গাজীপুরের শ্রীপুরে ইয়াকুব আলী মাষ্টার টাওয়ারের একাংশের মালিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আহত মার্কেট মালিক মোস্তফা কামালের স্ত্রী জেনি আক্তার বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭ টায় ইয়াকুব আলী মাষ্টার টাওয়ারের দোতলায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগের তিনদিন গত হলেও তদন্ত শুরু করেনি থানা পুলিশ, এমন অভিযোগ তুলছেন বাদী নিজেই। তবে থানার ওসি জানান, তদন্ত চলমান রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে আক্রমণের চিত্র স্পষ্ট থাকলেও অভিযুক্ত বারেক বলছেন, তিনি প্রতিহত করেছেন।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হামলাকারী এম বারি (বারেক) ছিলেন প্রয়াত বিএনপি নেতা শহিদুল্লাহ শহিদের ম্যানেজার। প্রয়াত ওই নেতার সাবেক স্ত্রী'র নাম সুইটি। সুইটির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে বারেকের। বর্তমানে সুইটি ও বারেক মিলে প্রয়াত ইয়াকুব আলী মাষ্টারের ৪ সন্তানের মার্কেট ও অন্যান্য সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যেহেতু সুইটি অন্যত্র বিয়ে করেছেন, তাই সুইটি ওই পরিবারের কেউ নয়। বারেক তো ছিল প্রয়াত নেতার ব্যক্তিগত ম্যানেজার। শূন্য হাতে পাবনা থেকে মাওনাতে এসে ১৫ বছরে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। পেশিশক্তির মাধ্যমে জবরদখল চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সুইটি ও তার সহযোগী বারেক। উভয়ের নামে ইতিপূর্বে গাজীপুর আদালতে মামলা করা হয়েছে। পাবনা থেকে এসে প্রয়াত পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ শহিদের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে আজ তিনি ওই পরিবারের বড় হর্তাকর্তা সেজেছেন।
মাওনা চৌরাস্তা সংলগ্ন মোহা সিএনজির পাশে বারেক নিজের নামে জমি ক্রয় করে নির্মাণ করেছেন ৬ তলা ভবন। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। মরহুম ইয়াকুব আলী মাষ্টারের বাড়ির যাকাতের কাপড় পড়া এই বারেক আজ শহিদুল্লাহ শহিদের স্ত্রী'র নির্দেশে অন্যান্য ভাইদের বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। অথচ, সুইটি ওই পরিবারের সদস্য নন। তবে তার সন্তানরা শহিদুল্লাহ'র সম্পত্তির মালিক, কিন্তু অন্যান্য ভাইদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই।
নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গত শনিবার পৌনে সাতটার দিকে প্রয়াত বিএনপি নেতা শহিদের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম আসাদ ও ছোটভাই মোস্তফা কামাল ইয়াকুব আলী মাষ্টার টাওয়ারের দোতলায় সিকদার ফ্যাশনে দোকানিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলেন, অতঃপর বারেক স্বদলবলে এসে তাদেরকে বলেন, 'কোর্টে মামলা করেছেন, তাহলে মার্কেটে এসেছেন কেন'? এমন প্রশ্নসহ বিভিন্ন আপত্তিকর কথাবার্তা বলার সময় মোস্তফা কামাল জিগ্যেস করেন, কি হয়েছে ? এরপর-ই তাৎক্ষণিক তার উপর হামলে পড়ে বারেকসহ সঙ্গীয়রা।
দোকানের ভেতর থেকে শুরু করে বাইরে গিয়েও তাকে ব্যাপক মারধোর করতে থাকে। বারেক নিজে আক্রমণ করে, ভিডিওতে সে বিষয়টি সুস্পষ্ট। তার হাতে চাবি ছিল, সে চাবির আঘাতে কপালের পাশে মারাত্মকভাবে আহত হয়। অতঃপর তাকে আহত অবস্থায় ব্যবসায়ীরা উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তাকে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। টানা দুইদিন চিকিৎসার পর সোমবারে তিনি বাড়ি ফেরেন।
সার্বিক ঘটনা প্রসঙ্গে মোস্তফা কামাল বলেন, 'এই বারেক যখন মাওনা আসে তখন পুরোপুরি শূন্য হাতেই এসেছিল। আমাদের বাড়ির যাকাতের কাপড় পড়েছে সে। বর্তমানে শহিদ ভাইয়ের সাবেক স্ত্রী'র নির্দেশে সে যেন আমাদের পরিবারের অনেক বড় হর্তাকর্তা। অথচ চরম সত্যিটা হলো, সুইটি এবং বারেক আমাদের পরিবারের কেউ নন। সুইটি এখন ড্রাইভার আমিরের স্ত্রী, বিষয়টি প্রমাণিত সত্য। তবুও বহিরাগত সুইটির নেতৃত্বে বারেক পেশিশক্তির বলে আমাদের উপর একের পর এক নির্যাতন চালাচ্ছেন।
বারেকের সাথে হামলার ঘটনায় সেদিন সহায়তা করেছে, লিটন মিয়া ও মিন্টুসহ আরও অনেকে। থানায় অভিযোগ করার পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সিসিটিভি ফুটেজে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে, তবুও আমি প্রশাসনের কোনো প্রকার সহায়তা পাচ্ছি না। আমি এ ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি'।
অভিযুক্ত বারেক মারধর করার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, আমি মোটেও মারধর করিনি, তারা আমাকে মেরে আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে, আমি শুধু প্রতিহত করেছি।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, 'ওই লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে'।
আমার বাঙলা/এনবি