আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চলতি বছরে সারা বিশ্বের ৫০ টিরও বেশি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব দেশে বাস করেন ৪০০ কোটির বেশি মানুষ, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। সে হিসেবে ২০২৪ সালে ভোট দেবেন বিশ্বের অর্ধেক মানুষ।
রোববার (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল।
আগামী ১৩ জানুয়ারি স্বায়ত্বশাসিত দ্বীপভূখণ্ড তাইওয়ানে নির্বাচন হবে। চীন বরাবরই দেশটিকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে।
এ নির্বাচনের মাধ্যমে সে দাবি আরও একবার দুর্বল হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। কারণ এতে যে দলগুলো অংশগ্রহণ করছে, তাদের অবস্থান তাইওয়ানের স্বাধীনতার প্রশ্নে স্পষ্ট।
তবে চীনের সাথে তাইওয়ানের সম্পর্ক কেমন থাকবে- তা নিয়ে তাইওয়ানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে রয়েছে।
তাইওয়ানের সরকারি দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী উইলিয়াম লাই ভয়েস অব আমেরিকাকে জানান, আমরা কেবল ভবিষ্যৎ নেতা নির্বাচন করতে চাই, এমন নয়। ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে তাইওয়ানের ভূমিকা কেমন হবে, তা এ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নির্ধারিত হবে।
আগামী মাসে জনসংখ্যার হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। ২৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এ দেশটির নির্বাচনকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নির্বাচন হিসেবে গণ্য করা হয়।
ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানেও পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওপরবর্তীতে প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ইমরান খান দুর্নীতির অভিযোগে গত কয়েক মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। নির্বাচনের আগে তার মুক্তির সম্ভাবনা নেই।
ইমরানের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই ইনসাফের প্রার্থীদেরকে দলীয় প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। ২০০১ সাল থেকে ভৌগলিকভাবে বিশ্বের বৃহত্তম এ দেশটির প্রেসিডেন্ট রয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এ নির্বাচনেও তার জয়ের সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এর কারণ, এ নির্বাচনেও পুতিনের কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
ইউরোপের থিঙ্ক ট্যাংক সংস্থা সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান ফোরামের গবেষক ইয়ান বন্ড ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, পুতিনের সাথে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, এমন কোনো প্রার্থী নেই। তিনি প্রশাসনকে যেভাবে পুনর্গঠন করেছেন, তাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত পুতিনের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী উঠে আসার সম্ভাবনা নেই।
আগামী এপ্রিল ও মে মাসে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ খ্যাত ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার নির্বাচন। দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মতো এ নির্বাচনেও জয়ী হবে বিজেপি। সেই সাথে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে এ নির্বাচন।
ভারতের অন্যতম রাজনৈতিক সাংবাদিক পুষ্প শ্রফ মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, নির্বাচনে বিজেপি জিতবে ২ টি কারণে। প্রথম কারণ- দলটি সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী। দ্বিতীয় কারণ- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার ঢেউ।
কংগ্রেসের ফলাফল কেমন হবে, তা নির্ধারিত হবে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের ওপর। বিভিন্ন সময়ে দলটির মধ্যে ঐক্যের অভাব দেখা যায়। বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে ২ ধরনের মানুষ দেখা যায়। প্রথম দল ভারতকে একটি হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান। দ্বিতীয় দল মনে করে, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় বিজেপির বিকল্প নেই।
আগামী ২ জুন মেক্সিকোতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। সেখানকার রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এ নির্বাচনের মধ্যে দেশটির রাজনীতিতে নতুন একটি অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। কারণ এই প্রথম মেক্সিকো একজন নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে।
মেক্সিকোর রাজনীতি বিশ্লেষক প্যাট্রিসিও মোরালেস বলেন, এ নির্বাচনে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল রাজধানী মেক্সিকো সিটির সাবেক মেয়র ক্লডিয়া শেইনবাউমকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। তার জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
জুন মাসে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নেও (ইইউ) নির্বাচন হবে। ইইউভু্ক্ত দেশগুলোর জনসংখ্যা প্রায় ৫০ কোটি। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে ডানপন্থীদের উত্থান ঘটবে।
এ বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে। গত ১৪ বছর দেশটিতে কনজারভেটিভ পার্টির শাসন চলছে। এবার তার পতনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তার কারণ, বিরোধী দল লেবার পার্টির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা।
লন্ডনের কিংস কলেজের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ মেনন বলেন, গত ১৪ বছরে ব্রিটেনের বাসিন্দারা ব্রেক্সিট ও করোনা মহামারির মতো বড় ২ টি বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন। এখন তাদের সবচেয়ে বড় সংকট জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি। এসব ইস্যু এবারের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হবেন। আদালতের বাধা না থাকলে নির্বাচনে বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন তার পূর্বসূরী ও রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভয়েস অব আমেরিকাকে আনন্দ মেনন বলেন, ২০২৪ সালে এসব নির্বাচনের ফলাফল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। সব রাজনীতিই স্থানীয়। কিন্তু প্রত্যেক রাজনীতির একটি বৈশ্বিক ধারও রয়েছে।
এ বছর যত নির্বাচন হবে, সেসবের একটি বড় অংশের ফলাফল অভিবাসন ইস্যুটির ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে এ ইস্যু। এছাড়া ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও একটি বড় ইস্যু।
ইউক্রেনে অর্থ সহায়তা প্রদান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ২ টি দলের অনৈক্য আমরা দেখছি। আবার তাইওয়ানের নির্বাচনে প্রভাব রাখবে চীন-তাইওয়ান সম্পর্ক। তাই আঞ্চলিক রাজনীতিকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। অনেক সময় আঞ্চলিক রাজনীতি আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে পথপ্রদর্শন করে। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা
এবি/এইচএন