আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডায় বসবাসরত বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সন্দেহভাজন ৩ জন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেফতার করেছে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)।
গ্রেফতাররা হলেন- করণপ্রীত সিং (২৮), কমলপ্রীত সিং (২২) ও করণ ব্রার (২২)। শুক্রবার (৪ মে) কানাডার অ্যালবার্টা প্রদেশের এডমন্টন শহর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরসিএমপি বলছে, সম্ভাব্য গ্রেফতার এড়াতে তারা এডমন্টন থেকে নিজেদের আবাস গুটিয়ে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সোমবারের (৬ মে) মধ্যে তাদের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর নিজেদের পৃথক রাষ্ট্র খালিস্তান বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ভারতীয় শিখদের একাংশ। ৭০’র দশকের শেষ থেকে ৮০’র দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারতের অভ্যন্তরে এ আন্দোলন দমনে সফল হয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে ভারতে থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে গিয়ে স্থায়ী হওয়া এ শিখরা তাদের আন্দোলন জারি রেখেছেন। নিজ্জর ছিলেন কানাডার খালিস্তানপন্থি শিখদের সংগঠক ও আধ্যাত্মিক নেতা।
তিনি ১৯৭৭ সালে ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে দেশটিতে গিয়েছিলেন। পরে সেখানে নাগরিকত্ব নেন।
এদিকে ভারতের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিসের কানাডা শাখার সংগঠক ও নেতা হওয়ায় নয়াদিল্লির একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন নিজ্জর। ২টি সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ।
গত বছরের ১৮ জুন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বৃহত্তম শহর ভ্যানকুভারের শহরতলী এলাকা সারেতে একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শিখ নেতা নিজ্জর।
পরে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতকে সরাসরি দায়ী করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা এ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।
এ ঘটনাকে ট্রুডো কানাডার সার্বভৌমত্বের জন্য তীব্র অবমাননাকর বলেও উল্লেখ করেন। অবশ্য ভারত এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে প্রত্যাখ্যান করে। পরে মার্কিন পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে এ হত্যার তদন্ত শুরু করে কানাডা।
শুক্রবার ৩ ভারতীয়কে গ্রেফতারের পর আরসিএমপির সুপারিন্টেডেন্ট মনদীপ মুকার বলেন, ভারতের সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরসিএমপির কমিশনার ডেভিড টেবৌল বলেন, তদন্ত এখনই শেষে হচ্ছে না। আমাদের ধারণা এ ঘটনার সঙ্গে আরও লোকজন যুক্ত। আমরা প্রত্যেককে গ্রেফতার করার লক্ষ্য নিয়েছি।
তবে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাজধানী অটোয়ায় ভারতের প্রধান দূতাবাস কার্যালয়ের কোনো মুখপাত্র ও কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে রাজি হননি। সূত্র: রয়টার্স
এবি/ এইচএন