ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নতুন প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল বারহুম দখলদার ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন। তিনি এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে উপত্যকাটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
এদিকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। রবিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত রাত থেকে হামলায় আরো ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিন রাতেই কোনো এক হামলায় ইসমাইল বারহুম নিহত হন।
অন্যদিকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা উপত্যকায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার (২৪ মার্চ) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গত ১৮ মার্চ গাজার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইশাম দা-লিসকে হত্যা করে দখলদার ইসরায়েল। এরপর ইসমাইল বারহুম নতুন প্রধানমন্ত্রী হন।
দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইসমাইল বারহুমের নিহত হওয়ার তথ্য জানান।
জানা যায়, রবিবার রাতে গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ওই হামলাতেই ইসমাইল বারহুম ও অপর একজন নিহত হন। হামাস ইসমাইল বারহুমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, ইসমাইল নাসের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘সফলভাবে জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তা ইসমাইল বারহুমকে নাসের হাসপাতালে হত্যা করেছে।’
প্রতিরক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের কথা উল্লেখ করে এই দখলদার বলেন, ইসমাইল ছিলেন গাজার হামাস সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইশাম দা-লিসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। যাকে কয়েকদিন আগে হত্যা করা হয়েছে।
ইসমাইল বারহুমকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি হামলাটি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এবং বিবিসি অ্যারাবিকে ধরা পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আল জাজিরার সাংবাদিক নাসের হাসপাতালের সামনে থেকে লাইভ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঠিক তখন হঠাৎ করে মিসাইল সদৃশ্য কিছু একটি এসে হাসপাতালটিতে আঘাত হানে। এরপরই সেখানে আগুন লেগে যায়।
এ ঘটনায় আরো আটজন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। তবে হাসপাতালটি হামলায় নতুন করে আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরো ১২ ফিলিস্তিনি নিহত: গাজার চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, রবিবার রাত থেকে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতের এই পরিসংখ্যানে খান ইউনিসে তাঁবুতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় নিহত ছয়জন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরের মাইন এলাকায় একটি বাড়িতে সৈন্যদের হামলায় নিহত চারজনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় দুই নারীও নিহত হয়েছেন।
আল জাজিরা আরবির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, ভোররাতে গাজার খান ইউনিসের কিজান রাশওয়ান এলাকায় বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা উপত্যকায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রবিবার গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ২১ জনে এবং আহতের সংখ্যা এক লাখ ১৩ হাজার ২৭৪ জনে পৌঁছেছে।
দৈনিক হিসাবে রোববার গাজায় নিহত হয়েছেন ৪১ জন এবং আহত হয়েছেন আরো ৬১ জন। এ ছাড়া এদিন ধ্বংস্তূপ থেকে দু’জনের মরদেহও উদ্ধার করেছে স্থানীয় লোকজন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ ও অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এই জিম্মিদের উদ্ধারে এবং হামলার জবাব দিতে সেদিন থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, মঙ্গলবার থেকে রবিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল ও বিমান হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন সাত শতাধিক এবং আহত হয়েছেন এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
আমারবাঙলা/এমআরইউ