ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকান সিটির এক বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ নয় বরং নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ভ্যাটিক্যানের বিভিন্ন বিভাগের নেতৃত্ব দেওয়া ক্যাথলিক কার্ডিনালদের সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশ নেন পোপ ফ্রান্সিস। এসময় গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলাকে 'নিষ্ঠুরতা' বলে অভিহিত করেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিস আরো বলেন, বড়দিন সামনে রেখে শুক্রবার জেরুজালেমে খ্রিষ্টধর্মালম্বীদের সঙ্গে দেখা করতে গাজা উপত্যকায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
জেরুজালেমে পোপের অনুমাতি না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রয়টার্সকে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে প্যাট্রিয়ার্কের অফিস।
এদিকে ইসরায়েলে আগ্রাসনের মধ্যে গাজায় নেই বড়দিনের আমেজ। পশ্চিম তীরের শহর বেথলেহেমে বড়দিন ঘিরে সব উৎসব বাতিল করা হয়েছে। শহরটির মেয়র জানিয়েছেন, এ বছর বড়দিন শুধু প্রার্থনা আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
এর আগে শুক্রবার ইসরায়েল সরকারের একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে পোপের নিন্দা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সামরিক অভিযান ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা কিনা তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরো অধ্যয়ন করা উচিত।
ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ভাগ্যবশত, পোপ এই সমস্ত কিছু উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুদ্ধে যেকোনো নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু একটি ট্র্যাজেডি।
মন্ত্রণায়ল আরো বলেছে, ইসরায়েল নিরপরাধ মানুষের ক্ষতি কমাতে সবরকমের প্রচেষ্টা চালায়। অন্যদিকে হামাস ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের বর্বর সামরিক আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। এতে ৪৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লাখের বেশি মানুষ। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন।
এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
আমারবাঙলা/এমআরইউ