সংগৃহীত
সারাদেশ

চাঁদপুরে গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া

চাঁদপুর প্রতিনিধি

চলতি শীতকালে চাঁদপুরে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু কৃষক দাম পাচ্ছেন না। অনেকের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। আর সেসব খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে। এতে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

সদর ও হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে এমনটিই দেখা গেছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, চাঁদপুর সদর উপজেলা, হাজীগঞ্জ, মতলব দক্ষিণ ও উত্তরসহ কয়েকটি উপজেলায় এবার গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। ফলে চাহিদার অতিরিক্ত কুমড়া বিক্রি করতে পারছেন না কৃষক।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার আশিকাটি, চানখার দোকান ও দেবপুরে অবিক্রিত কুমড়া এখন গোখাদ্য হিসেবে বিক্রির চেষ্টা করছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনতে পাইকাররা আসতেন। ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি করে তারা নিয়ে যেতেন মিষ্টি কুমড়া। এতে চাষীদের সব কুমড়া যেমন বিক্রি হয়ে যেত, তেমনি ভালো দাম পাওয়ায় বেশ লাভও হতো। কিন্তু এবার তেমনভাবে পাইকারদের দেখা নেই। ফলে জমিতেই পাকতে শুরু করেছে কুমড়া। এমতাবস্থায় ক্ষতি এড়াতে এসব কুমড়া স্থানীয় হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কুমড়ার কমবেশি আবাদ হলেও সদর ও হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী এলাকার পলিবিধৌত আশিকাটি, সেনগাঁও, ঘোষেরহাট, শাহমাহমুদপুর, দেবপুর, মহামায়া, বিমলের গাঁও, বাকিলা, সাদ্রা, অলিপুর, শ্রীনারায়ণপুর প্রভৃতি গ্রামে ব্যাপক আকারে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা হয়েছে।

পাশাপাশি টমেটো, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা, লাউ ও শসার আবাদও হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। সেইসঙ্গে এবার বেড়েছে ফলন। তাই চাহিদার তুলনায় যোগান বেড়ে যাওয়ায় শুরু থেকেই শাক-সবজির দাম কম পাচ্ছেন চাষীরা।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, মৌসুমি নিরাপদ শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ অঞ্চলের মাটি অপেক্ষাকৃত বেশি উর্বর। তাই শাক-সবজি চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই চাষের পরিমাণ বাড়ছে।

এ বছর শুধু হাজীগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৬১৮ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে বলে জানান দিলরুবা খানম।

তিনি বলেন, ২০২৩ সালে উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয় ২৮৬ হেক্টর জমিতে। সেই তুলনায় এ বছর কুমড়ার আবাদ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তার ওপর পাইকার, ছোট ক্রেতা ও ব্যবসায়ী না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের এসব কুমড়া বিভিন্ন বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করার পরামর্শ দিচ্ছি। এতে লাভ অল্প হলেও কুমড়াগুলো অন্তত বিক্রি হয়ে যাবে।

উপজেলার কৃষকদের মুখেও একই কথা, চলতি মৌসুমে বলাখাল, অলিপুর, সাদ্রা, শ্রীনারায়ণপুর গ্রামে ব্যাপক আকারে কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। তবে এসব কুমড়া বিক্রির শেষ সময় চললেও বাজরে তেমন চাহিদা নেই।

তাদের দাবি, প্রতি বছরের এই সময়ে খেতের প্রায় ৯৫ শতাংশ কুমড়া বিক্রি হয়ে যায়। অথচ, এবার অর্ধেকও বিক্রি করতে পারেননি অনেক কৃষক। ফলে বিপাকে পড়েছেন তারা। কোনোমতে খরচ তুলতে তাই গরুর খাদ্য হিসেবে এসব কুমড়া বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেকে।

তেমনই একজন দেবপুরের লোকমান হাওলাদার। গরুকে খাওনোর জন্য মাত্র অঅট টাকা কেজি দরে তার কাছ থেকে কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। কুমিল্লার নিমশার এলাকার এক ব্যবসায়ীও ওই দরে গোখাদ্য হিসেবে তার কাছ থেকে কুমড়া নিয়েছেন বলে জানান এই কৃষক।

দেবপুরের অনেক কৃষক আবার সড়কের পাশে বিক্রির উদ্দেশ্যে রেখে দিলেও কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না। ফলে সড়কের ধারে পচে যাচ্ছে তাদের কুমড়াগুলো।

জাফর মিজি (৬০) নামের সেখানকার এক কৃষক বলেন, ১২০ শতক জমিতে কুমড়ার চাষ করেছিলাম। ফলনও বাম্পার হয়েছিল, কিন্তু ক্রেতা নাই। এবার কুমড়ার কোনো চাহিদাই নাই, তাই ভালো ফলন হলেও আমাদের মাথায় হাত। কেমনে কিস্তি পরিশোধ করমু, চিন্তায় আছি!

একই কথা জানান সদর উপজেলার মহামায়া এলাকার মাহবুব এবং হাজীগঞ্জের চতন্তর গ্রামের নুরুল আমিন খান। হতাশার কথা জানিয়েছেন হাজীগঞ্জের বলাখাল এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন ও হা্বিবুর রহমানও।

হাজীগঞ্জের অলিপুর গ্রামের কৃষক ছিদ্দিকুর রহমান ও মানিক মুন্সী বলেন, প্রতি বছর মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করতে আমাদের চিন্তা করা লাগে না। অথচ এবার কুমড়ার বাজার দর তো নাই-ই, পাইকারও নাই। এবার ধরা খাইলাম। স্থানীয় বাজারে একটি বড় সাইজের কুমড়া ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি করছি, তারপরও ক্রেতা নেই।

জেলা শহর ও আশপাশের হাট-বাজার ঘুরে তাদের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে, একেকটি কুমড়া ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ মোবারক হোসেন জানান, এ বছর চাঁদপুর সদরে ৯০ হেক্টর, মতলব উত্তরে ১৭৫ হেক্টর, দক্ষিণে ৪০ হেক্টর, শাহরাস্তিতে ৩০ হেক্টর, কচুয়ায় ৪৮ হেক্টর, ফরিদগঞ্জে ৯৫ হেক্টর ও হাইমচরে ৩৯ হেক্টরসহ জেলায় সর্বমোট এক হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। সবখানেই বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে জেলায় এবার মোট কুমড়ার উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ৯৭১ টন।

তিনি জানান, জেলায় এবারের শীতের মৌসুমে শাক-সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে, আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২১ হাজার টন। সেখানে ছয় হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজির চাষাবাদ হয়েছে, উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৭২৮ টন। এ কারণেই দাম কম।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শুক্রবার শুরু বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

আগামীকাল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে ৫৮...

ভারতে কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে ১৫ মৃত্যু

ভারতের উত্তর প্রদেশে কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে অন্তত...

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

আজ বুধবারের (২৯ জানুয়ারি) মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস...

বইমেলা আয়োজনে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন রাজধানীর বাংলা একা...

অনুষ্ঠানে নারী সাংবাদিক প্রবেশে বাধা নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের অনুষ্ঠানে মিডিয়া কভারেজে নারী সাংবাদিক প...

কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে বডি শেমিংয়ের লিখিত অভিযোগ নারী ফুটবলারদের 

টানা দুই সাফ জয়ী বাংলাদেশ নারী দলের ফুটবলররা হেড কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে...

শাবানের চাঁদ দেখা যায়নি, ১৪ ফেব্রুয়ারি শবে বরাত

দেশের আকাশে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ১৪৪৬ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ...

গাজীপুরে শেখ রেহানা পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক

গাজীপুরে শেখ রেহানা পরিবারের টিউলিপ টেরিটরিসহ ৪ বিলাসবহুল বাংলো বাড়ির বিষয়ে অ...

পাটগ্রাম সীমান্তের কাঁটাতারে এবার ভারতীয়দের বাঁশের বেড়া

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় লাগানো কাঁটাতারে এ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা