রংপুর ব্যুরো: রংপুর মহানগরীসহ এ অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় লেট ব্লাইটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। আলুর বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত চাষিরা। তবে লেট ব্লাইটের শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
এ অবস্থায় আলুর রোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চাষিদের পরিমিত স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে শীতের ধকল কাটিয়ে ন্যায্য দাম আর আলু সংরক্ষণে হিমাগার সংকট সৃষ্টি না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রংপুর নগরীর তামপাট, মাহিগঞ্জ, তপোধন, রাজেন্দ্রপুর, দর্শনা, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ, লতিবপুর, রানীপুকুর ও পীরগাছার নাগদহ, দেউতি, পারুল, ছাওলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা আলুর খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
কেউ পানি দিচ্ছে, কেউ স্প্রে দিচ্ছে আবার কেউ আগাছা পরিস্কার করছে। তবে আলুর খেত দেখে মন ভালো হলেও অজানা শঙ্কায় চাষিরা। নিয়মিত কুয়াশা কাটাতে স্প্রে করায় তাদের খরচ বাড়ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনও ভরা আলুর মাঠ রক্ষা করে চলেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মহানগরী ও জেলাসহ রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় এ বছর চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। তবে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এর মধ্যে রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা রংপুর অঞ্চলের সর্বোচ্চ। এছাড়া নীলফামারী জেলায় ২১ হাজার ৯৯০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১১ হাজার ১৫২ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় ৭ হাজার ৭৫ হেক্টর ও লালমনিরহাট জেলায় ৬ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে।
এদিকে রংপুর অঞ্চলের আলুচাষিরা এবার আগেভাগেই দ্রুত বর্ধনশীল জাতের গ্রানোলা, লরা, মিউজিকা, ক্যারেজ, রোমানা ও ফাটা পাকরি চাষ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে রংপুরে এবং সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। আসছে মার্চ মাসের শেষের দিকে জমিতে আলু উত্তোলন শেষ হবে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, গত বছর আলুর ভালো দাম আর এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এখন আলু খেতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এরই মধ্যে আগাম জাতের আলু ঘরে তোলার কাজ শুরু করেছেন অনেকেই। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় লেট ব্লাইটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রংপুর নগরীর তামপাট এলাকার নুর ইসলাম ও ইছার আলী বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আগাম কিছু আলু বিক্রি করে দামও ভালো পেয়েছেন। তবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় আলু ক্ষেতে রোগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত রয়েছেন।
পীরগাছা উপজেলার হাউদারপাড় এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেভাবে শীত বাড়ছে, তাতে চাষাবাদ করা মুশকিল। সার, বীজ, সেচ সব কিছুর দাম বাড়ছে। সেই সাথে দিনমজুরও পাওয়া যায় না। ধার-দেনা করে আলু চাষ করছি। কিন্তু শীতের কারণে যদি আলুর পচারি রোগ হয়, লোকসানের বোঝা বইতে হবে।
পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া চরে আলু চাষ করেছেন সোহাগ মিয়া ও আজগর আলী। তাদের বাড়ি নগরীর বড় রংপুর এলাকায়। তারা প্রতিবছর ওই এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেন।
তারা জানান, এবার আলুর মৌসুমের শুরুতে বীজ আলু ও সার সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আলুর খেতের জন্য সবচেয়ে বেশির শঙ্কার কারণ হলো ঘন কুয়াশা। এই ঘন কুয়াশা দীর্ঘদিন থাকলে আলুর মধ্যে লেট ব্লাইট হতে পারে।
তবে আমাদের পক্ষ থেকে আলুচাষিদের নিয়মিত আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের পরিমিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।
এবি/এইচএন