জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামাজিক ও আইন অনুষদের ২০২৪-২৫ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সি তৌহিদুর রহমান তকু। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এ চিত্র দেখা গেছে। পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪১৮ নম্বর রুমে তার আসন পড়েছে।
তৌহিদুর রহমান তকুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলায়। বাবা মৃত বজলুর রশিদ পেশায় ছিলেন একজন স্টেশন মাস্টার। কিশোর বয়সে নিম্ন-মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই মস্তিষ্কের জটিল রোগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। প্রায় ২৬-২৭ বছর অসুস্থ ছিলেন। একপর্যায়ে তাকে ছেড়ে চলে যান স্ত্রীও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তৌহিদুর রহমান তকু বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মস্তিষ্কের এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলাম। এর পর ২০১৭-২০১৮ সালের দিকে সুস্থ হয়ে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করি। ২০১৯ সালে জেডিসি, ২০২১ সালে দাখিল এবং ২০২৪ সালে আলিম পাস করি। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছি। সুস্থ হওয়ার পর আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আরো সুসংগঠিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই।’
প্রস্তুতি জানিয়ে তকু বলেন, ‘এ বছর আমার প্রস্তুতি তেমন ভালো নয়। ইংরেজিতে খানিকটা দুর্বল আমি। এ বছর হয়তো সুযোগ পাব না। সুযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে একজন শিক্ষক হতে চাই। আমি গরীব শিক্ষার্থীদের সাহায্য এবং তাদের স্বল্প খরচে পড়াতে চাই। দেশের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী যেন কম খরচে ভালো শিক্ষার মান পায় সেই প্রচেষ্টা থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.তাজাম্মুল হক বলেন, ‘তকু নামের যে বয়স্ক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন পরীক্ষায় তার ব্যাপারে জেনেছি। নিয়ম অনুযায়ী তিনি পরীক্ষায় বসেছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘটনাটা শুনেছি। তিনি আজ বি ইউনিটে পরীক্ষা দিচ্ছেন। কোনো অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন কিনা আমরা খতিয়ে দেখবো।’
প্রসঙ্গত, কলা ও আইন অনুষদের আজকের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিনটি শিফটে। এ দিন পরীক্ষায় ৭৮৫টি আসনের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪২ হাজার ৯৭৮ জন শিক্ষার্থী। প্রতি আসনের জন্য লড়বেন ৫৫ জন। প্রথম শিফটে সকাল ১০টা থেকে ১১টা, দ্বিতীয় শিফটে দুপুর ১টা থেকে ২টা এবং তৃতীয় শিফটে বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তিন শিফটে হবে এ পরীক্ষা।
এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে, যেখানে মোট নম্বর ১০০। এর মধ্যে ৭২ নম্বরের পরীক্ষা হবে বহুনির্বাচনী ও লিখিত প্রশ্নের ওপর। বহুনির্বাচনী পরীক্ষায় থাকবে ২৪ নম্বর, আর লিখিত অংশের জন্য বরাদ্দ ৪৮ নম্বর। এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি জিপিএর ভিত্তিতে যথাক্রমে ১২ ও ১৬ নম্বর গণনা করা হবে।
চার বছর পর এ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে। পরীক্ষায় মোট নম্বর ১০০। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষা হবে ৭২ নম্বরের। বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হবে ২৪ নম্বরের। লিখিত পরীক্ষা হবে ৪৮ নম্বরের। পরীক্ষায় এসএসসি পরীক্ষার জিপিএ-তে ১২ নম্বর। এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ-তে ১৬ নম্বর গগণা করা হবে।
আমারবাঙলা/জিজি