ইরানের বন্দর আব্বাসের শহীদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে আহতের সংখ্যা ৭৫০ ছাড়িয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর বিবিসির।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে দেশটির সবচেয়ে বড় ও আধুনিক বন্দরে ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরানের জরুরি সেবার মুখপাত্র বাবাক ইয়াকতেপেরেস্ট। আহতদের হরমুজগান প্রদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিস্ফোরণের পরপরই অনেকে ধারণা করতে থাকেন সেখানে নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। তবে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখপাত্র হোসেন জাফারি জানিয়েছেন, নাশকতার আলামত পাওয়া যায়নি।
তিনি বার্তাসংস্তা আইএলএনএ-কে জানিয়েছেন, কনটেইনারের ভেতর থাকা রাসায়নিক বস্তুর কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। জাফারি জানান, বিস্ফোরণ নিয়ে অনেক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেগুলোতে বিশ্বাস না করে সরকারি তথ্যের জন্য সবাইকে অপেক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে সেখানে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর প্রকৃত হতাহতের তথ্য জানা যাবে। তিনি জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এটি প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও তা অনুভূত হয়েছে।
সরকারি বার্তাসংস্থা ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ছোট একটি আগুন থেকে সবকিছুর সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। যেটির প্রভাবে বিশাল বিস্ফোরণ হয়। সেখানকার আবহাওয়া অত্যাধিক গরম এবং দাহ্য প্রদার্থ থাকায় বিস্ফোরণের তীব্রতা বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যেসব কনটেইনারে বিস্ফোরণ হয়েছে সেগুলোর ভেতর কী ছিল তা এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে সেখানে সালফার জাতীয় পদার্থের গন্ধ পাওয়া গেছে। প্রথম বিস্ফোরণের পর সেখানে আরো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ইরানি বার্তাসংস্থা ইরনা দেশটির সরকারি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, এটি ইরানের সবচেয়ে আধুনিক সামুদ্রিক বন্দর; যা হরমুজগানের প্রাদেশিক রাজধানী বন্দর আব্বাস থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এবং হরমুজ প্রণালির উত্তর দিকে অবস্থিত। যেখান দিয়ে পৃথিবীর মোট উৎপাদিত তেলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবহন করা হয়।
এদিকে বিবিসির যাচাই করা বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি বিশাল বিস্ফোরণের আগে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখান থেকে লোকজন পালানোর চেষ্টা করছিল। অনেকেই আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়েছিল।
স্থানীয় একজন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, পুরো গুদাম ধোঁয়া, ধুলা এবং ছাই দিয়ে ভরে গিয়েছিল। আমার মনে নেই আমি টেবিলের নিচে পড়ে ছিলাম নাকি বিস্ফোরণে সেখানে গিয়ে পড়েছি। এই ঘটনার পর প্রাথমিক প্রতিবেদনে ঘটনাস্থলে দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণে অবহেলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইরানের শুল্ক কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি সিনা কনটেইনার ইয়ার্ডে ঘটে; যা বন্দর ও ম্যারিটাইম অরগানাইজেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সেখানে একটি দল পাঠিয়েছে। তবে বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি, তদন্ত চলছে। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আহতদের প্রদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বেশ কিছু ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তিনটি এলাকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরে নিশ্চিত করেছেন যে আগুন এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে ছড়িয়ে পড়ছে। রবিবার ওই এলাকার সব স্কুল এবং অফিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একটি বেসরকারি সংস্থা জানিয়েছে যে তাদের ধারণা, ক্ষতিগ্রস্ত কনটেইনারগুলোতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য তৈরি জ্বালানি পদার্থ রাখা ছিল।
আমারবাঙলা/এমআরইউ