নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই দিনের সফরে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ এবং ডেভেলপমেন্ট অফিসের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ফিলিপ বার্টন।
মূলত ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুদেশের পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতেই তার এ সফর।
ব্রিটিশ পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারির ঢাকায় পৌঁছানোর তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি আজ (সোমবার) সকালে ঢাকায় এসেছেন।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ কৌশলগত পঞ্চম সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার যে অঙ্গীকার রয়েছে। সেই লক্ষ্যে এই কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, এবারের সংলাপে নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন ও ব্রিটিশ আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ বার্টন।
এই সংলাপে গুরুত্ব পাবে বন্দি বিনিময় ও পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, উন্নয়ন সহায়তা, সুশাসন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট, শান্তিরক্ষা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপটি হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং মানবাধিকার নিয়েও কথা বলবে যুক্তরাজ্য।
প্রায় দুই বছর পর ঢাকা-লন্ডন কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে চতুর্থ অংশীদারত্ব সংলাপে অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সংলাপে এক দেশে বসে অন্য দেশের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সম্মত হয়েছিল। পাশাপাশি বন্দি বিনিময় ও পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও একমত ঢাকা-লন্ডন।
জানা যায়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলায় দণ্ডিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় দেড় দশক ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ব্রিটিশ সরকারকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছিল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আসামি চৌধুরী মঈনুদ্দীন পলাতক থাকায় তার দণ্ড কার্যকর করা যায়নি। তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে বাংলাদেশের ধারণা।
এছাড়া, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিছু নাগরিক সেখানে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বন্দি বিনিময় ও পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি সাক্ষর হলে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী এবং দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে জড়িত ব্যক্তিদের দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে।
এদিকে, রোববার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশন জানায়, কৌশলগত সংলাপে যোগ দিতে পররাষ্ট্র সচিব পদ মর্যাদার এই ব্রিটিশ কর্মকর্তা ঢাকায় আসছেন।
দুদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে এ সংলাপে দ্বিপক্ষীয় একটি আধুনিক অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকারের প্রতিফলন হবে।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় এতে আলোচনা হবে।
এই সংলাপ যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং কপ-২৮ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সংলাপে যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিনিয়োগ প্রস্তাব তুলে ধরা হবে। এছাড়া, ঢাকা সফরে রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী ও তরুণ নেতৃবৃন্দের সাথেও সাক্ষাৎ করবেন ফিলিপ বার্টন।
এবি/এইচএন