অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযানে গিয়ে তাদের কাছেই ভাড়া চাইলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। ভাড়া দেওয়া নিয়ে সমঝোতায় আসতে এক সপ্তাহ সময়ও বেঁধে দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, ভাড়া দিলে তাদের ব্যবসার বৈধতা দেবেন।
বুধবার (৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর গাবতলী বেড়িবাঁধ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা জানান মোহাম্মদ এজাজ। এর আগে উত্তর সিটির জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ইট বিক্রির কয়েকটি গদিঘর ভেঙে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অভিযানে গাবতলী পশুর হাট–সংলগ্ন জায়গায় টিনের ছাউনি ও বেড়া দিয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা প্রায় ৪০টি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়।
উচ্ছেদে যাওয়ার আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ অভিযান নিয়ে মিডিয়া কাভারেজের অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে গাবতলী বেড়িবাঁধ থেকে বিজিবি মার্কেট পর্যন্ত ইট, বালু, পাথরের গদিঘর, আড়তসহ আশপাশের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।
ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার আধঘণ্টার এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘এখানে যারা ব্যবসা করছেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের আমরা সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছি। এর মধ্যে হয় তারা তাদের এই মালপত্র নিয়ে সরে যাবেন অথবা সিটি করপোরেশনকে ভাড়া দিয়ে তাদের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন।’
মোহাম্মদ এজাজ আরো বলেন, ‘এখানকার যে অবৈধ ব্যবসাটি আছে, আমরা সেটি একটি বৈধ ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসতে চাই। বৈধ ফ্রেমওয়ার্কে আনার জন্যই এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা আমাদের একটা রাষ্ট্রীয় এস্টিমেট করে ফেলব, কী পরিমাণ রেভিনিউ আমরা এখান থেকে পাব। সেই অনুযায়ী তাদের সঙ্গে বসে নেগোশিয়েট করে আমরা একটি অ্যামিকেবল সলিউশনে আসতে পারবো বলে আশা করি।’
এই প্রশাসক বলেন, ‘ভাড়ার একটি সরকারি নিয়ম আছে। আমাদের যে ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন ও স্টেটের যারা কর্মী আছেন, তারা এই পুরো জায়গাকে এখন স্কয়ার ফুট হিসাবে এস্টিমেট করবেন। কতোগুলো গদি আছে, কতোগুলো অ্যাকোমোডেট করা সম্ভব, কতগুলো আকোমোডেট করা সম্ভব না দেখবেন।’
এর আগে উত্তর সিটির প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিষয়ে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর যে কতোগুলো কমিটমেন্ট ঢাকাবাসীকে দিয়েছি, তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে, সিটি করপোরেশন ও সরকারের যে সম্পত্তিগুলো আছে, সেগুলো দখলমুক্ত করা। এটা আমার একটি বড় ম্যান্ডেটের একটি।’
অবৈধ দখলে থাকা করপোরেশনের জায়গাকে পার্ক ও খোলা জায়গায় রূপান্তর করা তার দুটি বড় কাজের একটি বলে জানান ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘কারণ, ঢাকার প্রত্যেক মানুষের এটি অধিকার যে তারা পার্কে যাবে, ওপেন স্পেসে ঘোরাঘুরি করবে। এই খোলা জায়গা ঢাকার সবচেয়ে বড় সংকট।’ আর দ্বিতীয় কাজটি হলো, সরকারের অনেক সম্পত্তি যেগুলো বেদখলে আছে, সেসব জায়গা থেকে অর্থ আয় করা।
এ বিষয়ে এই প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় যে জায়গা, সেটি আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পেছনে। এখানে প্রায় ৩০ একরের ওপরে জায়গা...সামনের রাস্তা বেড়িবাঁধ...তারপরে আমাদের জায়গা আছে প্রায় দেড় শ একর।’
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘দেড় শ একরের মধ্যে কিছু অংশ ভরাট আছে, দখলে আছে, সেগুলো আমরা উদ্ধার করবো এবং উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে আজ থেকে। আমার পেছনে যে জায়গাগুলো, এখানে ইটের ভাটা ও অন্যান্য যে কমার্শিয়াল কর্মকাণ্ড আপনারা দেখেছেন, এগুলো দীর্ঘ সময় হয়ে এসেছে এবং তারা একটি পয়সাও সিটি করপোরেশনকে ভাড়া দিচ্ছেন না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক বলেন, ‘যারা এখানে ব্যবসা করেন, কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। এই ব্যবসাকে আমরা অবশ্যই বৈধতা দিতে চাই। বৈধতা দেওয়ার প্রথম নিয়ম হচ্ছে, যারা অন্যায় করবেন সেই অন্যায়কে প্রতিহত করতে হবে। পরে কীভাবে এটাকে লিগ্যাল জায়গায় নেওয়া যেতে পারে, সেটি খোলা আছে।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রশাসক বলেন, ‘যে গদিগুলো ভেঙেছি, সেটা ব্যবসায়িক টাকা কালেকশনের কাউন্টার। এটা আমরা বন্ধ করেছি, এটা প্রতীকীভাবে; যেন তারা (দখলদারেরা) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা আসলাম আর কথা বলে চলে গেলাম, তখন আপনারাই বলবেন, আমরা এদের সঙ্গে নেগোশিয়েট করে ফেলেছি।’
সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় অভিযানে গাবতলী পশুর হাট–সংলগ্ন অংশে ভেঙে দেওয়া দোকানমালিকেরা পেছন থেকে উচ্চ স্বরে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশৃঙ্খলা শুরু করেন। এ সময় মাঝেমধ্যে প্রশাসককে বক্তব্য থামাতে দেখা যায়। পরে বিশৃঙ্খলার মধ্যেই তিনি বক্তব্য দেন।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ অভিযানস্থল থেকে চলে যান। চলে যাওয়ার পর উচ্ছেদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন ভারী যন্ত্রও সরিয়ে নেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে থাকা উত্তর সিটির অন্য কর্মকর্তা ও কর্মীরাও চলে যান।
আমারবাঙলা/জিজি