বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের প্রসূতিকালীন ছুটি ১৬ সপ্তাহ। সরকারের পক্ষ থেকে এই ছুটি ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) বৈঠকে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) নারী শ্রমিকদের প্রসূতিকালীন ছুটি ১২০ দিন করার বিষয়ে সব পক্ষ একমত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকার বিজয়নগরে শ্রম ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানসহ টিসিসির মালিক, শ্রমিক ও সরকারপক্ষের মোট ৬০ সদস্যের বেশির ভাগই উপস্থিত ছিলেন। নতুন ধারা সংযোজন এবং বিদ্যমান ধারা সংশোধনসহ ১০১টি ধারা নিয়ে কাজ করছে টিসিসি। শ্রম আইনের কিছু ধারা বিলুপ্তও করা হচ্ছে। আগামী মার্চের মধ্যে আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারির কথা রয়েছে।
বৈঠকের আগে শ্রমসচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে তিন পক্ষের সম্মতিতে ৭৯টি বিষয়ে একমত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ২০ শতাংশের বদলে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সায়, অংশগ্রহণ তহবিলে জমাকৃত অর্থ সমান অনুপাতে সব সুবিধাভোগীর মধ্যে বণ্টন, জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের বিপদ থাকলে সেসব কাজ করাতে বাধ্য না করা, নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানি না করা ইত্যাদি।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নারী শ্রমিকের সন্তান প্রসবের আট সপ্তাহের মধ্যে কোনো কাজ করাতে পারেন না কারখানার মালিকেরা। বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে আট সপ্তাহের বদলে তা হবে ৬০ দিন। আবার প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার মজুরি এত দিন নগদে দেওয়ার বিধান ছিল। এখন বলা হয়েছে, নগদে তো পরিশোধ করা যাবেই, ব্যাংক বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতেও এই মজুরি পরিশোধ করা যাবে।
কর্মক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রের বাইরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কোনো দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিক শারীরিক বা মানসিক আঘাত পেলে বা প্রাণহানি ঘটলে তা কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকালে সংঘটিত দুর্ঘটনা বলে গণ্য হবে—এমন ধারা সংযোজনের প্রস্তাব মেনে নেয়নি মালিকপক্ষ।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খসড়ার সব জায়গায় নারীদের মহিলা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির প্রধান তাসলিমা আক্তার এ বিষয়ে আপত্তি জানালে শ্রম উপদেষ্টা তা আমলে নেন। নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি সুনির্দিষ্ট নয় এবং অসদাচরণের নিষ্পত্তি কীভাবে হবে, তাও বলা নেই বলে বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন তাসলিমা আক্তার। শ্রম উপদেষ্টা এগুলো লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দেন তাকে। বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা মারাত্মক ধরনের অপরাধ।
শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সব পক্ষ থেকে পরামর্শ এসেছে। টিসিসির কাজ হচ্ছে পরামর্শগুলো শোনা, যেগুলো একসঙ্গে করার পর উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ