প্রায় তিন দশকের দাম্পত্য জীবনে বড় ধাক্কা এল। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সংগীত পরিচালক এ আর রহমান ও সায়রা বানু। এর পর থেকেই আলোচনা চলছে, হঠাৎ কেন বিচ্ছেদের ঘোষণা এই দম্পতির।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, বিচ্ছেদের খবর জানিয়ে এ আর রহমান আর সায়রা বানু যে বিবৃতি দিয়েছেন, মোটাদাগে সেখানে কারণ হিসেবে ‘মানসিক দূরত্ব’কে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে এ আর রহমান এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেন, ‘ভেবেছিলাম আমরা ত্রিশে পৌঁছাব। কিন্তু মনে হয় সবকিছুরই এমন শেষ আছে, যা আগে থেকে বোঝা যায় না। ভাঙা হৃদয়ের ভার স্রষ্টার সিংহাসনও কাঁপিয়ে দিতে পারে। ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে সবকিছুর অর্থ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি। যদিও ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের টুকরাগুলো আর আগের জায়গা ফিরে পেতে নাও পারে।’
বন্ধুদের উদ্দেশে রহমান আহ্বান জানান, ‘আমাদের জীবনের এই ভঙ্গুর অধ্যায়ে মহানুভবতা ও আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি সম্মান জানানোয় আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
এর আগে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে রহমানের স্ত্রী সায়রা বানুর একটি বিবৃতি ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনেন তার আইনজীবী। আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সায়রা বানুর আইনজীবী বন্দনা শাহ জানান, ‘বিয়ের বহু বছর পর স্বামী এ আর রহমানের সঙ্গে বিচ্ছেদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সায়রা বানু। তাদের সম্পর্কের মধ্যে মানসিক চাপের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। একে অপরের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা সত্ত্বেও এই দম্পতি লক্ষ করেছেন, তাদের মধ্যে দিন দিন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যবধান, যা এই মুহূর্তে কোনো পক্ষই পূরণ করতে সক্ষম নয় বলে মনে করছেন তারা। উভয়েই আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মিটিয়ে নিতে, কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি।’
সায়রা বানুর ভাষ্য, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তার পক্ষে মোটেও সহজ ছিল না। অনেক ব্যথা ও যন্ত্রণা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে আইনজীবী অনুরোধ করেছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যেন সায়রাকে বিব্রত না করা হয়। তিনি মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে ইতি টানা সহজ নয়।’
১৯৯৫ সালে সায়রা বানুর সঙ্গে সংসারজীবন শুরু করেন এ আর রহমান। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে শিল্পী জানিয়েছিলেন, সায়রা বানুর সঙ্গে বিয়েটা হয়েছিল পারিবারিক পছন্দে। তার ব্যক্তিগত পছন্দ বা প্রেম নয়। মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছিলেন তিনি। সিমি গারেওয়ালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রহমান এমনও বলেছিলেন, স্ত্রী সায়রার সঙ্গে তার কিছু সাংস্কৃতিক মতপার্থক্য রয়েছে। যদিও তারা বিষয়টি সামলে নিয়েছেন বলেও জানিয়েছিলেন।
এ আর রহমান ও সায়রার ছেলে আমিন ইনস্টাগ্রামে দেওয়া একটি পোস্টে লিখেছেন, এই সময়টিতে সবার কাছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা চাইছি।
এদিকে এ আর রহমানের বিচ্ছেদের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তার ভক্তরা। অনেকে মেলাতেই পারছেন না বিশ্বব্যাপী খ্যাতি কুড়ানো মানুষটির ঘরের মানুষটির সঙ্গে বনিবনা হয় না কেন?
১১ বছর বয়স থেকে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার বিভিন্ন সুরকারের সঙ্গে বাজাতে শুরু করেন রহমান। ঘটনাচক্রে ব্যক্তিজীবনে ধর্ম বদলান। ২৩ বছর বয়সে সপরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার নাম ছিল দিলীপ কুমার। ১৯৯২ সালে তামিল ছবি ‘রোজা’ দিয়ে সুরকার হিসেবে তার যাত্রা। পরে ১৯৯৫ সালে রাম গোপাল ভার্মার ‘রঙ্গীলা’তে সংগীত পরিচালনা করে তিনি শুরু করেন বলিউড যাত্রা।
ড্যানি বয়েলের ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’র জন্য অস্কার, গ্র্যামি, বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব জিতেছিলেন এ আর রাহমান। এ ছাড়া তার ঝুলিতে আছে ভারতের ছয়টি জাতীয় পুরস্কার।
আমারবাঙলা/এমআরইউ