যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর)। এ নির্বাচনে দেশটির বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিস সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়বেন। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছয় জন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাদের দুজনের মাঝেই হবে। ভারতীয় ও আফ্রিকান বংশোদ্ভুত কমলার সামনে ইতিহাস হাতছানি দিয়ে ঢাকছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের রানিং মেট ছিলেন কমলা হ্যারিস। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নিয়ম অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট হন কমলা। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে কমলা একসঙ্গে দুটি ইতিহাস গড়েন। তার আগে আর কোনো নারী যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। কোনো কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষও তার আগে এই পদে ছিলেন না।
ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ড শহরে ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর কমলা দেবী হ্যারিসের জন্ম হয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মা শ্যামলা গোপালন ছিলেন পেশায় ক্যানসার গবেষক। পাশাপাশি তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। জ্যামাইকান-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ বাবা ডোনাল্ড জ্যাসপার হ্যারিস ছিলেন অর্থনীতিবিদ।
কমলার শৈশবে তার মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এরপর সান ফ্রান্সিসকো শহরের কাছে ছিলেন মায়ের সঙ্গে। মায়ের কাছেই বড় হন তিনি। শ্যামলা গোপালন মেয়ে কমলাকে ভারতীয় ঐতিহ্যে বড় করেন। তবে তাকে তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মসূচি ও কৃষ্ণাঙ্গদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নিয়ে যেতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অশ্বেতাঙ্গদের এই নাগরিক আন্দোলন কিশোরী কমলার মনে গভীর রেখাপাত করে। কৃষ্ণাঙ্গদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিখ্যাত রাজনীতিবিদ শার্লি চিশলম ও গায়িকা নিনা সিমোনের সংস্পর্শে আসেন তিনি। এ দুই ব্যক্তি তার জীবনে বড় প্রভাব বিস্তার করেন। তবে মাকে নিজের জীবনে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বলে মনে করেন কমলা হ্যারিস।
কমলার এবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়াটা বেশ নাটকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুটি দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পথটা বেশ দীর্ঘ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে দল দুটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের দলীয় বাছাই নির্বাচনে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সময় লেগে যায় ১২ থেকে ১৮ মাস।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষ থেকে অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন বাইডেন। কমলা তাকেই সমর্থন দেন। কিন্তু প্রথম সরাসরি টেলিভিশন বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে ব্যর্থতার পর চাপের মুখে গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বাইডেন। আর নিজ দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলার নাম প্রস্তাব করেন তিনি। সেই হিসেবে মাত্র চার মাস প্রচারণার সময় পেয়েছেন কমলা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর এত কম সময় প্রচারণা করার নজির নেই।
কমলা সিনেটর থাকাকালে ২০১৯ সালেও একবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তবে দলীয় বাছাই পর্বের শুরুতে দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন।
প্রচারণার মাত্র চার মাস সময় পেলেও বাকপটুতা ও হাস্যোজ্জ্বল কমলা ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিভিশন বিতর্কে দারুণ সফল হন। তার প্রতিটি প্রচারণও ব্যাপক সফল। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তারকারা তার সমর্থনে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
নারী স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার কমলা স্নাতক করেছেন আইন শাস্ত্রে। ওয়াশিংটন ডিসির হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে তিনি পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। এটি ঐতিহাসিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। শেষ করেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। স্নাতক শেষে ওই রাজ্যেই তিনি কৌঁসুলি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার নামী আইনজীবীতে পরিণত হন। জনপ্রিয়তার একপর্যায়ে ২০১৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সিনেটর নির্বাচিত হন।
৪৮ বছর বয়সে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন কমলা। তার বরের নাম ডগ এমহফ। বিনোদন আইনজীবী ডগ এমহফের আগের পক্ষে কোল এমহফ ও এলা এমহফ নামের দুই সন্তান রয়েছে। তারা দুজনই কমলাকে ‘মুমালা’ বলে ডাকে।
এলি ম্যাগাজিনকে নিজ পরিবার সম্পর্ক কমলা একবার বলেছিলেন, ‘পরিবার হিসেবে আমরা রবিবার একসঙ্গে নৈশভোজে বসি। কোল টেবিল ঠিকঠাক করেন এবং কোন সংগীত শোনা হবে, তা নির্বাচন করে। এলা দারুণ মিষ্টিজাতীয় খাবার বানায়। ডগ আমার প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করে। আর আমি রান্না করি।’
আমারবাঙলা/আরইউ