নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং কাস্টমসের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
সোমবার (১৩ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিএমইএ’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও প্রবাসে ব্যবসা করা বাঙালিরাও এনবিআর এবং কাস্টমসের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেছেন। এনবিআর এবং কাস্টমসের যে সমস্যাগুলো রয়েছে এটা বড় সমস্যা। আমি সামনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করেছি। সমস্যা যখন চিহ্নিত সমাধান হতে বাধ্য। সুতরাং আমরা সমাধানের সূত্রগুলো বের করবো এবং এগুলো খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।
পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী বলেন, পোশাকশিল্পকে আমরা শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সব থেকে বড় ক্ষেত্র হিসেবে দেখছি না, সমাজ পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দারিদ্র্য বিমোচনেও মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। প্রায় ৪২ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে এর মাধ্যমে।
পোশাকশিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বললেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশ শ্রমিক নারী। এই শিল্পের কল্যাণে নারীর ক্ষমতায়ন ফিরে এসেছে। নারীরা স্বপ্ন দেখতে শিখেছে।
তিনি আরও বলেন, গতকাল কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন। তিনি এনবিআর সম্পর্কে এবং কাস্টমসের হয়রানি নিয়ে কথা বলেছেন। এছাড়া সাংবাদিকরা রয়েছেন, অনেক কথা আছে যেগুলো আমি বলতে পারবো না।
বস্ত্রমন্ত্রী বলেন, সব জায়গা থেকে একটি অভিযোগ আসছে। আমি সম্প্রতি ওমরা হজ করে এসেছি। সৌদি আরবে ব্যবসায়ীরা জোর করেই আমার সঙ্গে বসে ছিলেন। বাঙালি ব্যবসায়ীরা সেখানে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকেও একই ধরনের অভিযোগ এসেছে।
তিনি বলেন, দুটি বিষয়- একটি হলো রেমিট্যান্স পাঠানো, আরেকটি প্রবাসীরা যে ব্যবসা করেন, যে মালামাল পাঠান, তা নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এনবিআরের সমস্যা। সর্বসাকুল্যে আমি বলবো এনবিআর এবং কাস্টমসের যে সমস্যাগুলো রয়েছে এটা বড় সমস্যা।
বিজিএমইএ’র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে পূর্ণভাবে প্রস্তুত না করে বাইরে কোথাও শিল্প করতে দেওয়া যাবে না, এটা শিল্পনীতি হতে পারে না। আপনারা নগদ সহায়তা প্রদান ২০২৬ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখার দাবি জানিয়েছেন। আমাদের টার্গেটে পৌঁছাতে হলে বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে এই নগদ সহায়তার বিষয়টি থাকতে হবে।
এর আগে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় আমরা মাত্র ২৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করছিলাম। মাত্র আটটা গ্রিন ফ্যাক্টরি ছিল। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সহযোগিতায় আজকে আমরা এ পর্যায়ে এসে ৪৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পেরেছি। আজকে ২১৫টি গ্রিন ফ্যাক্টরি। আরও ৩০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির পথে আছে। অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি আজকে বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, আমাদের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সব থেকে হয়রানির জায়গা এনবিআর। এনবিআরের চেয়ারম্যান অত্যন্ত সৎ একজন। কিন্তু, উনার নিচে যারা আছেন... আলোর নিচে যেমন অন্ধকার, সেই অন্ধকার। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করলে অডিট হয় না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করলে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এতে করে নির্দিষ্ট সময়ে আমরা আমাদের মাল আমদানি করতে পারছি না, রপ্তানিও করতে পারছি না।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আইনি কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু যোগাযোগ না করলেই হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা যাতে আইন মেনেই সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে পারি তার দাবি জানাচ্ছি। আমরা হয়রানিমুক্ত ব্যবসা চাই।
এসময় ২০২৬ সাল পর্যন্ত পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বহাল রাখার দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি। পাশাপাশি সোর্স ট্যাক্স ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করেছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে শিল্প করা যাবে না। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে মাত্র তিনটি চালু হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু না করেই বাইরে শিল্প করা যাবে না, এমন নির্দেশনা দিলে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই সার্কুলার তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এবি/এইচএন