আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্য প্রাচ্যের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ ৫১ দিনে গড়িয়েছে। দেড় মাসের অধিক সময়ের এই যুদ্ধে উপত্যকায় প্রায় ৪০ হাজার টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল।
রোববার গাজার সরকারের গণমাধ্যমবিষয়ক কার্যালয়ের প্রধান সালামা মারুফ এই তথ্য জানিয়েছেন।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এ সময় সালামা মারুফ বলেন, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ৪০ হাজার টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশই মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার ইচ্ছার প্রতিফলন।
সালামা মারুফ বলেন, উপত্যকার বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতাল আর সচল নেই। যে কারণে আমাদের জরুরি ভিত্তিতে বড় ধরনের একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা গত বছর সারা বিশ্বের সব সংঘাতে প্রাণ হারানো শিশুদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত ৭ অক্টোবর গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উপত্যকায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। সাত সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা হামলায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও নারী।
এই যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ১৫০ শিশু ও ৪ হাজারের বেশি নারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ গেছে ১ হাজার ২০০ জনের। নিহতদের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সৈন্য রয়েছে তিন শতাধিক।
এদিকে, মিসর এবং কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের চারদিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে খাদ্য, পানি এবং ওষুধসহ রোববার দুই শতাধিক ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, গাজায় জিম্মি প্রায় ৫০ শিশু ও নারীকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। আর প্রত্যেক ইসরায়েলির বিনিময়ে তিনজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে ইসরায়েল।
গত শুক্রবার চারদিনের মানবিক বিরতির প্রথম দিনে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ৩৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। বিনিময়ে ইসরায়েলি ও বিদেশি ২৪ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। এরপর শনিবার ইসরায়েলের ১৩ বন্দিসহ আরও ১৭ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র এই গোষ্ঠী। মুক্তি পাওয়া অন্য চার বন্দি থাইল্যান্ডের নাগরিক।
যদিও দ্বিতীয় দফায় এই মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে বেশ কয়েক ঘণ্টার বিলম্বের পর ওই ১৭ জনকে মুক্তি দেয় হামাস। ইসরায়েল চলমান যুদ্ধবিরতির একটি শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে হামাস অভিযোগ তোলার পর বন্দি মুক্তিতে ওই বিলম্ব হয়। সূত্র: আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল।
এবি/এইচএন