উচ্যমূল্যের বাজারে ১০ টাকায় কী পাওয়া যায়? বড়জোর একটি সিঙ্গারা কিংবা এক কাপ চা। দেশের অনেক হোটেলে ১০ টাকায় এক প্লেট ভাত মেলে। ভালো হোটেলগুলোতে তাও পাওয়া যায় না। না হয় ১০ টাকায় ছোট এক বাটি ডাল মেলে।
কিন্তু ১০ টাকায় যদি ভরপেট খাওয়া যায়, তা–ও আবার দুপুরের খাবার— তা অনেকটা অবাক করার মতোই ব্যাপার। ১০ টাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দইখাওয়া আদর্শ কলেজ। সেখানে ‘টেন টাকা ফুড’ নামে একটি ক্যানটিনে মধ্যাহ্নভোজে শিক্ষার্থীদের ১০ টাকায় ভাত, ডাল, দুই রকম তরকারি এবং একটি ডিম সরবরাহ করা হচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গোতামারী ইউনিয়নে দইখাওয়া আদর্শ কলেজের অবস্থান। ১৯৯৯ সালে তিন একর দশ শতাংশ জমির উপর কলেজটি স্থাপিত হয়। এখানে শিক্ষার্থী এক হাজার ৩০০ জন।
জানা গেছে, দইখাওয়া আদর্শ কলেজের ৭০-৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। সকালে কলেজে আসার সময় অনেকেই বাড়ি থেকে খাবার আনতে পারেন না। তাই কলেজ অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ২০১৮ সালে টেন টাকা ফুড নামে এই ক্যানটিন চালু করেন। সেখানে ১০ টাকায় দুপুরে ডাল-ভাত বা খিচুড়ি খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকেরাও ওই ক্যানটিনে দুপুরের খাবার খান। কলেজ অধ্যক্ষের নিজস্ব তহবিল আর বাইরের দু-একজন বন্ধুর সহযোগিতায় চলে ক্যানটিনটি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয় এখানে।
কলেজের শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী রায় বলেন, ‘আমাদের কলেজ একটি মানসম্মত ক্যানটিন আছে। এর ফলে বাইরের কোনো খাবার খেতে হয় না। এ জন্য আমাদের অধ্যক্ষ স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে কলেজের ফটক দিয়ে প্রবেশের সময় ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট সংগ্রহ করেন বলে জানান শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বেলা একটার দিকে ওই টিকিটের মাধ্যমে ক্যানটিনে খাবার খান।
ক্যানটিনে রান্নার দায়িত্বে থাকা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের রান্না করে খাওয়াতে আমার অনেক ভালো লাগে। পাঁচ বছর ধরে রান্না করি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন বাচ্চাকে রান্না করে খাওয়াই।’
কলেজের অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘কলেজটি সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় অনেক দূর থেকে শিক্ষার্থীরা সকালে না খেয়ে সাইকেল চালিয়ে কলেজে আসে। সারা দিন কলেজে থেকে অনেকেই অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেই দিকটা চিন্তা করে আমি ২০১৮ সালে এই ১০ টাকার ক্যানটিনটি চালু করেছি। তবে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় ১০ টাকায় তাদের একবেলা খাওয়ানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। যদি বিত্তবানেরা এগিয়ে আসতেন, তা হলে খাবারে শিক্ষার্থীদের আমিষসহ পুষ্টির জোগান দেওয়া যেত।’
আমারবাঙলা/এমআরইউ