ক্রীড়া ডেস্ক: খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছেন রেকর্ড ৫বার। এর মধ্যে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে চারবারই শিরোপা হাতে তুলে নেয়ার রেকর্ড গড়েছিলেন ব্রাজিলের মারিও জাগালো। ৯২ বছর বয়সে এসে অবশেষে থামলো তার দুনিয়ার যাত্রা। আজ সকালেই মৃত্যু হয়েছে এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির।
তার অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিবৃতির মাধ্যমে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনেক দুঃখের সঙ্গে আমরা চারবার বিশ্বকাপজয়ী মারিও হোর্হে লোবো জাগালোর মৃত্যুর খবর জানাচ্ছি।’
তার মৃত্যুতে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) ৭দিনের শোক ঘোষণা করেছে। ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এডনাল্ডো ফার্নান্দেহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অন্যতম সেরা কিংবদন্তি মারিও হোর্হে লোবো জাগালোর মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত ব্রাজিল ফুটবল ফুটবল ও সিবিএফ। এই দুঃখের মুহূর্তে জাগালোর পরিবার ও ভক্তদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে সিবিএফ...এই চিরকালীন চ্যাম্পিয়ন এবং তার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৭দিনের শোক ঘোষণা করছে সিবিএফ।’
ব্রাজিল যে ৫ বার বিশ্বকাপ জিতেছে, তার চারটিতেই হাতের স্পর্শ লাগিয়েছেন জাগালো। ফুটবলার হিসেবে প্রথমে শিরোপা জয় করেছিলেন। এরপর কোচ হিসেবেও জিতলেন বিশ্বকাপ শিরোপা। কোচ এবং ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ জয়করা প্রথম ব্যক্তি তিনি। যে কারণে ব্রাজিলিয়ানদের কাছে তিনি দেশপ্রেম, দৃঢ়তা ও গৌরবের অপর নাম।
১৯৫৮ সুইডেন থেকে বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের সেই দলটির জীবিত একমাত্র সদস্য হিসেবে এতদিন বেঁচে ছিলেন জাগালো। ’৫৮র বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন ব্রাজিল দলের ফরোয়ার্ড।
ফুটবল-বিশ্বে ব্রাজিলের বড় শক্তি হিসেবে উঠে আসার পথে অবিস্মরণীয় ভূমিকা ছিল মারিও জাগালোর। ১৯৫৮ সালে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বকাপ জিতে ৮ বছর আগের ‘মারাকানা ট্র্যাজেডি’ মাটিচাপা দিয়েছিল ব্রাজিল।
১৯৬২ সালে চিলি বিশ্বকাপও জিতেছিলো মারিও জাগালোর ব্রাজিল। জাগালোই পৃথিবীর প্রথম ফুটবলার, যিনি ফলস নাইন হিসেবে মিডফিল্ড এবং ফরোয়ার্ডের মাঝামাঝি জায়গাটায় খেলতেন।
১৯৬৫ সালেই ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। এরপর শুরু করেন কোচিং ক্যারিয়ার। রিও ডি জেনিরোর ক্লাব বোটাফোগোর কোচ হিসেবে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন।
১৯৭০ সালে ম্যাক্সিকো বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। যে দলটিতে ছিলেন পেলে, জায়ারজিনহো, গার্সন, রবার্তো রিভেলিনো, তোস্তাওয়ের মতো কালজয়ী ফুটবলাররা। ফাইনালে ব্রাজিল ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথম তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
১৯৭৪ বিশ্বকাপেও কোচ ছিলেন জাগালো। তবে পেলেকে ছাড়া ব্রাজিল হয়েছিলো চতুর্থ। ১৯৯৪ বিশ্বকাপও জিতেছিলো ব্রাজিল। সেবার কার্লোস আলবার্তো প্যারেইরার সহকারী কোচ ছিলেন জাগালো। এবারও ফাইনালে ইতালিকে টাইব্রেকারে হারিয়েছিলো ব্রাজিল।
১৯৯৮ বিশ্বকাপেও ব্রাজিলের হেড কোচ ছিলেন মারিও জাগালো। সেবার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। ‘ইনজুরড’ রোনালদোকে ফাইনালে খেলানো নিয়ে অবশ্য কম কথা শুনতে হয়নি জাগালোকে।
২০০৬ সালেও জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলে ছিলেন জাগালো। সেবারও কার্লোস আলবার্তো প্যারেইরার সহকারী ছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তুমুল ফেবারিট ব্রাজিল কোয়ার্টারে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নেয়। জাতীয় দলের হয়ে সেবারই সর্বশেষ কোচিং করিয়েছেন তিনি।
ব্রাজিল ফুটবলে জাগালো এতটাই সম্মান এবং মর্যাদার অধিকারী ছিলেন যে, ২০১৮ এবং ২০২২ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে আগে ব্রাজিল কোচ তিতে তার সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাগালোর সতীর্থ পেলে পরপারে পাড়ি জমান। এবার ১৯৫৮ বিশ্বকাপের শেষ সদস্য হিসেবে গেলেন তিনি নিজেও।
এবি/এইচএন