ক্রীড়া ডেস্ক: চট্টগ্রামের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। হালকা বাতাসও বইছে। যে কোনো সময় জমজমিয়ে বৃষ্টি নামার আভাস। এর মধ্যেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যেন শুরু হয়েছিল উইকেট-বৃষ্টি। মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং অর্ডার। স্কোরবোর্ডে ৪১ রান যোগ করতেই ৭ উইকেট হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় পড়ার শঙ্কায় ছিল সফরকারীরা।
কিন্তু ৮ম উইকেটে মাসাকাদজা–মাদান্দের ৬৫ বলে ৭৫ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে ভর করে শুধু লজ্জাই এড়াল না, সেই সঙ্গে সম্মানজনক পুঁজিও দাঁড় করাল সফরকারীরা। নির্ধারিত ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানে থেমেছে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। বাংলাদেশকে জয়ের জন্য করতে হবে ১২৫ রান।
স্বাগতিক বোলারদের হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেছেন দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তাসকিন আহমেদ। এ ছাড়া দুটি উইকেট শিকার করেছেন শেখ মেহেদী।
আজ (শুক্রবার) পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে জিম্বাবুয়েকে শুরুতে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শরীফুল ইসলামের প্রথম বল সীমানা দড়ি পার করে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ে ওপেনার জয়লর্ড গাম্বির। প্রথম ওভারে দুই চারে শুরুটা খারাপ হয়নি সফরকারীদের। তবে দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদী।
প্রথম উইকেট পতনের পরও কিছুক্ষণ লড়াই করেছিল সফরকারী ব্যাটাররা। কিন্তু পঞ্চম ওভারে সাইফউদ্দিনের ব্রেকথ্রুর পরেই যেন ওলট-পালট হয়ে যায় সব। দীর্ঘ ১৮ মাস পর জাতীয় দলে ফেরা সাইফউদ্দিন আক্রমণে এসেই দলকে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। অভিষিক্ত জয়লর্ড গাম্বি ভালোই ছন্দে ছিলেন। সাইফউদ্দিনের ওভারের শেষ বলে তুলে মারতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দেন তাসকিনকে। ১৪ বলে ১৭ রানে আউট হন তরুণ এই ওপেনার।
আগের ওভারের শেষ বলে গাম্বিকে ফিরিয়েছিলেন সাইফউদ্দিন। ষষ্ঠ ওভারে শেখ মেহেদীর প্রথম দুই বলে দুই উইকেটে বিপদ আরও বাড়ে। অবশ্য প্রথমটা রান আউট। তড়িঘড়ি রান নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন বেনেট। মাহমুদউল্লাহ সেই সুযোগ দিলেন না। তার থ্রো–তে রান আউট করেন উইকেটকিপার জাকের আলী। ১৫ বলে ১৬ রানে সাজঘরে ফিরেছেন বেনেট।
পরের বলেই দলের বিপদ আরও বাড়ালেন অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। স্লিপে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক হয়ে ফেরেন। মেহেদীর করা ষষ্ঠ ওভারে পরপর দুই উইকেটের পর সপ্তম ওভারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।দ্রুত আউট হওয়ার প্রতিযোগিতায় যেন নেমেছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা! তবে এবার দুটি উইকেটই তুলে নিলেন পেসার তাসকিন আহমেদ। প্রথম বলেই ফিরিয়েছেন উইলিয়ামসকে। পরের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রিশাদকে ক্যাচ দেন বার্ল। দুই ব্যাটারই নিজেদের মোকাবিলা করা প্রথম বলে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেছেন।
৮ম ওভারে আক্রমণে এসে লুক জঙ্গিকে তাওহিদ হৃদয়ের ক্যাচে পরিণত করেন সাইফউদ্দিন। স্কোরবোর্ডে ৪১ রান যোগ করতেই ৭ উইকেট হারিয়ে যেন গুটিয়ে যাওয়ার প্রহর গুণছিল জিম্বাবুয়ে। এ ছাড়া উঁকি দিচ্ছিল নিজেদের সর্বনিম্ন রানের লজ্জার রেকর্ডও। টি-টোয়েন্টিতে তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ৮২ রান। অবশ্য অষ্টম উইকেট জুটিতে দারুণ প্রতিরোধ গড়লেন মাসাকাদজা–মাদান্দে জুটি। তাদের ৭৫ রানের জুটিতে শতরান পেরোয় জিম্বাবুয়ের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অষ্টম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি।
সাজঘরে ফেরার আগে ৩৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন মাদান্দে। এ ছাড়া ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ৩৮ বলে ৩৪ রান করেন মাসাকাদজা। অথচ আর কোনো ব্যাটারই এদিন ২০ রানও করতে পারেননি। চার ব্যাটার আউট হন শূন্য রানে।
এবি/এইচএন