তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতিদিন ৪৪২ জনের বেশি মানুষ মারা যায়। যা বছরে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)’ এখনই ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আলোকে সংশোধন করা একান্ত প্রয়োজন। এই আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী গুলো পাশ হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে এবং বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বৈশ্বিক মানদন্ডে উপনীত হবে।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা,তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা,তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা,ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি,উৎপাদন,ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে কিশোর তরুণদের রক্ষা করা।তামাক পণ্যের সব প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
তামাক ব্যবহারের ফলে ক্যানসার, হৃদরোগ ও ফুসফুসজনিত রোগসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় যা স্বাস্থ্য খাতে বিশাল ব্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতার ক্ষতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রায় ৩০,৫৭০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আমাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো দ্রুত পাস হলে একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, তরুণ সমাজকে আসক্তির হাত থেকে রক্ষা এবং তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক কৌশল বন্ধ করা সম্ভব হবে তেমনি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হবে।
জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যেখানে এই সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রন আইন দ্রুত পাস করা জরুরী সেখানে তামাক কোম্পানিগুলোর নানান রকম মিথ্যাচার এটিকে বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে বলে তামাক কোম্পানি প্রচারণা চালাচ্ছে, যা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক থেকে রাজস্ব ছিল দুই হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬ এ রাজস্ব আদায় হয় তিন হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যখন আইনটি সংশোধন করা হয়, সেই বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী গুলো দ্রুত পাস করা করা হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, তরুণ সমাজকে আসক্তির হাত থেকে রক্ষা এবং তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক কৌশল বন্ধ করা সম্ভব হবে।
লেখক : ইয়ুথ এডভোকেট, নারী মৈত্রী