আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ কী হবে তা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ পশ্চিম তীর অঞ্চলে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী নির্ধারণ করবে। এ জন্য তিনি পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন সরকারকে প্রস্তুতি নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার (৬ নভেম্বর) পশ্চিম তীর অঞ্চল সফরে যান ব্লিনকেন। সেখানে রামাল্লা শহরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি বৈঠক করেন।
অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি বলেন, গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার আগ পর্যন্ত ইসরায়েল থামবে না এবং যুদ্ধ শেষে ইসরায়েল গাজার দখলও নেবে না। তাই সে সময় পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন সরকার বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) জোটকে গাজার দায়িত্ব নিতে হবে।
মাহমুদ আব্বাস জবাবে বলেন, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকা মিলেই ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড। তাই গাজা সবসময়ই ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পিএ তার ভবিষ্যৎ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন।
তবে বৈঠকে তিনি গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণারও আহ্বান জানান। জবাবে ব্লিনকেন বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে রাজি নয়; তবে গাজার জিম্মি ও বেসামরিক লোকজনের স্বার্থে একটি মানবিক বিরতি ঘোষণার জন্য ইসরায়েলকে রাজি করাতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রামাল্লায় বৈঠকের পর কোনো ব্রিফিং বা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি মাহমুদ আব্বাস কিংবা অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
উল্লেখ্য, মাহমুদ আব্বাস একই সঙ্গে পিএ জোট এবং এই জোটের দল ফাতাহের প্রেসিডেন্ট। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় পিএ জোটের সরকারই ক্ষমতাসীন ছিল; ২০০৭ সালে গাজায় ইসলামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের উত্থান ঘটে এবং পিএ জোটকে বিতাড়িত করে তারা উপত্যকার দখল নেয়।
ফলে গত ১৬ বছর ধরে ফিলিস্তিনের দুই অংশে দু’টি আলাদা সরকার ক্ষমতায়সীন রয়েছে—পশ্চিম তীর অঞ্চলে ক্ষমতায় রয়েছে পিএ জোট এবং গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করছে হামাস। উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক চরম বৈরী।
কারণ, হামাস বরাবরই সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, অন্যদিকে পিএ আলোচনা, কূটনীতি ও রাজনৈতিক পন্থায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা চায়।
চলতি বছরের গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চলানোর পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। সেই অভিযান এখনও চলছে।
হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। এছাড়া হামলার প্রথম দিনই ইসরায়েল থেকে অন্তত ২৩৪ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গেছে হামাস।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৯ হাজার। এছাড়া বিমান বাহিনীর এক মাসের বোমা বর্ষণে উপত্যকার ইন্টারনেট, টেলিফোন ও মোবাইল সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের সূত্রে, ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে এই প্রথম এত বড় মাত্রার সংঘাত হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘ ইতমধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতির সোচ্চার আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসকে সম্পূর্ন নিশ্চিহ্ন করার আগ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। সূত্র : রয়টার্স।
এবি/এইচএন