নিজস্ব প্রতিবেদক: জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ ছাড়াই শুধু বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা যাবে। কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই তথ্য বিদ্যুৎ অফিসে পৌঁছে যাবে। হাতের রিমোট দিয়ে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বন্ধ বা চালু করা যাবে বাসার লাইট, পানি তোলার মোটরসহ ইলেকট্রিক সবকিছু।
আবার আপনার মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোর, সেটাও সম্ভব নয়। হাতে থাকা মোবাইলে এলার্ম এবং লোকেশন চলে আসবে। ডিভাইসে থাকা নাম্বারে কল দিলেই গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাবে। আপনি না চাইলে আপনার গাড়িটি আর চালু করতে পারবে না চোর।
এমনই সব অভিনব যন্ত্র আবিষ্কার করে রীতিমতো তোলপাড় তুলেছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত নাকাই ইউনিয়নের একটি গরীব পরিবারে জন্ম নেওয়া মেধাবী সন্তান শাহীন। খুদে বিজ্ঞানী শাহীন নামেই এলাকায় পরিচিত।
সর্বশেষ কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই তথ্য বিদ্যুৎ অফিসে পৌঁছে দেওয়ার যন্ত্র আবিষ্কার করে রীতিমতো তোলপাড় তুলেছে গোটা গাইবান্ধায়। প্রতিদিনই ডাক পড়ছে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেসব ডিভাইস আবিষ্কার করে রীতিমতো সরবরাহ শুরু করেছেন তিনি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এ বয়সেই ৪০টির বেশি নিত্য প্রয়োজনীয় ও জীবন রক্ষাকারী ডিভাইস আবিষ্কার করেছেন তিনি।
তার আরেকটি আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোনের গোপনীয়তা রক্ষার্থে এমন এক ধরনের বিশেষ চশমা তৈরি করেছেন, যা ব্যবহারকারী নিজের মোবাইল স্কিনকে সঠিক দেখবেন। কিন্তু অন্যরা মোবাইলের স্ক্রিনকে চোখে একদম সাদা দেখতে পাবেন।
২০২১ সালে নাকাইহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় শাহীন। আর্থিক সমস্যার কারণে তার বিজ্ঞান নিয়ে পড়া হয়নি। বর্তমানে নাকাইহাট ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করছে। কলেজে ভর্তির পরপরই ২০২৩ সালে ৪৪তম বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেয় শাহীন। জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত প্রতিটি বিজ্ঞান মেলায় অংশ গ্রহণ করে তিনি জিতে নিয়েছেন একাধিক পুরষ্কার।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান লাভ করেন তিনি। মানবিক বিভাগে পড়েও অসাধারণ বিজ্ঞানমনস্ক শাহীনের এতসব আবিষ্কারে মুগ্ধ ও বিস্মিত স্থানীয়রা।
পেশায় দর্জি বাবার সন্তান অদম্য মেধাবী শাহীন অর্থাভাবে তার প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। এমন প্রতিভা সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন শাহীনের শিক্ষক ও সহপাঠীরা।
অদম্য মেধাবী শাহীন সম্পর্কে তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, 'ছোটবেলা থেকেই বিশেষ কিছু দেখলেই তা নিয়ে গবেষণা ও আবিষ্কারের অদ্ভুত এক আগ্রহ শাহীনের। কোনো সমস্যা দেখলেই তা সমাধানের চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে যেত সে। আর এসব চিন্তা থেকেই বিভিন্ন যন্ত্র এবং ডিভাইস আবিষ্কার করছে। অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা না থাকা স্বত্ত্বেও সে একের পর এক যন্ত্র আবিষ্কার করছে। তার অদম্য এই মেধাকে জাতীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে দেশের জন্য একটা সম্পদে পরিণত হবে।’
খুদে বিজ্ঞানী শাহীন জানান, ‘এসব যন্ত্র সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের হাতে পৌঁছে দিলে সবাই উপকৃত হবে। আমার এই আবিস্কার এবং গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দরিদ্রতা। সরকারি কিংবা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমার এই আবিস্কার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সে সঙ্গে বিদেশি রেমিট্যান্স আয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধ হবে দেশ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া বলেন, 'তাকে ইতোমধ্যেই আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও তিনি দেখা করেছেন। তার আবিস্কারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হবে'।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজি নাহিদ রসুল এ ক্ষুদে বিজ্ঞানী সম্পর্কে বলেন, ‘তার আবিষ্কার সম্পর্কে প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে থেকে জানতে পারি। আমি তাকে ডেকেছিলাম। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
এবি/এইচএন