আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশিদের পান করা প্রায় অর্ধেক পানিতেই বিপজ্জনকভাবে উচ্চমাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ক্যানসার সৃষ্টিকারী আর্সেনিকের মাত্রা বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির হলেও দেশটির মানুষ এই পানি পান করছেন।
বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা পরিচালনার জন্য সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। গবেষকরা আর্সেনিক নিঃসরণের মাত্রা বোঝার জন্য পানিতে অক্সিজেনের ঘনত্ব, পিএইচ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখেছেন। গবেষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের পান করা পানির ৪৯ শতাংশের মধ্যে ক্যানসার সৃষ্টিকারী আর্সেনিকের অনিরাপদ মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
পানিতে অতিরিক্ত মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতির কারণে মানুষের শরীরে আর্সেনিকসিস হয়। যা থেকে ফুসফুস, মূত্রাশয়, কিডনি এবং ত্বকের ক্যানসার হতে পারে।
এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য সংকটের তীব্রতাকে তুলে ধরেছে। গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি প্রায়ই প্রবল বন্যার মুখোমুখি হয়। একই সাথে জলবায়ু সংকটের ক্ষতিকর প্রভাবের সবচেয়ে ঝুঁকিতেও আছে বাংলাদেশ। দেশটিতে ইতিমধ্যে আর্সেনিকের কারণে লাখ লাখ মানুষ ত্বক, মূত্রাশয় ও ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন।
২০১৮ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমের তীব্র বৃষ্টিপাতের কারণে প্রত্যেক বছর বাংলাদেশের প্রায় ২১ শতাংশ এলাকায় বন্যা হয়। পিএলওএস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পানিতে অতিরিক্ত মাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতির সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও মৌসুমী ভারী বন্যার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সমুদ্রের নোনা পানি সুপেয় পানির সাথে মিশে যাওয়ায় পলি থেকে আর্সেনিক নির্গত হয়।
ডব্লিউএইচও’র তথ্যমতে, পানিতে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ১০ পার্টস পার বিলিয়ন (পিপিবি)। কিন্তু বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ এলাকার নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ডব্লিউএইচও নির্দেশিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বলে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন।
গবেষণার এই ফলাফল জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি সতর্কবার্তা। গবেষকরা সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান কিংবা আর্সেনিকের সংস্পর্শে এলে ক্যানসার এবং ভাস্কুলার রোগসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানির দূষণ রোধে পানি পরিশোধন প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোসহ সম্ভাব্য অন্যান্য সমাধানমূলক ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
এবি/এইচএন