দিনাজপুর কাহারোল উপজেলায় এক ভয়াবহ জোড়া হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে এবং পরবর্তীতে ১ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে সংঘটিত এই হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় কাহারোল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও, সুবিচারের আশায় দিনাজপুর,উপজেলা-কাহারোল জয়রামপুর এলাকার মৃত মতিয়ার রহমানের পুত্র মো. মামুনুর রশিদ (৭০) আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
মামলার এজাহারে মামুনুর রশিদ উল্লেখ করেছেন যে, অভিযুক্তরা দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লাঠিয়াল, চাঁদাবাজ এবং জবরদখলকারী। তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মামলা তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম একজন কুখ্যাত ডাকাত ও সন্ত্রাসী এবং পূর্বেও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দীর্ঘ ২০ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছেন।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে। মামুনুর রশিদের অভিযোগ অনুযায়ী, মৃত মতিয়ার রহমানের পুত্র মো. শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার সঙ্গীরা কাহারোল বাজারে রব্বানী ভান্ডারে গিয়ে ৫০,০০০ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তারা দোকানে অবৈধভাবে প্রবেশ করে এবং ভয় দেখিয়ে ৭,০০০ টাকা মূল্যের একটি ডিজিটাল স্কেল জোরপূর্বক নিয়ে যায় ও বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে, একই দিনে দুপুরে মামুনুর রশিদের বাড়িতে এসে বাকি ৪৩,০০০ টাকা চাঁদার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। মামুনুর রশিদ টাকা দিতে অস্বীকার করলে, শফিকুলের হুকুমে লোহার শাবল দিয়ে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে, যার ক্ষতির পরিমাণ ৮৫,০০০ টাকা। বাধা দিতে গেলে শফিকুল ধারালো ছোরা দিয়ে মামুনুর রশিদের মাথায় আঘাতের কারণে ৪টি সেলাই পরে এবং হাত ও পায়ের হাড় ভেঙ্গে দেয়, গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
মামুনুর রশিদের ছেলে আজমল হোসেন পিতাকে বাঁচাতে এলে, শফিকুল তার মাথায়ও ছোরা দিয়ে আঘাতে ১১টি সেলাই পরে। এবং পরবর্তীতে আবারও আঘাত করলে তার ঘাড়ে গুরুতর জখম হয়। দ্বিতীয় হামলার ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি ২০২৫।
মামুনুর রশিদের অভিযোগ, অভিযুক্ত মফিজ উদ্দীনের নেতৃত্বে মৃত মতিয়ার রহমানের পুত্র মো. হাবিবুল্লাহ (৩৩), মো. রেজাউল ইসলাম (৩২), হাবিবুর রহমান (৪০), আবু তালেব (২৮), আব্দুল কাদের (২৯) সর্ব পিতা মো. মফিজ উদ্দীন। সুন্দইল এলাকার মো. মফিজ উদ্দীনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম, মো. তোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী মর্জিনা (৪০) আব্দুল ওয়াদুদের স্ত্রী সুফিয়া দলবদ্ধ হয়ে বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এবং লুটপাট ও মারধরের হুমকি দেয়। শফিকুলের নির্দেশে তারা ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে এবং ফিরোজা বেগম নামের এক মহিলাকে লোহার শাবল দিয়ে আঘাত করে তার পায়ের হাঁটুর হাড় ভেঙে দেয়।
হাবিবুর রহমান নামের আরেক অভিযুক্ত ফিরোজার মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করতে গেলে তিনি সরে যাওয়ায় তার কাঁধে ও শরীরে আঘাত লাগে। অভিযুক্ত মো. হাবিবুল্লাহ মামুনুর রশিদের মেয়ে আরজিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করলে তিনি হাত দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করলে তার হাতের আঙুল ভেঙে যায়। রেজাউল নামের আরেক অভিযুক্ত এলোপাতাড়ি লোহার রড দিয়ে মারধর করলে পায়ের গোড়ালি, কনুই ও কোমড়ে আঘাত লাগে।
অভিযুক্তরা শুধু মারধর করেই ক্ষান্ত হয়নি, বাড়ি থেকে ধান, চাল, লেপ, তোশক, খাট, চেয়ার, টেবিল, সাতটি ছাগল, হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, টিউবওয়েল, সেলাই মেশিন, ট্রাংক, নগদ টাকা, রুপার গহনা, মোবাইল ফোনসহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে মামুনুর রশিদ অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসি গুরুতর আহত মামুনুর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যদের শাহ জামালের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ৯৯৯ কল দিলে পুলিশ আসে। এরপর এলাকাবাসী তাদের ভ্যানযোগে প্রথমে কাহারোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েন যান। হাসপাতালের ছাড়পত্র ও অন্যান্য রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
বর্তমানে, মামুনুর রশিদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা এখনও তাদের বাড়ি দখল করে রেখেছে এবং প্রধান অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও হুমকি দিচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা মামুনুর রশিদ ও তার পরিবার অসহায় অবস্থায় যাযাবরের মতো জীবনযাপন করছেন।
এই পরিস্থিতিতে, মো.মামুনুর রশিদ ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে ফৌজদারি আইনের ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছেন।
আমারবাঙলা/ইউকে