আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত বছরের ৯ মে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নাটকীয়ভাবে আটক করা হয়েছিল। আর এরই জেরে পাকিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ভয়াবহ দাঙ্গা। টানা কয়েকদিন ধরে চলা সেই দাঙ্গায় হামলা হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তরেও।
সেই ঘটনার বর্ষপূর্তিতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক আবহ যেন আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ইমরানকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তবে বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার ৯ মে সেই দাঙ্গার ঘটনায় ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেছেন।
বরং তিনি কেন ক্ষমা চাইবেন; পাল্টা সেই প্রশ্ন করে বলেছেন, আমার কাছেই (অন্যদের) ক্ষমা চাওয়া উচিত। বৃহস্পতিবার (৯ মে) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং জিও নিউজ।
জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাবন্দি ইমরান খান গত বছরের ৯ মে দাঙ্গার ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এছাড়া তাকে গ্রেপ্তারের পরপরই গত বছর দেশটিতে যে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা থেকেও তার দলকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে সাংবাদিকদের সাথে এক অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনের সময় পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কেন ক্ষমা চাইব, এটা আমার কাছ থেকে চাওয়া উচিত।’
মূলত বেশ কয়েকটি মামলায় রায়ের পর গত বছরের আগস্ট থেকে বন্দি রয়েছেন ইমরান খান। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে শুরু করে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
দ্য ডন বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বুধবার ৯ মে দাঙ্গার জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, ২০১৪ সালে তার দল পিটিআই যে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল সে বিষয়ে তদন্তের মুখোমুখি হতে তিনি প্রস্তুত।
আদিয়ালা কারাগারে ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় আদালতের কার্যক্রম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। গত বছরের ৯ মে সহিংস বিক্ষোভের জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে, ইমরান খান নেতিবাচকভাবে উত্তর দেন।
তিনি বলেন, সহিংস সেই বিক্ষোভের সেই সময়ে তিনি আটক ছিলেন এবং সেই প্রতিবাদ সম্পর্কে তিনি কোনোভোবেই অবগত ছিলেন না।
পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, তিনি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়ালের সামনে হাজির হওয়ার সময় দেশজুড়ে সহিংস এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যেই সেই সহিংস বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়েছি।’
উল্লেখ্য, একদিন আগেই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) মহাপরিচালক গত বছরের ৯ মে বিক্ষোভের জন্য দলীয় নেতৃত্ব প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে পিটিআইয়ের সাথে সংলাপের সম্ভাবনা বাতিল করে দেন।
আর এর জবাবেই ইমরান এসব কথা বলেন। ইমরান খান আরও বলেছেন, সামরিক বাহিনী যদি সংলাপে আগ্রহী না হয় তবে পিটিআইও তা করতে চাইবে না।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মতে, ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য কোনও চুক্তি নয় বরং তিনি পাকিস্তানের স্বার্থে সংলাপ চেয়েছিলেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সেনাবাহিনীর সাথে তার কোনও সমস্যা নেই কারণ তার নিকটাত্মীয়রা পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি আমলাতন্ত্রে চাকরি করছেন।
ইমরান খান ২০১৪ সালের অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তিনি সানন্দে তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হবেন। তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় গত বছরের ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেপ্তার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা টানা চারদিন অব্যাহত ছিল এবং এতে কমপক্ষে ১০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু ও বহু সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাসে সেবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) প্রবেশ করে এবং লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সামরিক বাহিনী ৯ মেকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে এবং সেনা আইনের অধীনে বিক্ষোভকারীদের বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে ইমরান কারাগার থেকে মুক্তি পলেও তার দল পিটিআইয়ের ওপর নেমে আসে ব্যাপক দমন-পীড়ন। সহিংসতা এবং সামরিক স্থাপনায় হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে শত শত পিটিআই কর্মী এবং সিনিয়র নেতাদের কারাগারে বন্দি করা হয়।
এবি/এইচএন