সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
সংগৃহীত
ফিচার প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৪:০৩
সর্বশেষ আপডেট ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৪:০৩

ই-বর্জ্যে মিলছে স্বর্ণ

আমার বাঙলা ডেস্ক

আফগানিস্তানের সীমান্ত শহর স্পিন বলডাক। এখানকার শ্রমিকরা পুরোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ভেঙে স্বর্ণের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা খুঁজে বেড়ান। এই স্বর্ণেই তাদের জীবনযাত্রার একমাত্র ভরসা।

অবশ্য অনেকদিন ধরেই গবেষকরা বলছেন, ই-বর্জ্যে স্বর্ণের অস্তিত্ব আছে। জানা যায়, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার উপযোগী সার্কিট, চিপ তৈরিতে মূল্যবান বিভিন্ন ধাতু ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সোনার পরিমাণ থাকে বেশি।

এমন খবর জেনেই হয়তো বলডাকের শ্রমিকরা ফেলে দেওয়া পুরোনো রিমোট টেলিভিশন, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনের ভেতর লুকিয়ে থাকা স্বর্ণ খুঁজে বেড়ান। পুরোনো এসব ইলেকট্রিক যন্ত্র থেকে তারা সংগ্রহ করছেন ২৪ ক্যারেটের সোনা, আর তা বিক্রি করেই চলছে তাদের সংসার। কেউ কেউ মাসে পুরোনো এসব যন্ত্র থেকেই সংগ্রহ করেন একশ থেকে দেড়শ গ্রাম স্বর্ণ। তারপর তা নিয়ে যান স্বর্ণ গলানোর কারখানায়। তারা পরীক্ষা শেষে তা দিয়ে বানান নানা ডিজাইনের গয়না।

তবে এই পেশার পিছনে রয়েছে এক অবর্ণনীয় সংগ্রাম আর জীবনের ঝুঁকি। কিন্তু সমস্যা হলো, আধুনিক যন্ত্রগুলোতে এখন আর আগের মতো স্বর্ণ ব্যবহার হয় না। বরং সস্তা ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। তবু, এই শ্রমিকরা বিশ্বাস করেন হয়তো আজকের দিনেই তাদের ভাগ্য খুলে যাবে!

শুধু লাভের আশাই নয়, এই কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা তাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। বিষাক্ত ধাতু, ধুলোবালি আর রাসায়নিক পদার্থের ভেতরেই তারা কাজ করেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ নেই, নিরাপত্তার কোনো বালাই নেই। তবু, তারা থেমে নেই, কারণ পেটের ক্ষুধা তাদের সামনে আরো বড় বাস্তবতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে স্বর্ণ পাওয়ার সম্ভাবনা দিনে দিনে কমছে। যন্ত্র থেকে সংগৃহীত স্বর্ণ যায় বাজারে, সেখানে কারিগররা এ দিনে কেউ গলান এক থেকে দুই কেজি স্বর্ণ। সস্তা ধাতুর ব্যবহার বেড়েছে, ফলে এই পেশার ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। কমেছে কারিগরদের স্বর্ণ গলানোর কাজও।

কারিগররা বলেন, জাপানি ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্যে স্বর্ণ থাকে, কিন্তু চীনা ইলেকট্রনিক পণ্যে তেমন স্বর্ণ থাকে না। তবু আফগান শ্রমিকরা ভেঙে পড়ছেন না। তারা জানেন, অল্প কিছুই পাওয়া গেলেও একদিন তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবেই। আর এমন আশা নিয়েই প্রতিদিনই বসে যান পুরোনো যন্ত্র নিয়ে।

এদিকে অনেকদিন হলো, কানাডার গবেষকেরা ই-বর্জ্য থেকে স্বর্ণ আহরণের পরিবেশবান্ধব ও আর্থিকভাবে লাভজনক একটি পদ্ধতি উদ্ভাবনের দাবি করেছেন। তারা দাবি করেছেন, স্বর্ণশিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে এই পদ্ধতি।

কানাডার স্যাসক্যাচওয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক স্টিফেন ফলি দাবি করেন, আমরা সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছি, যাতে পুরোনো মোবাইল থেকে সোনা আহরণের পাশাপাশি পণ্য রিসাইকেল ও পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা যাবে। এটি স্বর্ণশিল্পে পরিবর্তন আনতে পারবে।

ফলি বলেন, সোনার সমস্যা হচ্ছে এটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় খুব বেশি সক্রিয় না হওয়ায় তা গলানো কঠিন। স্বর্ণ আহরণের জন্য প্রচলিত যে পদ্ধতি আছে তাতে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে; কারণ এতে সোডিয়াম সায়ানাইড ব্যবহৃত হয়।

ইলেকট্রনিক চিপ, সার্কিট প্রভৃতি থেকে স্বর্ণ আহরণ করতে গেলে তাতে প্রচুর খরচ হয় এবং পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে।

গবেষক ফলি বলেন, প্রতিবছর বিশ্বে পাঁচ কোটি টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে, যার ৮০ শতাংশ গর্ত ভরাটে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গবেষকেরা দাবি করেছেন, অ্যাসিটিক অ্যাসিডের সঙ্গে একটি অক্সিডেন্ট ও আরেকটি অ্যাসিড মিলিয়ে কার্যকরভাবে সোনা গলানো যায়। মাত্র ১০ সেকেন্ডে সার্কিট থেকে সোনা আলাদা করা গেলেও অন্যান্য ধাতু গলে না। এই পদ্ধতিতে প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড থেকে এক কেজি সোনা আহরণে পাঁচ হাজার লিটার অ্যাকুয়া রেজিয়া (নাইট্রিক ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মিশ্রণ) দরকার হয়।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বিএনপি ক্ষমতায় এলে মন্দিরে হামলারও বিচার হবে: মোশারফ হোসেন

বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জাত...

কটিয়াদীতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট, টিউবওয়েলে উঠছে না পানি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলাতে হস্তচালিত টিউবওয়েল...

গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ওসি-এসআইসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সুনির্দিষ্ট কোন মামলা ছাড়াই এক গৃহবধূকে (২৫) আটক ক...

বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষা ২৫ এপ্রিল

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির (এনরোলমেন্ট) এমসিকিউ পরীক্ষার ত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা