ঘটনা বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এমসিজি টেস্টের প্রথম দিনে ১০ম ওভার শেষে। মোহাম্মদ সিরাজের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে অন্য প্রান্তের সতীর্থ ব্যাটসম্যান উসমান খাজার দিকে যাচ্ছিলেন অভিষিক্ত স্যাম কনস্টাস। তখন উল্টো দিক থেকে বল হাতে এগিয়ে আসছিলেন বিরাট কোহলি। অনেকটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ১৯ বছর বয়সী কনস্টাসের দিকে এগিয়ে এসে তার কাঁধে ধাক্কা মারেন কোহলি।
পরে দুই খেলোয়াড়ের কেউ কাউকে ছাড় দেননি। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় দুজনের মধ্যে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে খাজা গিয়ে দুজনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। প্রথমে কনস্টাসকে কিছু একটা বলার পর কোহলির কাঁধে হাত রাখেন খাজা। ততক্ষণে মাঠের আম্পায়ারেরাও এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন মনে করেন, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট অবশ্যই এই ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। ফক্স ক্রিকেটে ধারাভাষ্য দেওয়া ভন বলেন, ‘কোহলি ওই মুহূর্তের কথা মনে করে গর্ব অনুভব করবে না। কনস্টাস স্রেফ হেঁটে যাচ্ছিল। কোহলিকে দেখুন, সে তার পথের দিক পাল্টেছে। যথেষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং সর্বকালের সেরা কিংবদন্তিদের একজন হিসেবে কোহলি অবশ্য কৃতকর্ম নিয়ে ভাববে।’
এই ঘটনা নিয়ে ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার হটস্টারকে বলেছেন, ‘সরে গেলে কেউ ছোট হয়ে যেত না। প্রথমে মনে হয়েছিল যে, দুজনেই নিচে তাকিয়ে ছিল। এখন দেখার বিষয়, কাকে বেশি জরিমানা দিতে হয়।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং অবশ্য দোষটা কোহলিকেই দিয়েছেন। সেভেন নিউজকে বলেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, আম্পায়ার এবং রেফারি বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখবেন। বেশ কিছু অ্যাঙ্গেল থেকে আমরা ঘটনাটি দেখেছি। আমি মানছি, (ওভার শেষে) ওই পর্যায়ে তাদের (ভারতের ফিল্ডার) কোনো অবস্থাতেই ব্যাটসম্যানের ধারেকাছে যাওয়ার কথা নয়। ব্যাটসম্যানরা কোথায় একসঙ্গে দাঁড়ায় সেটা প্রতিটি ফিল্ডারই জানে। আমার কাছে মনে হয়েছে, কনস্টাস অনেক দেরিতে খেয়াল করেছে। কেউ তার সামনে থাকতে পারে সম্ভবত তার ভাবনায় ছিল না। কিন্তু তাকে (কোহলি) বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে।’
পন্টিং এরপর বলেছেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় উইকেট ব্যাটসম্যানের। ক্রিজও তার। বিশেষ করে দুটি ওভারের মাঝের মুহূর্তে। তখন কোনো বোলার বা ফিল্ডারের ব্যাটসম্যানের ধারেকাছে থাকার দরকার নেই। কিন্তু আমরা কনস্টাস ও কোহলির মাঝে শারীরিক সংঘর্ষ হতে দেখলাম। বিরাট কীভাবে হেঁটেছে দেখুন। বিরাট তার ডানে পিচের দিকে হেঁটেছে এবং সংঘর্ষটা উসকে দিয়েছে— এ নিয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই।’
আইসিসির আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, ‘ক্রিকেটে যে কোনো ধরনের শারীরিক সংঘর্ষ নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা না বুঝে, সেটা যেভাবেই হোক, আম্পায়ার কিংবা অন্য খেলোয়াড়ের সঙ্গে হেঁটে বা দৌড়ের সময় মুখোমুখি হয়ে পথে বাধা তৈরি করলে তারা আইনটি ভঙ্গ করবে।’
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফট যদি মনে করেন, কোহলি লেভেল টু পর্যায়ের অপরাধ করেছেন তাহলে তিন কিংবা চারটি ডিমেরিট পয়েন্ট পেতে পারেন ভারতীয় কিংবদন্তি। চার ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা হতে পারে তার। সে ক্ষেত্রে সিডনিতে সিরিজের শেষ টেস্টে হয়তো খেলা হবে না কোহলির। ২০১৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত কোহলি আইসিসির শাস্তি পাননি।
১৯ বছর বয়সী কনস্টাস আন্তর্জাতিক অভিষেকেই এমসিজি মাতিয়ে তোলেন। দারুণ কিছু শট খেলে ৬৫ বলে ৬০ রান করে রবীন্দ্র জাদেজার বলে আউট হন।
আমারবাঙলা/এমআরইউ