সংগৃহিত
ঐতিহ্য ও কৃষ্টি

আমাদের ঐতিহ্য “ বানিয়ারা”

খন্দকার আশফাকুর রহমান : অন্তরে অণির্বান সেই সব ফেলে আসা দিনগুলি- যখন জামুর্কী স্কুলে পড়তাম। আমার প্রিয় মাতৃভূমি বানিয়ারা গ্রামে থাকতাম। সেই ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে বানিয়ারা শাহী মসজিদে নামাজ পড়তে আসতাম। মসজিদের অপরূপ স্থাপত্য সৌন্দর্যে সেই শৈশবেই বিমোহিত হতাম। ক্ষুদে শিশুটির কাছে, সুউচ্চ তিনটি গম্বুজ মনে হতো আকাশ ছুঁয়েছে। সাদা মেঘ গুলো যেন তারই উপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। দেখে সেই শৈশবেই কবি হয়ে যেতাম। আহা! কত যে সুন্দর আমার গ্রাম।

রাজধানী থেকে টাঙ্গাইল বলুন, যমুনা সেতু বলুন উত্তরাঞ্চলের যে কোন জেলায় যেতে সড়ক পথে প্রথমেই আমাদের উপজেলা মির্জাপুরের সবুজ শ্যামলীমা আর মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ আপনাকে স্বাগত জানাবে। গোড়াই শিল্পাঞ্চল ছেড়ে মির্জাপুর সদর বাস ষ্ট্যান্ড পেড়িয়ে পাঁচ মিনিট চললেই দেখতে পাবেন কদিম ধল্যা বাস ষ্ট্যান্ড। ব্যস এবার ডান দিকে সরু ছোট পথে নেমে এগিয়ে চলুন অবারিত ফসলের মাঠ ডাইনে-বামে রেখে। এবার আপনি ঢুকে পরেছেন ছোট্ট সোনার এক জনপদে। এই আমাদের গ্রাম। আপনার ডান দিকে প্রাচীন স্থাপত্যের সোনালী নিদর্শন সম্বলিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিন। বাম দিকে জাগ্রত আউলিয়া হযরত বাবা শাহ বর শাহ রহমতউল্লাহ আলাইহের মাজার। এক মিনিট দাঁড়ান। আকাশের দিকে তাকান। দেখবেন মাজারের মধ্যখানে একটা প্রকাণ্ড কদম গাছ। সারা বছর ছায়া দিয়ে থাকে এই গাছ। অনাদিকাল থেকে আছে এই গাছ। প্রতি বছর আষাঢ় এলেই এ গাছে ফুল ফোটে। কিন্তু কী আশ্চর্য্য অন্য সব কদম গাছের মত ফুল পরে মাজারের ভিতরের পরিবেশ বিপন্ন হতে কেউ কোন দিন দেখেনি। আরও অবাক করা কান্ড এত বড় গাছে কোনদিন পাখির বাসা বা ডিমের খোসায় ঝামেলা করার মত কোন ঘটনা কেউ কোনদিন লক্ষ্য করেনি। অলৌকিক ছাতার মতন দাঁড়িয়ে আছে এ কদম গাছ। বংশ পরম্পরায় বানিয়ারার মানুষ, এই মহান সাধকের প্রতি সর্বদা সম্মান প্রদর্শন করে আসছে। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি বানিয়ারার দুর্ধর্ষ ফুটবল টিম কোথাও ম্যাচ খেলতে যাওয়ার আগে সমস্ত গ্রামবাসী সহ এই মাজারের কাছে আসতো কুরআন তেলাওয়াত করতো, নবী করিম (সঃ) এর উপর দরুদ সালাম পেশ করতো। বাবা শাহ বর শাহ সহ অগনিত অলির প্রতি সম্মান প্রদর্শনে আল্লাহ খুশি হতেন। আল্লাহ সুবহানাহু-তায়ালা বানিয়ারা গ্রামের মর্যাদা বৃদ্ধি করতেন। ফুটবল টিম খেলায় জয়লাভ করতো।

তিন গম্বুজ মসজিদের এই জমি বানিয়ারা মৌজার ৫০৭ দাগের ১৯৮ শতাংশ জমি প্রাচীনকালে আঁড়া খাঁ নামের এক লোকের ছিল। মাজারের পাশের জমি হওয়ার সুবাদে কথিত আছে প্রবল প্রতাপশালী আঁড়া খাঁ তার এই জমিতে সাতবার বাড়ী তৈরী করে এবং সাত বারই প্রবল ঝড়ে সে বাড়ী লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। অতঃপর আঁড়া খা রণে ভঙ্গ দিয়ে এ গ্রাম ছেড়ে যায় অথবা মৃত্যু মুখে পতিত হয়।

তবে মোঘল আমল শেষ হয়ে ২শত বছর বৃটিশ রাজত্ব চলে। রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনে এই জায়গা পতিত পরে থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই খাস জমি হয়ে যায়। বলিয়াদীর জমিদারদের তত্ত্বাবধানে থাকা কালীন বানিয়ারা গ্রামের জনৈক সৈয়দ মজিবর রহমান মিয়া ১ (এক) টাকার বিনিময়ে এই ১৯৮ শতাংশ জমি নিজ নামে পত্তন আনেন। সে অনেক দিন আগের কথা।

১৮৮০ই সাল থেকে বানিয়ারা গ্রামের মানুষ কলিকাতা কেন্দ্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। কলিকাতা বর্ধমান, মেদিনীপুর, চন্দন নগর ইত্যাদি শহরে আমাদের গ্রামের মানুষ চাকরি করতেন। জীবিকার অন্বেষণে যাতায়াত করতেন। বৃটিশ শাসন সুবাদে বিলাত শব্দটা তখন খুবই জনপ্রিয় ছিল। বিলাতি কাপড়, বিলাতি বিস্কুট, বিলাতি ঔষধ বাজারে প্রচলিত ছিল।

মুসলিম রেঁনেসার বীর সেনানী সার সৈয়দ আহমদ, কামাল পাশা, আনোয়ার পাশা, আহমদ শাহ্ ব্রেলভী প্রমুখ মনিষী গণের চিন্তা চেতনা লন্ডনের অকিং মসজিদ ভিত্তিক ইসলামী আন্দোলনের ছোঁয়া আমাদের বানিয়ারা গ্রামেও দোলা দিতে শুরু করে।

বানিয়ারায় তখন যুবক খন্দকার আজম উদ্দিন সাহেব কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজি অনার্স পড়েন। কলিকাতায় থাকেন সেখানে করটিয়ার দানবীর জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী চাঁদ মিয়ার সংস্পর্শে আসেন। চাঁদ মিঞা তখন বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার অন্যতম নেতা। সেখানে এম.বি ডাক্তার হতে গিয়ে চাঁদ মিঞার সংস্পর্শে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে ন্যাশনাল ডাক্তার হয়ে দেশে ফিরেন বানিয়ারার আর এক কৃতি সন্তান ডাঃ খন্দকার লুৎফুল হক। মধু ডাক্তার।

বৃটিশ শাসিত এই উপ-মহাদেশে তখনকার দিনে যে ইসলামী রেঁনেসা তথা মুসলমানদের জাগরণ শুরু হয়েছিল; সেই জাগরণ তদানীন্তন আটিয়া পরগনায় বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত হয়। আটিয়ার মসজিদ, পাকুল্যার জমিদার মতিবিবি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পাকুল্যার শাহী মসজিদ বৃটিশ আমলে মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন বহন করে।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বানিয়ারার এতদঞ্চলীয় শিক্ষিত মুসলমান সম্প্রদায় গ্রামে একটি মসজিদ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে বানিয়ারা একটি অগ্রগামী গ্রাম হিসেবে বিশেষ পরিচিত লাভ করে। বানিয়ারা গ্রামের গুনীজনেরা মরহুম সৈয়দ সালেহার রহমান সাহেবদের বাড়ীর পালানে মসজিদ স্থাপনের উদ্যোগ নিলে ডোকলাহাটী গ্রামের মরহুম সৈয়দ গোলাম জব্বার মিঞা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন।

১৯২৬ ইং তে তিনি বানিয়ারার সৈয়দ মজিবর রহমান মিঞার আঁড়া খাঁ’র ভিটা খ্যাত ৫০৭ দাগের মোট ১৯৮ শতাংশ জমির কাতে ৮০ শতাংশ জমি ১৫০( দেরশত) টাকায় ক্রয় করে মসজিদের নামে ওয়াকফ করেন। তাঁর সাথে বানিয়ারা নিবাসী বড় মৌলবী সাহেব নামে বিখ্যাত (১) মৌলবী তোজাম্মেল আলী (২) খন্দকার তোফাজ্জল হোসেন (৩) সৈয়দ মজিবর রহমান (৪) সৈয়দ এনায়েত আলী (৫) সৈয়দ আবু মোঃ হাবিবুর রহমান (৬) খন্দকার মোহাম্মদ আলী এই ছয়সহ জন মোট সাতজন দাতা মসজিদের নামে ১৯৮ ডিঃ জমি ওয়াকফ করে দেয়ার বাসনা প্রকাশ করেন। একমাত্র সৈয়দ গোলাম জব্বার মিঞার দলিল থাকায় ৮০ ডিঃ জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ এষ্টেটে নিবন্ধি করন করা সম্ভব হয়। বাকী ছয়জন রেজেষ্ট্রি দলিল মূলে না দেয়ায় ১১৮ শতাংশ জমি ওয়াকফ এষ্টেটে নিবন্ধন কৃত হয় না।

সেই সময় সৈয়দ গোলাম জব্বার মিঞা ১৫০ টাকায় ৮০ শতাংশ জমি ক্রয় করে ওয়াকফ করে শর্ত দেন যে তার বংশের বয়োজ্যেষ্ঠ পুত্র সন্তান বংশপরম্পরায় মুতওয়াল্লী থাকবেন বটে; কিন্তু কখনো কোন অবস্থায়ই কোন মুতওয়াল্লি ওয়াকফ করা এই সম্পত্তি নিজ সম্পত্তি মনে করে তদ্রুপ কোন কার্য বা অধিকার পোষণ করতে পারবে না। এবং ওয়াকফকৃত দলিলে আরও যে সমস্ত শর্ত উল্লেখিত আছে তাহাতে যে কোনো সময় যে কোন মুতওয়াল্লি মসজিদ কমিটির একজন সাধারণ সদস্য ব্যতিরেকে আর কিছুই নহেন। এই ভাবেই দীর্ঘদিন মসজিদ কমিটি সুনামের সাথে চলে আসছে।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকে পাকিস্তান ভাঙ্গার সময় পর্যন্ত বানিয়ারা জামে মসজিদ বলিষ্ঠ আলেম ওলামা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিক্ষিত ধর্মভীরু মুমিনদের দ্বারা সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে চলছিল।

বরাবরই এর পরিচালনায় আমরা দেখেছি বড় মৌলবী সাহেব জনাব খন্দকার তোজাম্মেল আলী, তিনি জীবিত অবস্থায় বেশিরভাগ সময় পাকুল্যা জমিদারদের মসজিদের খতিব ছিলেন বিধায় মৌলবী সৈয়দ মোজাফ্ফর হোসেন সাহেব প্রেসিডেন্ট থাকতেন খন্দকার আজমউদ্দিন সাহেব সেক্রেটারি থাকতেন।

অতঃপর সর্ব্বজনাব খন্দকার মতিয়ার রহমান, সৈয়দ সালেহার রহমান, খন্দকার মছিহুজ্জামান হাফেজ মিঞা সাহেব, খন্দকার আব্দুল গফ্ফার, মীর জাফুরুর রহমান, সৈয়দ আবু তালেব (সোনামিঞা) ছিলেন, এরা বরাবর বানিয়ারা জামে মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে থাকতেন। আবু তালেব (সোনামিঞা) মুতওয়াল্লি সদস্য ছিলেন। তখনকার দিনে সামাজিক বন্ধ মজবুত ছিল।

সেকালে দেশে বিদেশে বানিয়ারা গ্রামের আত্মীয়-স্বজন, ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ অকাতরে দান করতে থাকেন মসজিদ নির্মাণ কাজে। কিন্তু আকাশ ছোঁয়া তিনটি গম্বুজ গড়ে তোলা কি সহজ কথা?- এমন পরিস্থিতিতে এলাকার সৌভাগ্যবান অবস্থাপন্ন ব্যক্তিগণ মোটা অংকের দান নিয়ে এগিয়ে আসেন।

কথিত আছে মাঝখানের বড় গম্বুজ নির্মাণের ব্যয়ভার বহন করে বানিয়ারার ক্ষণজন্মা পুরুষ সৰ্ব্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। পাশের অপেক্ষাকৃত ছোট দুইটি গম্বুজের ১টি দান করেন লাউহাটীর কীর্তিমান জনাব আরফান খান।

আরফান খান আজগর খান দুই ভাই বোন বিয়ে দিয়েছিলেন বানিয়ারায়। ছোট বেলায় মক্তবে লেখাপড়া বানিয়ারায় করেন। তাই বানিয়ারার প্রতি রেঙ্গুনের সফল ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয়ের ছিলো অপার অন্তরের টান। এইভাবে ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) টাকার জমির উপর গড়ে উঠে ১,৫০,০০০ (দেড় লক্ষ টাকার বিশাল স্থাপত্য) তিন গম্বুজ মসজিদ। মোঘল আমলের কীর্তি খচিত খিলান আর নানা রকম নকশা আঁকা অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থাপনা আজও পথিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, থেমে যায় গতি। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বিস্মিত নয়নে।

বানিয়ারার মুরুব্বিয়ানদের দ্বারা গঠিত মসজিদ কমিটি এবং গ্রামবাসী মৌলবী সৈয়দ মোজাফ্ফর হোসেন সাহেবের নেতৃত্বে ১৯৫৯ সালে মসজিদের পাশে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন এই মাদ্রাসা সুনামের সাথে চলে আসছে এই মাদ্রাসার সুযোগ্য ছাত্ররা আজ জেলা ও দায়রা জজ, সোনালী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা। এই বানিয়ারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। এরকম আরও বহু কৃতি ছাত্র সারাদেশব্যাপী।

হঠাৎ দেশের অনেক মানুষের ভাগ্য রাতারাতি পাল্টে গেলে মাদ্রাসার পেছনে গড়ে উঠে এক সুরম্য প্রাসাদ। শুরু হয় ভাঙ্গা-চোরা মাদ্রাসা সরিয়ে নেবার ষড়যন্ত্র। এই পর্যায়ে ১৯৯৮ সালে বানিয়ারা গ্রামবাসীর দাবী ও দরখাস্ত মূলে বাংলাদেশ ওয়াকফ এষ্টেটের পক্ষ থেকে এক তদন্ত কমিশন পাঠানো হয়।

কমিশনের রিপোর্ট মোতাবেক বাংলাদেশ ওয়াকফ এষ্টেট বানিয়ারা মাদ্রাসা কমিটিকে পত্র প্রদান করেন যে ছয়জন ওয়াকিফের দলিল না থাকায় তাদের জমি ওয়াকফ এষ্টেটে নিবন্ধন করা সম্ভব হয় নাই। বর্তমানে তাদের ওয়ারিশগণ দলিল সম্পাদন করে দিলে ওয়াকফ করা সম্ভব। সেই মোতাবেক ছয়জন ওয়াকিফের ওয়ারিশগণ সম্মিলিতভাবে ৭০ শতাংশ জমি বানিয়ারা বাবুল উলুম মাদ্রাসার নামে ওয়াকফ করার জন্য দলিল সম্পাদন করে দিলে বাংলাদেশ ওয়াকফ এষ্টেট সিএস ও এসএ খতিয়ানের মালিক আলহাজ্ব খ: মোহাম্মদ আলী সাহেবের বড় মেয়ে মোসাম্মত মাজেদা খাতুন কর্তৃক আরও ৩০ শতাংশ ইতিপূর্বে মাদ্রাসার নামে সাফ কবলা দলিল সম্পাদন করা মোট ১.০০ (এক) একর জমি বানিয়ারা বাবুল উলুম সিনিয়ার মাদ্রাসা ওয়াকফ এষ্টেট নামে একটি ওয়াকফ এষ্টেট রেজিষ্টার্ড করা হয়। এবং মসজিদ কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সৈয়দ গোলাম জব্বার মিঞার ৮০ শতাংশ জমির কাতে ২০ শতাংশ জমি মাদ্রাসার নামে দলিল করে এওয়াজ বদল করেন। ২০ শতাংশ জমির পরিবর্তে মরহুম সৈয়দ হামেদ হোসেন মসজিদকে ৩৪ শতাংশ জামি সাফ কওলা দলিল করে দেন। এইভাবে ৫০৭ দাগে ১৯৮ শতাংশ জমির কাতে মাদ্রাসার নামে বর্তমানে ১২০ শতাংশ জমির দলিল বিদ্যমান। খন্দকার আশফাকুর রহমান উক্ত এষ্টেটের মুতওয়াল্লী মনোনীত হন।

শ্রদ্ধেয় বড় মৌলবী সাহেব খন্দকার তোজাম্মেল হোসেন তদীয় সন্তান পুত্র খন্দকার ইদ্রিস হোসেন, খন্দকার শামসুল হুদা ছোট ভাই খন্দকার মতিয়ার রহমান, সৈয়দ মোজাফ্ফর হোসেন সাহেব খুব নামকরা মৌলবী ছিলেন।

১৯৩৫ সালে তদানিন্তন বাংলার প্রতাপশালী করটিয়ার জমিদার মরহুম ওয়াজেদ আলী খান পন্নী চাঁদ মিঞা বানিয়ারার সৈয়দ মোজাফ্ফর হোসেনের সাথে তার ছেলে নওয়াব মিঞা ও অন্যান্য পরিবার সদস্যগণকে পবিত্র হজব্রত পালন করতে পাঠান। ওই সময় অথবা তার কাছাকাছি সময়ে মৌলভী সাহেবের ছোট ভাই ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেব যখন বিলেত যাওয়ার জন্য স্টেট স্কলারশীপ পান তখন চাঁদ মিয়া অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বিলেতে ব্যবহায্র্য সকল উচ্চমান সম্পন্ন জামা কাপড় জুতা মোজা খরিদ করে তাকে উপঢৌকন দিয়ে সম্মানীত করেন।

প্রসঙ্গতঃ এখানে উল্লেখের দাবী রাখে যে বানিয়ারা গ্রামের এই ক্ষণজন্মা পুরুষ ২য় শ্রেণী থেকে এম,এ ক্লাস অতঃপর ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনির্ভারসিটিতে আরবীতে পি এইচ ডি করা পর্যন্ত বরাবর সরকারী বৃত্তিতে পড়াশুনা করে খ্যাতিমান হয়েছেন।

তিনি প্রায় দশ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে প্রথম বাঙ্গালী মুসলমান উপাচায্র্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। উল্লেখিত আটদশজন আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলেম ছাড়াও প্রায় প্রতি ঘরে মৌলভী মুন্সি দেখা পাওয়া যেত। এবং আশে পাশের গ্রাম-জনপদে জুম্মায় খতিবী করা ও আরবী পড়ানোর কাজ বানিয়ারার বংশীয় মুরুব্বীয়ানরাই করে থাকতেন।

সৈয়দ মোজাফ্ফর হোসেন সাহেব উঁচু দরের আলেম ছিলেন। গলার আওয়াজ মধুর ছিল। স্পষ্ট উচ্চারণে চমৎকার তেলাওয়াত করতেন। জুমার নামাজ পড়াতেন। বাধ্যতামুলকভাবে ঈদের নামাজে ইমামতি করতেন। দারুন খোৎবা দিতেন। স্কুলে দীর্ঘদিন হেড মৌলবী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।

বানিয়ারার এই আলেম শিরোমনি সম্পর্কে কিংবদন্তি এই যে ছোট ভাই সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেব আই.এ পাশ করার পর ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তিনি ফার্সীতে অনার্স পড়বেন। বাবা সৈয়দ কেয়ামত আলী সাহেব নাখোশ। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন উচ্চ শিক্ষা নিলে আরবীতে নিতে হবে। অন্যথায় চাকরী করতে হবে। রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে পাশ করায় সরকারী খরচে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থাকা খাওয়াসহ বৃত্তি ঘোষণা করেছে। এমতাবস্থায় পড়াশোনা না করেন কীভাবে। তাঁর যুক্তি ছিল শিশু শ্রেণী থেকে সে কালের প্রচলিত রেওয়াজ মাফিক ফার্সী পরে আসছেন। কোন ক্লাশেই আরবীর সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে নাই। হঠাৎ আরবীতে অনার্স পরীক্ষায় কেমনে ভর্তি হবেন। ভর্তি পরিক্ষায়ই তো বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা। এগিয়ে এলেন বড় ভাই সৈয়দ মোজাফ্ফর হোসেন সাহেব। তিন মাস আরবীতে কোচিং দিয়ে ছোট ভাইকে ভর্তি পরীক্ষায় ৮৭% নম্বর পাইয়ে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করতে সাহায্য করেন।

খন্দকার আজম উদ্দিন বানিয়ারা জামে মসজিদের সেক্রেটারী হিসেবে দীর্ঘদিন খেদমত দিয়েছেন। তিনি জামুর্কী স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। ইংরেজীতে অর্নাস পড়ার সুবাদে বৃটিশ আমলে আমাদের এলাকায় তাঁকে স্যার সৈয়দ আহমদের মত মর্যাদা দেয়া হতো।

একবার ১৯১৯ইং সালে করটিয়ার জমিদার জনাব ওয়াজেদ আলী খান পন্নী চাঁদ মিঞার সাথে তাঁর স্কুলের হিন্দু শিক্ষকদের মত বিরোধ দেখা দেয়। স্কুলের মুসলমান মৌলবী শিক্ষক চাঁদ মিঞার কাছে অভিযোগ করেন যে তাঁদের নামাজ ঘরের সামনেই স্বরস্বতী পূজার মন্ডপটা যেন সরিয়ে দেয়া হয়। সেই কথা জমিদার সাহেব হিন্দু শিক্ষকদের বললে, তারা উত্তর করেন যে মন্ডপ সরালে, তারাও সরে যাবেন। এ চ্যালেঞ্জ চাঁদ মিঞা গ্রহণ করলেন।

বলাই বাহুল্য যে মৌলবী ছাড়া সব শিক্ষক ছিলো হিন্দু। পরদিন স্কুল শিক্ষক বিহীন হয়ে পড়লো। কী ভাবে চলবে। তখন চাঁদ মিঞা সাহেব বানিয়ারার তেজস্বী যুবক খন্দকার আজম উদ্দিন সাহেবকে কলিকাতা পাঠালেন মুসলমান শিক্ষক খুঁজে আনতে।

সেই যাত্রায় তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহীম খাঁ সাহেবকে। পরবর্তী সময় প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহীম খাঁ বাংলার আলীগড় খ্যাত সা’দত কলেজ স্থাপনে সক্ষম হন। সে ঘটনা ইতিহাসের এক উজ্জ্বল মাইল ফলক হয়ে আছে।

খন্দকার আজমউদ্দিন ইংল্যান্ডের অকিং মসজিদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইসলামিক রিভিউ পত্রিকা বানিয়ারায় আনতেন। সে আর এক ইতিহাস। এলাকার সব শিক্ষিত অশিক্ষিত লোক আজম সাহেবের বাসায় গোল হয়ে বসতেন এবং তিনি ইংরেজী পত্রিকা পড়ে ব্যাখ্যা করে সবাইকে সারা দুনিয়ার ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনের খবর শোনাতেন। এই রকম ইসলামী জাগরনের আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠে বানিয়ারা জামে মসজিদ।

বানিয়ারার আর এক মুরুব্বী ছিলেন মরহুম খন্দকার মছিহুজ্জামান। এই মসজিদ এবং তৎ সংলগ্ন শাহবাবার মাজার এর তদারকি করতে দেখেছি তাঁকে। সে এক রাজকীয় ব্যাপার। তিনি মানুষও ছিলেন রাজস্বী চরিত্রের। পূর্ব পুরুষ জমিদার ছিলেন। আমরা নিজ চোখে দেখেছি দেলদুয়ারের জমিদার গণ, ছলিম নগরের জমিদার গণ তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে ছালাম করতেন। ছয় ফুটের বেশী লম্বা, ফর্সা মানুষ খুব দাপটের সাথে চলতে পছন্দ করতেন। সারা জীবন চলেছেন ও তেমনি আল্লাহ পাকের রহমত ছিল সেইসব মুরুব্বীগণের উপর। মাজারের মর্যাদা রক্ষায় তিনি ছিলেন আপোষহীন। মির্জাপুরের কিংবদন্তী দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা নিজে বলেছেন, “ তিনি ও তার মেয়েরা ঘোড়ায় চড়ে মহেরা জমিদার বাড়ি বেড়াতে যেতে বানিয়ারা মাজারের কাছে এলেই ঘোড়া হতে নেমে যেতেন এবং মাজারের যায়গাটা পায়ে হেঁটে পার হয়ে ঘোড়ায় চড়তেন।

মীর শাহাদত আলী (নান্নু মিঞা) : বৃটিশ আমলে ইনি মামাতো ভাই মেসার্স আরফান খান, আজগর খানদের সাথে রেঙ্গুঁনে থাকতেন। ভাল অবস্থা করেছিলেন। মসজিদ বাড়ীতে সমস্ত আমগাছ তিনি নিজ খরচে রোপণ করেন। বড় করে তুলতে সেবা যতœ দিতে থাকেন।

ধারনা করতেন ফলবান গাছগুলো যতদিন ফল দিতে থাকবে, লোকে খাবে তিনি সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব পাবেন। আফসোস এবার ২০০৭ সালে মুকুল ফুটে গুটি বের হওয়ার পর কেটে ফেলা হলো। এ পাপের দায়ভার জানিনা আল্লাহ পাক কার উপর ফেলবেন। পাশের লাল চিহ্ন দেয়া দেয়াল অজ্ঞাত কারণে অক্ষত রইল। ধ্বংস হয়ে গেল শত বর্ষীয় ফলবান বৃক্ষরাজী। আল্লাহ কী এই ঘাতকদের ক্ষমা করবেন?

মীর আব্দুল হান্নান সোনা মিঞা: ইনি রেলওয়েতে চাকরী করতেন। অবসর জীবনে গ্রামের বাড়িতে কাটিয়েছেন, মসজিদের কমিটিতে ছিলেন। খেদমত দিয়েছেন, সারাদিন মসজিদের বারান্দায় বসে থাকতেন। খুব মিষ্টভাষী মজার মানুষ ছিলেন।

(১) খন্দকার আব্দুল গফ্ফার (২) খন্দকার হোসেন উদ্দিন (৩) খন্দকার মতিয়র রহমান (৪) মীর জাফুরুর রহমান এরা সবাই শিক্ষকতা করতেন। মীর জাফুরুর রহমান বিএ, বিএল ছিলেন বৃটিশ আমলে ফুড ডিঃ এ চাকুরী করতেন। খুব সৎ লোক ছিলেন। অবসর জীবনে সবাই মসজিদ মাদ্রাসা কমিটিতে সদস্য ছিলেন।

ধর্মীয়, সামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিলেন। মসজিদ মাদ্রাসা ভিত্তিক সামাজিক অবকাঠামো তাঁদের হাতেই শক্ত ভিতের উপর মজবুত প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। আফসোস আজ কোথায় সেই বানিয়ারার সমাজ। কোথায় সেই সব মানুষ। আমাকে একজন খন্দকার আজম উদ্দিন, একজন মৌলবী মোজাফ্ফর হোসেন দিন- আমি হলফ করে বলতে পারি আবার বানিয়ারায় আরেকজন ডঃ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন জন্মাবে। আবার আশে পাশের সাইত্রিশ গ্রামে ধর্মীয় নেতৃত্ব দেবেন বানিয়ারার ইমাম সাহেবগণ।

আবহমান কাল থেকে বানিয়ারায় শিক্ষিত লোকদের বসবাস। এর মধ্যে মাত্র তিন পুরুষ আগে থেকে আমার বংশের শাহ মোহাম্মদ নকী নামে এক সাধক পুরুষ বানিয়ারায় এসে বসতি স্থাপন করেন। তাঁরই বংশধর চার ভাই বানিয়ারার প্রখ্যাত (১) হেলাল উদ্দীন (২) খন্দকার বেলাল উদ্দিন (৩) খন্দকার জালাল উদ্দিন ( খন্দকার আমান উদ্দিন যাদের পিতা টাঙ্গাইলের গালা থেকে বানিয়ারা এসেছিলেন বলেই হয়তো আমাদের কে লোকে গালার বংশ বা গালার গোষ্ঠি বলে জানে। (১) মুন্সি হেলাল উদ্দিন আরবী-ফার্সী, উর্দু-বাংলা, ইংরেজীতে খুব উঁচু মানের পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন।

দিল্লীতে তিনি ইংরেজদের দো-ভাষী হিসেবে রাজকার্য পরিচালনায় সাহায্য করতেন। (২) খন্দকার বেলাল উদ্দীন সাহেবের ছয় ছেলে ছিল (১) আমার দাদা ছিলেন প্রথম ছেলে খন্দকার আব্দুর রকিব (২) খন্দকার আব্দুল জব্বার (৩) খন্দকার আব্দুল হালিম (৪) খন্দকার আব্দুল খালেক (৫) খন্দকার আব্দুল মালেক (৬) খন্দকার আব্দুল গাফফার। তন্মধ্যে বানিয়ারার সামাজিক মানবিক কল্যাণ কাজে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিলেন ৪নং ছেলে খন্দকার আব্দুল খালেক সাহেবের ছেলে খন্দকার আজিজুর রহমান। হীরা মিঞা বিখ্যাত উকিল ছিলেন।

বৃটিশ আমলে টাঙ্গাইল টাউনে মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম বানিয়ারা লজ" নামে দোতলা দালান নির্মাণ করেন। মহেড়ার জমিদার গীরেন চৌধুরীকে ভোটে পরাজিত করে তিনি মেজরিটি হিন্দুভোটে টাঙ্গাইল মিউনিসিপ্যালিটির দুই দুই বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বৃটিশ আমলে তিনি বানিয়ারাতে সাধারণ মানুষের পানির অভাব মেটানোর লক্ষ্যে গোসলাদি করার সুবিধার জন্য দুই দিকে শান বাঁধানো ঘাটলা বিশিষ্ট একটি পুকুর খনন করেন।

বানিয়ারার আশে পাশে নদী না থাকায় তখনকার সময়ে পানির অভাবে মানুষ খুব কষ্ট পেত। সেই সময় হীরা মিঞার কোনো উপদেষ্টা তাকে বলেছিলেন “এই পুকুরে কোন খারাপ লোক কে গোসল করতে দেবো না। তিনি বলেছিলেন, কোন মানুষ আমাকে খুন করে সেই রক্ত মেকেও যদি গোসল করতে আসে- তবে তাকেও মানা করা যাবে না। বানিয়ারার সেই সদকায়ে জারিয়া মানুষকে শীতে গ্রীষ্মে খেদমত দিচ্ছে।

খন্দকার বেলাল উদ্দিন সাহেবের ৩নং ছেলে খন্দকার আব্দুল হালিম মরহুমের সুযোগ্য পুত্রদের মধ্যে ব্যারিষ্টার কে.এ. বাকের আর্ন্তজাতিক খ্যাতিমান মানুষ ছিলেন। তিনি দশ বছর বাংলাদেশ সরকারের এ্যাটর্নী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশের মন্ত্রী ছিলেন। ধর্ম মন্ত্রী থাকাকালীন বানিয়ারা মসজিদের পাশে সরকারী অর্থে একটি পাকা দালান তৈরী করে দেন। মসজিদের অফিস মিটিং, কোন ধর্মীয় মেহমানদের বসার জন্য দুই কক্ষ ও বারান্দা বিশিষ্ট স্থাপনাটি অজ্ঞাত কারনে কে বা কাহারা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজও তার কোন প্রতিবাদ পর্যন্ত হল না। আবার মরহুম ব্যারিষ্টার সাহেবের স্ত্রী লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে বাৰ্ম্মা টিকের দরজা বানিয়ে বানিয়ারা মসজিদে লাগিয়ে দিয়েছেন।

খন্দকার বেলাল উদ্দিন সাহেবের ভাই খন্দকার আমান উদ্দিন সাহেবের পুত্র খন্দকার আবু সাঈদ দুদু মিঞা সাহেব ছিলেন খুব সহজ সরল মানুষ। তার মেজ ছেলে খন্দকার বদর উদ্দিন ১৯৯১ইং সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বানিয়ারা মাদ্রাসার জন্য সাড়ে আট লক্ষ টাকা মঞ্জুর করান।

গ্রামের একটি মহল শত্রুতা মূলক অযথা মামলা করে মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করায় সেই আট লক্ষ টাকা আজও পাওয়া যায় নি। খন্দকার বেলাল উদ্দিন সাহেবের প্রথম পুত্র আমার দাদা খন্দকার আব্দুর রকিব ২য় পুত্র খন্দকার আব্দুর জব্বার। আমার দাদার দুই পুত্র সন্তান ছিলেন। আমার বাবা খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, কাকা খন্দকার আব্দুস ছালাম। বাবা গ্রামেই থাকতেন শিক্ষকতা করতেন। কাকার ছিল বৈচিত্র্যময় জীবন। জীবনে তিনি চার পাঁচটা চাকরী করেছেন। আইন ব্যবসা করেছেন। তাঁর চাকরীর সুবাদে কোলকাতা, চন্দননগরের অনেক সৌখিন আসবাবপত্র আমাদের বাড়ীতে আমরা দেখেছি। আমার চাচাত ভাই খন্দকার আজিজুল হক বাকা মিঞা ষাটের দশকে বানিয়ারার অনেক মানুষকে চাকরি দিয়েছেন। যখন বানিয়ারায় অনেকের কাছে কোন টাকা পয়সা ছিল না। বাকা মিঞা তখন বানিয়ারা মসজিদের বারান্দা তৈরী করে মুসুল্লীর চাপ মেটানোর জন্য মসজিদকে সম্প্রসারিত করেছেন। মিনার তৈরী করে মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধন করেছেন।

আমি ছোট বেলা থেকেই সর্ব জনাব মৌলবী মোজাফ্ফর হোসেন, খন্দকার আজম উদ্দিন সাহেবদের ছাত্র সুবাদে তাঁদের নির্দেশে মসজিদ মাদ্রাসায় জানে মালে বহু খেদমত দিয়ে এসেছি। ১৯৭৩ সালে আমার বয়স কম ছিল। মসজিদ মাদ্রাসার সম্মিলিত বার্ষিক সভায় উপস্থিত তিন চার হাজার লোক খাওয়াবো বলে ওয়াদা করে ৮-১০টা বড় বড় ষাড় জবাই করে খিচুরি রান্না করে তখনকার দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছিলাম। পৌষের দারুন শীতে সভা শেষ হতে রাত বারোটা হয়েছিল। সে শীতের প্রকোপে অনেক গরীব মানুষ না খেয়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁরা আমাকে অভিশাপ দিয়েছিল। সেদিনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তখন ১০ টাকা ব্যাগ সিমেন্ট ছিল। লক্ষ টাকায় বানিয়ারা মাদ্রাসার পাকা দালান তৈরী করা যেতো।

বিগত ৫০ বছর যাবৎ বানিয়ারা মসজিদ মাদ্রাসা ভিত্তিক ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার এক নিরলস কর্মী হিসেবে আল্লাহ পাক আমাকে অনেক খেদমত দেবার তৌফিক দিয়েছেন। রহমতের ছায়ায় আমার সন্তানদের যোগ্যতম মানুষ করেছেন। তারা আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের খেদমতে, জাতির খেদমতে নিয়োজিত। বানিয়ারার মানুষের কাছে আমার প্রাণের দাবী, আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহ পাক সব দিবেন। মানুষ একদিন দিলে ২য় দিন দুব্যবহার করবে। অনেক মানুষ মতলবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আল্লাহর এবাদত করুন। আল্লাহ আপনাকে অফুরন্ত নেয়ামত দান করবেন।

সর্বশেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে দরখাস্ত করি, হে পরওয়ারদেগার, "বাবা শাহবর শাহ (রঃ) এর অন্তীম শয়ানের গ্রাম বানিয়ারাকে বড় মৌলবী সাহেব এর জন্মভূমি, মৌলবী মোজাফফর হোসেন, খন্দকার আজম উদ্দিন প্রমুখ মনিষীর মাতৃভূমি বানিয়ারা গ্রামে তোমার হাবিবের এই ঘর তার মহব্বতের ওছিলায় হেফাজত কর। ষড়যন্ত্রমুক্ত কর। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আগ্রাসন মুক্ত কর। কালো টাকার, পেশী শক্তির কবল থেকে হেফাজত কর। গ্রামের আসল ঐতিহ্য ফিরিয়ে দাও। সবাই কে তোমার নেককার, ঈমানদার বান্দা বানিয়ে দাও। আমীন। ছুম্মাআমীন"

১লা এপ্রিল ২০০৭

খন্দকার আশফাকুর রহমান

বানিয়ারা, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ট্রয় নগরী ধ্বংসে ‘ইরিস’ নাকি ‘হেলেন’, কে দায়ী?

স্রষ্টা পৃথিবীর বংশগতি রক্ষার জন্য নারী ও পুরুষ প্...

জয়ে ফিরল আর্জেন্টিনা

শেষ মুহূর্তে লাউতারো মার্টিনেজের দুর্দান্ত এক গোলে...

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে শিল্পকলায় ভাস্কর্য কর্মশালা: পরিচালনায় ভাস্কর পাপিয়া

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের তত্ত্...

এ আর রহমানের ২৯ বছরের সংসার ভাঙছে

দীর্ঘ ২৯ বছরের সংসার ভাঙছে খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ, অস...

ঝিনাইদহে সুদের টাকা না পেয়ে বাড়ি দখলের অভিযোগ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সুদের টাকা না পেয়ে এক দিনমজুরে...

বিচারের পরই নির্বাচনে স্বাগত জানানো হবে আওয়ামী লীগকে

‘আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কর...

কাল ঢাকা আসছেন বাইডেন প্রশাসনের বিশেষ প্রতিনিধিদল

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধি...

নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের নির্দেশ আইসিসির

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশ...

নতুন সিইসি নাসির উদ্দীনের নাম ছিল বিএনপির তালিকায়

অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন প্রধান নির্ব...

আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ তিশার

শুটিং সেটে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ তুলেছেন...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা