আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ককেশাস অঞ্চলের দেশ আজারবাইজান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে সামরিক অভিযানে অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বোসামরিক নাগরিকও রয়েছেন। এ সময় আরও ৪০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী আর্মেনিয়ান মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা গেঘাম স্টেপানিয়ান জানিয়েছেন, আজারবাইজানের সামরিক অভিযানে সেখানে অন্তত ২০০ জন নিহতসহ কয়েকশ মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন ঐ অঞ্চলে আজারবাইজানের হামলায় অন্তত ২০০ জন নিহত। এছাড়া আরও ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। এদের মধ্যে ৫ জন শিশু রয়েছে বলেও দাবি করেন স্টেপানিয়ান।
তবে আজারবাইজান সামরিক অভিযানের সময় তাদের সেনাদের হতাহতের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেন, নাগর্নো-কারাবাখে সামরিক অভিযান চালানোর সময় তাদের কিছু সৈন্য নিহত ও অন্য আরও কিছু সেনা আহত হয়েছেন।
এদিকে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীরা আত্মসমর্পণ এবং অস্ত্র বিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে। বিতর্কিত এ ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সামরিক অভিযান শুরু করার ২৪ ঘণ্টা পর বুধবার আর্মেনীয় ও আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী এ চুক্তিতে রাজি হয়।
চুক্তির বিষয়টি উভয় দেশই নিশ্চিত করেছে। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১ টা থেকে তা কার্যকর হয়। চুক্তির শর্ত অনুসারে, নাগর্নো-কারাবাখে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীকে নিরস্ত্র এবং ভেঙে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আজারবাইজানের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত জাতিগত আর্মেনীয় ছিটমহল নাগর্নো-কারাবাখ ঘিরে গত কয়েক মাস ধরে ২ দেশের মাঝে উত্তেজনা চলছে। সম্প্রতি বিতর্কিত ঐ ভূখণ্ডে মাইন বিস্ফোরণ ও অন্য একটি ঘটনায় আজারবাইজানের ১১ পুলিশ সদস্যসহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ঐ অঞ্চলের আজারবাইজানের সামরিক বাহিনীর অভিযান পরিচালনার খবর পাওয়া যায়।
বিতর্কিত এ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
ইতিমধ্যে নাগর্নো-কারাবাখ ঘিরে ২ প্রতিবেশী আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া কমপক্ষে দুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবার যুদ্ধে জড়ায় দেশ ২ টি।
২০২০ সালে সাবেক সোভিয়েত এ ২ রাষ্ট্র বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আবারও প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ২ দেশের সৈন্যদের হামলা ও পাল্টা হামলায় সেই যুদ্ধে উভয় পক্ষের প্রায় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
ঐ যুদ্ধের পর আর্মেনিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া নাগর্নো-কারাবাখে কয়েক হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার করে নেয় মস্কো।
এবি/এইচএন