দেশের উত্তরাঞ্চলে হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। রাজধানীতেও সন্ধ্যার পর কমতে থাকে তাপমাত্রা।
মধ্য রাত থেকে গরম কাপড় ছাড়া বাইরে চলাচল করা কঠিন। বাসার ভেতরেও গায়ে চড়াতে হয় কাঁথা-কম্বল। তাইতো ঢাকার ফুটপাতগুলোতে জমতে শুরু করেছে শীতবস্ত্র বিক্রি। ক্রেতারাও আগাম গরম পোশাক কিনে নিচ্ছেন শীতের প্রস্তুতি।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর গুলিস্তান, পুরান ঢাকা, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুরসহ অনেক এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিক্রেতারা ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়ে হুডি, মোটা গেঞ্জি, জ্যাকেট, সুয়েটার, মেয়েদের কার্ডিগান, শর্ট কোর্ট, বেলবেড জ্যাকেট, চাদর, কম্বল, কম্পোর্টার, ডেনিম শার্ট, বাচ্চাদের শীতের জামা, কানটুপি, মোজাসহ বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফুটপাতে। বুধবার বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এসব শীতের পোশাক কেনাবেচা। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাও সেসব দোকানে ভিড় করছেন শীতের পোশাক কিনতে।
বিক্রেতারা জানান, রাজধানীতে এখনো শীত পড়তে শুরু করেনি। তবে এরই মধ্যে শীতের পোশাক বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। কেউ এক মাস আগে তো কেউ এক সপ্তাহ আগে শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু করেছেন। সপ্তাহখানেক পরে শীতের অনুভূতি বাড়লে বিক্রি পুরোপুরি জমে উঠবে। তবে তখন দামও কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট এলাকায় ফুটপাতে বাচ্চাদের শীতের পোশাক বিক্রি করেন ফয়েজ। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে শীতের পোশাক তুলেছি। এর আগে ছেলেদের টি-শার্ট বিক্রি করতাম। শীতের পোশাক টুকটাক বেচা শুরু হলেও পুরোপুরি জমেনি। ঢাকায় এখনো শীত পড়েনি। শীত পড়লে তখন বিক্রি বাড়বে।
ফুটপাতের শীতবস্ত্রের দাম গত বছরের মতোই আছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। মো. গোলাম রাব্বি নামে এক বিক্রেতা বলেন, এখন পর্যন্ত শীতের পোশাকের দাম গত বছরের মতোই আছে। কারণ অনেকে গত বছর যেসব পোশাক বিক্রি হয়নি, সেগুলো এখন বিক্রি করছে। তাই দাম গত বছরের মতোই আছে। তবে শীত বাড়লে যখন বিক্রি বাড়বে, তখন নতুন পোশাক আসবে, দামও বাড়বে।
ফার্মগেটে ফুটপাতে মোটা গেঞ্জি ও হুডি বিক্রি করছেন শামীম। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই শীতের পোশাক বিক্রি শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সেটি আরো বাড়বে। এখন প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি করি। শীত বাড়লে তখন প্রতিদিন ছয় হাজার থেকে আট হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করি।
তবে ফার্মগেটে আরেক বিক্রেতা তাসকুর ইসলামের দাবি, মাসের শেষ দিক হওয়ায় এখন বিক্রি কিছুটা কম। মাসের শুরুতে শীতের পোশাক বিক্রি দ্বিগুণ হবে।
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ফুটপাতে শীতবস্ত্র বিক্রি করেন রিয়াদুল। তিনি বলেন, ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করেই সংসার চালাই। শীতের মৌসুম প্রায় চলে এসেছে, তাই শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু করেছি। গতবছরের অনেক শীতের কাপড় রয়ে গেছিল। এখন সেগুলো কম দামে বিক্রি করছি।
এই বিক্রেতা আরো বলেন, এ বছর নতুন করে যেসব কাপড় আসবে সেগুলোর দাম আগের তুলনায় একটু বেশি। এখন সব ১০০ টাকা করে বিক্রি করছি। নতুন কাপড়ের দাম আরেকটু বেশি হবে। পুরোনো কাপড় বিক্রি শেষ হয়ে গেলে নতুন কাপড় বিক্রি করবো। গতবারের তুলনায় এবার এক লটে দু'আড়াই হাজার টাকা বেশি দিয়ে কাপড় কিনতে হয়েছে।
পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুলের সামনে শিশুদের শীতের পোশাক বিক্রি করছিলেন শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার শীতের পোশাক পাইকারি হিসেবে বেশি দরে কিনতে হয়েছে। বেচাবিক্রিও মোটামুটি ভালো। শীত বাড়লে বেচাবিক্রি আরো বাড়বে।
ফুটপাত থেকে সন্তানের জন্য শীতবস্ত্র কিনতে এসেছেন রাহিমা আক্তার নামের একজন গৃহিণী। তিনি বলেন, শীত শুরুর আগেই বাচ্চাদের জন্য শীতের পোশাক নিয়ে নিচ্ছি। শীত বাড়লে আবার দাম বেড়ে যাবে। তাই আগেভাগেই কিনে ফেলছি। ৭০০ টাকার মধ্যে তিন বাচ্চার শীতের পোশাক কিনে ফেলেছি।
ফুটপাত থেকে নিজের জন্য সোয়েটার কিনতে আসা মহিউদ্দিন নামে একজন রিকশাচালক বলেন, দিনে শীত না পড়লেও রাতে রিকশা চালাতে ঠান্ডা লাগে। তাই সোয়েটার কিনতে এসেছি। কিন্তু দাম চাইছে ৩০০ টাকা। ২০০ টাকা বলছি, কিন্তু দোকানদার কোনোভাবেই দিচ্ছে না।
ফুটপাতের বিভিন্ন দোকানের শীতবস্ত্রের দাম যাচাই করে দেখা যায়, হুডি ২৫০-৫০০ টাকা, মোটা গেঞ্জি ১৫০-২৫০ টাকা, মেয়েদের কার্ডিগান ৩০০-১৫০০ টাকা, সুয়েটার ২০০-৩০০ টাকা, মোটা জ্যাকেট ৫০০-৭০০ টাকা, চাদর ২৫০-৫০০ টাকা, ডেনিম শার্ট ২০০-৩০০ টাকা, কম্বল ২০০-৫০০ টাকা, কম্পোর্টার ৩০০-৬০০ টাকা, কানটুপি ৬০-২০০ টাকা, মাঙ্কি টুপি ৬০ টাকা, জ্যাকেট ৫০০-৬০০ টাকা, শর্ট কোর্ট ৪০০-৭০০ টাকা, ছোটদের শীতের পোশাক ১০০-৩০০ টাকা, মোজা ২০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ