আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সম্প্রতিক সময়ে কলম্বিয়ার আমাজনে বন উজাড় বাড়ছে। এ বন উজাড়ের মাত্রা ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আমাজন রেইন ফরেস্টকে 'দর কষাকষির অস্ত্র' হিসাবে ব্যবহার করছে।
দেশটির পরিবেশমন্ত্রী সুসানা মুহাম্মাদ বলেছেন, প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে- সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রেইন ফরেস্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করায় ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এই অঞ্চলে বন উজাড় ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
বোগোতায় এক সংবাদ সম্মেলনে মুহাম্মাদ বলেন, আমরা বন উজাড়ের একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি, যা বেশ উদ্বেগজনক। এর দুটি প্রধান কারণ রয়েছে।
প্রথমটি হচ্ছে- ওই এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর (স্থানীয় জনগণের) অত্যন্ত বলপ্রয়োগ এবং দ্বিতীয়টি স্পষ্টতই অগ্নিকাণ্ড, অনুকূল পরিস্থিতি যা জলবায়ুর সঙ্গে সম্পর্কিত।
দেশের ইতিহাসে প্রথম বামপন্থী প্রশাসন গুস্তাভো পেত্রোর সরকার সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত পরিবর্তন এনেছেন।
কলম্বিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কলম্বিয়াজুড়ে বন উজাড় ২৯ শতাংশ কমে ২০১৩ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে এটি আরও ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ কমেছে। তবে সেই প্রবণতার অবসান ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
অভূতপূর্ব বন উজাড়ের কমে আসা মূলত এস্তাদো মেয়র সেন্ট্রাল (ইএমসি) এর আদেশের কারণে হয়েছিল। ভিন্নমতাবলম্বী বিদ্রোহীদের গ্রুপ যারা দক্ষিণ কলম্বিয়ার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে ছিল, ইএমসি পেট্রো সরকারের সাথে আলোচনার টেবিলে ২০২২ সালে বন উজাড় নিষিদ্ধ হয়।
তবে কলম্বিয়ার আমাজনে বন উজাড় আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালের শেষ ৩ মাসে ৪১ শতাংশ বেশি হয়ে যায়, যা ১৮,৪০০ হেক্টরে পৌঁছেছে। উদ্বেগজনক এ প্রবণতা চলতি বছরও অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক সরকারি পরিসংখ্যান দেখায়, ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে ৪০ শতাংশ বেশি বনভূমি কমে এসেছে।
পরিবেশমন্ত্রী সুসানা মুহাম্মাদ বলেন, আমরা আশঙ্কা করেছিলাম বন উজাড় বাড়বে। তবে যে মাত্রায় বন উজাড় বাড়ছে, সেটা আমাদের আশঙ্কারও বাইরে! এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (এফসিডিএস)-এর পরিচালক রদ্রিগো বোটেরো বলেন, গত ছয় বছরে আমরা ৫ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি বনভূমি হারিয়েছি।
আমরা এমন এক পর্যায়ে রয়েছি, পূর্বের অবস্থায় আর ফেরা হবে না! বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম, জীববৈচিত্র্যময় ও নাজুক বাস্তুতন্ত্রে গবাদি পশু চাষ ও কোকা উৎপাদন আশঙ্কাজনক। তারা গায়ানা শিল্ডের মতো অঞ্চলে পৌঁছেছে যা জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে অসীমভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রক্রিতির এই ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে কয়েক শতাব্দী সময় লেগে যাবে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কলম্বিয়ায় আমাজন বনাঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা স্থানীয় লোকজনকে বাস্তুচ্যুত করেছে। পরিবেশবাদীদের হত্যা করেছে। ওই অঞ্চল থেকে সরকারি কর্মকর্তাদেরও তাড়িয়ে দিয়েছে। বন রক্ষার উদ্দেশ্যে ইকোট্যুরিজম উদ্যোগ এবং বন সংরক্ষণকারী কৃষকদের জন্য অর্থ প্রদানের প্রকল্পগুলোও বন্ধ করতে বাধ্য করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।
পরিবেশমন্ত্রী সুসানা মুহাম্মদ বলেন, প্রকৃতিকে সংঘাতের মাঝখানে দাঁড় করানো হচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকা এ বছর চরম খরা এবং রেকর্ড তাপমাত্রার সম্মুখীন হয়েছে। তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স
এবি/এইচএন