যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল। এতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু এবং শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার (৮ জানুয়ারি) এক লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাবানলের মোকাবেলা করতে গিয়ে ব্যবহারযোগ্য সম্পদের ওপর চাপ পড়ছে এবং পানি সরবরাহ শেষ সীমায় গিয়ে ঠেকছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দাবানল শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় বাধাহীনভাবে ছড়িয়েছে, হারিকেনের শক্তি নিয়ে বইতে থাকা বাতাস দমকল কর্মীদের জন্য প্রবল বাধা হয়ে উঠেছে আর আগুন আরো ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে।
হারিকেনের মতো জলীয়বাষ্প বয়ে আনার পরিবর্তে এই শুষ্ক বাতাস ইতোমধ্যে শুকনো হয়ে থাকা এলাকাগুলোতে আগুন আরো ছড়িয়ে দিয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার সূর্যাস্তের পর থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক দু’টি আগুন ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দমকল বাহিনীর প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউড হিলস অংশে নতুন একটি দাবানল শুরু হয়েছে, এতে আরো মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে এবং লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে জ্বলতে থাকা দাবানলের সংখ্যা ছয়টিতে দাঁড়িয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব আগুনের কোনোটিকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, এর মধ্যে এক জোড়া দাবানল শহরটিকে সাঁড়াশির মতো ঘিরে ধরেছে।
পশ্চিম দিকে প্যাসিফিক পলিসেডস অঞ্চলের পলিসেডস ফায়ার সান্তা মোনিকা ও মালিবুর মধ্যবর্তী পাহাড়গুলোর ১৫ হাজার ৮৩২ একর এলাকা আর এক হাজার স্থাপনা গ্রাস করেছে। এই দাবানলটি মঙ্গলবার টোপাঙ্গা ক্যানিয়ন থেকে এগিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের তীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এটি ইতোমধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে অন্যতম ধ্বংসাত্মক একটি দাবানল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পূর্ব দিকে সান গ্যাব্রিয়েল পর্বতমালার পাদদেশে ইটন ফায়ার আরও ১০ হাজার ৬০০ একর, আরো এক হাজার স্থাপনা গ্রাস করেছে আর এখানে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাসকারী অ্যাকুওয়েদারের প্রাথমিক হিসাবে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আর্থিক মূল্যে তা পাঁচ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির জরুরি ব্যবস্থাপনার প্রধান কেভিন ম্যাকগোয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা এক ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করছি, তবে তা যথেষ্ট শক্তিশালীভাবে নয়।
আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বুধবার রাতে বাতাসের গতি কমে আসার কথা; কিন্তু তারপরও শুক্রবার পর্যন্ত তথাকথিত ‘রেড ফ্ল্যাগ’ পরিস্থিতি বজায় থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উষ্ণ তাপমাত্রা, অত্যন্ত কম জলীয়বাষ্প এবং জোরালে বাতাসের মিলিত পরিস্থিতি যা দাবানলের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে তাকেই ‘রেড ফ্ল্যাগ’ পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ওই দু’টি বড় দাবানলের পাশাপাশি কাউন্টিটির আরো চারটি এলাকায় আগুন জ্বলছে। এসব দাবানলের মোকাবেলা করতে গিয়ে ব্যবহারযোগ্য সম্পদের ওপর চাপ পড়ছে আর কিছু ইতোমধ্যে নিঃশেষ হয়ে গেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দমকল প্রধান অ্যান্থনি মারোনি বলেন, এই মাত্রার পৃথক চারটি দাবানল মোকাবেলার মতো যথেষ্ট দমকল কর্মী এল. এ. কাউন্টিতে নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ছয়টি অঙ্গরাজ্য থেকে দমকল কর্মীরা ক্যালিফোর্নিয়ায় জড়ো হতে শুরু করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে অতিরিক্ত আরো এক হাজার দমকল কর্মী আড়াইশ ফায়ার ইঞ্জিন নিয়ে দক্ষিণে রওনা হয়েছেন।
অভিজাত এলাকা প্যাসিফিক পলিসেডসে পানি স্বল্পতায় কিছু হাইড্রান্টে পানি ফুরিয়ে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির প্রায় ১০ বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎবিহীন হয়ে রয়েছে বলে পাওয়ারআউটেজ ডট ইউএস জানিয়েছে। কাউন্টিটির স্কুলগুলো বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইতোমধ্যে দাবানল সম্পর্কিত তথ্য জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে সহযোগিতা করার জন্য বাইডেনের দল স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ