আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুই ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান স্বপদে বহাল থাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকে।
রবিবার ৩০ তলা ভবনের সামনে তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, দুই ডেপুটি গভর্নরসহ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা স্বপদে থাকায় আর্থিকখাতের সংস্কার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানকে পদত্যাগ করতে হবে। শীর্ষ পদ থেকে আওয়ামী দোসরদের সরাতে হবে।
বিক্ষোভে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, তা আমাদের সামনে হয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চেষ্টা করা হলে বদলিসহ বিভিন্নভাবে হেনেস্থা করা হয়েছে। ফলে যারা সৎ ও যোগ্য কর্মী তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেননি। সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংক ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এতে সহায়তা করেছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ডেপুটি গভর্নররা।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে সংস্কার করতে চেয়েছি সেই কাঙ্ক্ষিত সংস্কার করতে পারছি না। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে যেখানে ছিল সেখানে থেকে তাদের কর্তৃত্ব অব্যাহত রেখেছে। তাই বিগত সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত দুই ডেপুটি গভর্নরকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। এ ছাড়া লুটেরাদের সহায়তাকারী কর্মকর্তাদের দ্রুত বদলি করতে হবে।
ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন বিভাগের পরিচালক মো. বায়েজিদ সরকার বলেন, গত ৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন দাবি-দাওয়া দিয়েছিল। সেখানে আগের সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সবাইকে পর্যায়ক্রমে চলে যেতে হবে বলা হয়েছিল। তবে তা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই গত ৭ আগস্টের সব দাবি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক মো. আনিস উর রহমান বলেন, পরিবর্তিত সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। এসব বোর্ড থেকে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো সংস্কার দেখতে পাইনি। কারণ এসব ব্যাংকে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা অনেকে স্বৈরাচার সরকারের দোষর ছিলেন। সেখান থেকেও তাদের অপসারণ করতে হবে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারে পতনের পর ৭ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিক্ষোভের মুখে তাৎক্ষণিক দুজন ডেপুটি গভর্নর, হেড অব বিএফআইইউ ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেন এবং বাকি দুজন ডেপুটি গভর্নর পরে পদত্যাগ করবেন মর্মে মৌখিকভাবে সম্মতি প্রদান করেন। ব্যাংককর্মীদের আন্দোলন চলাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শুধু ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারকে পরবর্তী ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে তৎকালীন ইডি-১ (বর্তমান ডেপুটি গভর্নর) মো. জাকির হোসেন আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন।
তবে নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নুরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানকে ডিজি হিসেবে বহাল রেখে দায়িত্ব বণ্টন করেন। তখন থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন কর্মকর্তারা। দুই ডিজির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ ও গভর্নর বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে আসছেন কর্মকর্তারা।
আমার বাঙলা/এনবি