচিবরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্রততম সময়ের মধ্যে পদোন্নতির ঘোষণা না আসলে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাবেন বঞ্চিত ১৯৫ উপসচিব। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপির অনুলিপি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল সোমবার তারা ওই স্মারকলিপি দেন। প্রদত্ত ওই স্মারকলিপিতে অন্যান্য ক্যাডারের ১৩ম ব্যাচ থেকে ২২তম ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য ও বঞ্চিত কর্মকর্তারা উপসচিব হতে ভূতাপেক্ষ জ্যেষ্ঠতা প্রদানপূর্বক নিয়মিত ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির দাবি জানান তারা। যোগ্যতার ভিত্তিতে সঠিক পদায়নের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিতে উপসচিবরা উল্লেখ করে তারা উল্লেখ করেন- বিভিন্ন ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সরকারের উপসচিব হিসেবে নিযুক্ত বা পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থায় নিযুক্ত থেকে সততা, সুনাম ও নিষ্ঠার সাথে জনকল্যাণ ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু পদোন্নতির সকল যোগ্যতা ও শর্ত পরিপালন করা সত্তে¡ও যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি প্রদান না করে ন্যায়সংগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের দেওয়া রায় অনুযায়ী সরকারের উপসচিবগণের পূর্বের কোন ক্যাডার পরিচিতি থাকবে না এবং সকল উপসচিব সম-অধিকার ও সমমর্যাদা সম্পন্ন হবেন। তিনি তখন সচিবালয়ের উচ্চতর উপসচিব পদে অধিষ্ঠা নিয়ে অন্য সকল উপসচিবের সাথে একশ্রেণিভুক্ত হয়ে সম-অধিকারসহ পরবর্তী উচ্চতর যুগ্মসচিব পদে বা পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন। পদোন্নতির ভিত্তি হবে মেধা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস সিনিওরিটি রুলস ১৯৮৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক সুপারিশকৃত একটি ব্যাচের সম্মিলিত তালিকাই হলো জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি। স্মারকলিপিতে উপসচিবরা আরও উল্লেখ করেন- বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২২তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তারা ইতোপূর্বে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন। অন্যান্য ক্যাডারের ১৩ম ব্যাচ থেকে ২২তম ব্যাচের ১৯৫ জন কর্মকর্তা ‘সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিবপদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’ অনুযায়ী যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির সকল শর্ত পুরণ করা সত্বেও এবং ১৩৭ জন কর্মকর্তা বিগত সরকারের আমলে একাধিকবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছে। এরই মধ্যে ন্যূনতম ৬৭ জন কর্মকর্তা তিন বার (২৯-১০-২০২১, ০২-১১-২০২২, এবং ০৪-০৯-২০২৩) পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি আয়কর ও শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন উপসচিব তাদের ক্যাডার থেকে আগত জুনিয়র কর্মকর্তাদের দ্বারা সুপারসিডেড হয়েছেন।

বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে একপেশে ও সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যে সকল সরকারি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করার মাধ্যমে জনপ্রশাসনে নানাবিধ বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে তা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন এই বাংলাদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গতকালের যুগ্মসচিব প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচ পর্যন্ত বঞ্চিত উপসচিবগণের পদোন্নতি নিশ্চিত করলেও অন্যান্য ক্যাডারের ১৩তম থেকে ২২তম ব্যাচের পদোন্নতির জন্য যোগ্য ও বঞ্চিত ১৯৫ জন উপসচিবের ন্যায্য দাবী আমলে নেননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রশাসনের ২২তম পর্যন্ত ব্যাচের কর্মকর্তা বিসিএস ব্যাচ ২৪ এবং ২৫ তম তে আসলেও অন্যান্য ক্যাডারের যে সকল কর্মকর্তা ২৪ তম ও ২৫ তম এর সাথে এসেছেন তাদেরকে বিস্ময়করভাবে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেয়া হয়নি। অথচ একই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রশাসন ক্যাডারের যথাক্রমে ২৪ এবং ২৫ এর সাথে আগত ৩২ ও ০৭ জনকে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে যা অন্যান্য কাডার থেকে আগত উপসচিবদের প্রতি চলমান বৈষম্যের সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ইতোপূর্বে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, একই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণত বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তারা পদোন্নতি বিধিমালার শর্ত পূরণসাপেক্ষে পৃথক পৃথকভাবে পরবর্তী উচ্চতর ধাপে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের সাথে অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিব হিসেবে যোগদানকৃত ১০৬ জন কর্মকর্তার মধ্যে ইতোমধ্যে ১৮ জন কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারের ১৭তম (৩ জন), ১৮তম (২জন), ২১তম (৫ জন) এবং ২২তম (৮জন) ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন।

এমনকি, প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ব্যাচের সাথে পদোন্নতি প্রাপ্ত অন্যান্য ক্যাডারের ৬৯ জন উপসচিবের মধ্যে ২ জন কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন। একইভাবে, বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের সাথে উপসচিব হিসেবে যোগদান করে, ১৭তম ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব, ১৫তম ব্যাচের সাথে অতিরিক্ত সচিব এবং১৯/০৫/২০২৪ খ্রি. তারিখে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। একই রীতি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও চলমান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা ২৪তম ব্যাচের সাথে উপসচিব, ২০তম ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব এবং ১৮তম ব্যাচের সাথে অতিরিক্ত সচিব হিসিবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন। অর্থাৎ সিনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তাগন জুনিয়র ব্যাচের সাথে পদোন্নতি পেলেও পরবর্তীতে পদোন্নতি বিধিমালার শর্তপূরণ সাপেক্ষে উক্ত জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তাগণের পূর্বেই উচ্চতর ধাপে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন, এটাই জনপ্রশাসনের দীর্ঘদিনের রীতি।

অতএব, বৈষম্যের শিকার অন্যান্য ক্যাডারের যে সকল উপসচিব ইতোমধ্যে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির সকল শর্ত পূরণ করেছেন এবং এক বা একাধিকবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, গত ১৮/০৮/২০২৪ তারিখের পদোন্নতি আদেশ বিবেচনায় না নিয়ে তাঁদের সাথে পুনরায় বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে তা রীতিমত অবিচারের শামিল, পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা বিষয়ক সকল আইন ও বিধিমালার লংঘন এবং বৈষম্যহীন ও মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ার সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক। এভাবে ক্রমাগতভাবে প্রাপ্য পদোন্নতি হতেবঞ্চিতকরণ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস সিনিওরিটি রুলস, ১৯৮৩ লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠতাহরণপূর্বক জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য করার কারণে মানসিক, শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পতিত হচ্ছে বঞ্চিত কর্মকর্তারা। এর মাধ্যমে ক্যাডার/শ্রেণি বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিবও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়, বিসিএস সিনিওরিটি রুলস, ১৯৮৩, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং ন্যাচারাল জাস্টিস অনুসরণপূর্বক অতি দ্রুত স্ব-স্ব নিয়মিত ব্যাচের সাথে জ্যেষ্ঠতা প্রদানপূর্বক যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করার জন্য আজকে পুনরায় প্রধান উপদেষ্ঠা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন পদবঞ্চিতরা।

আমার বাংলা/এমআর

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ট্রয় নগরী ধ্বংসে ‘ইরিস’ নাকি ‘হেলেন’, কে দায়ী?

স্রষ্টা পৃথিবীর বংশগতি রক্ষার জন্য নারী ও পুরুষ প্...

জয়ে ফিরল আর্জেন্টিনা

শেষ মুহূর্তে লাউতারো মার্টিনেজের দুর্দান্ত এক গোলে...

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে শিল্পকলায় ভাস্কর্য কর্মশালা: পরিচালনায় ভাস্কর পাপিয়া

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের তত্ত্...

এ আর রহমানের ২৯ বছরের সংসার ভাঙছে

দীর্ঘ ২৯ বছরের সংসার ভাঙছে খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ, অস...

ঝিনাইদহে সুদের টাকা না পেয়ে বাড়ি দখলের অভিযোগ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সুদের টাকা না পেয়ে এক দিনমজুরে...

বিচারের পরই নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে আওয়ামী লীগকে

‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কর...

কাল ঢাকা আসছেন বাইডেন প্রশাসনের বিশেষ প্রতিনিধিদল

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধি...

নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের নির্দেশ আইসিসির

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশ...

নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের নাম ছিল বিএনপির তালিকায়

অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন প্রধান নির্ব...

আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার

শুটিং সেটে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ তুলেছেন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা