সংগৃহীত
রাজনীতি

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই ডজন নতুন রাজনৈতিক দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তারপর পেরিয়ে গেছে প্রায় নয় মাস সময়। এই সময়ে দেশে একের পর এক রাজনৈতিক দল গঠন হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর দুই ডজন নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।

সর্বশেষ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে একটি দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।

আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টি’ নামে আরেকটি রাজনৈতিক দলের। এ ছাড়া সামনে আরো দল আসতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের আগে আগে এমন রাজনৈতিক দল গঠনের ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। তাদের অনেকের মতে, বেশি বেশি রাজনৈতিক দল গঠনের পেছনে ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’ জড়িত আছে। এর মাঝে সাধারণ মানুষ অনেক রাজনৈতিক দলের নামই শুনেনি কোনোদিন।

নতুন দলগুলোর মধ্যে কেবল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মূলধারার রাজনীতিতে আলোচিত দল। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণ-যুবকদের গড়া এই দলের আত্মপ্রকাশ দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন অনেকে। তারপরও তাদের অনেকের বিরুদ্ধে সরকারের কাছাকাছি থেকে নানা বাণিজ্যের অভিযোগ আসছে। অনেককে পরে দল থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর— এই পাঁচ মাসে ১১টি দল আত্মপ্রকাশ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দল এসেছে সেপ্টেম্বরে। গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি) নামের একটি রাজনৈতিক দলের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গত বছরের ২৩ আগস্ট দলটির ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ সিদ্দিক হোসাইন ও এস এম ডি জিদানের যৌথ উদ্যোগে দলটি গঠিত হয়েছে।

এরপর ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, ২০ সেপ্টেম্বর সমতা পার্টি, ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), ২৭ সেপ্টেম্বর সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১, ২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি) ও ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

চলতি বছরের চার মাস শেষ হওয়ার আগেই আরো ১২টি নতুন রাজনৈতিক দল এসেছে। এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি এক দিনেই দুটি দলের আবির্ভাব ঘটে। দল দুটি হলো আমজনতার দল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি। এর আগে ৪ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে দেশ জনতা পার্টি।

ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করে তিনটি দল— বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

মার্চে জন্ম জনতার বাংলাদেশ পার্টি ও জনতার দলের। চলতি মাসে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসে। ১১ এপ্রিল গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ১৩ এপ্রিল ভাসানী জনশক্তি পার্টি, ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি) এবং শুক্রবার জনতা পার্টি বাংলাদেশ প্রকাশ্যে আসে। আজ শনিবার আরেকটি দলের নাম ঘোষণা হতে যাচ্ছে।

শুক্রবার সকালে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আত্মপ্রকাশ ঘটে জনতা পার্টি বাংলাদেশ-এর। দীর্ঘদিন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন নতুন এই দলের চেয়ারম্যান। আর মহাসচিব হলেন সাংবাদিক নেতা ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। দলীয় ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে’ লিপ্ত থাকার অভিযোগে ২০২৩ সালের ২১ মার্চ তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলটির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র হয়েছেন গোলাম সারোয়ার মিলন। তিনি বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টি, সেখান থেকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলে (পিডিপি) যোগ দিয়েছিলেন। নতুন দলে আসার আগে সর্বশেষ বিকল্পধারায় ছিলেন।

এদিকে নতুন দলের ঘোষণার আগের দিন ইলিয়াস কাঞ্চনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন শফিকুল ইসলাম সবুজ খান নামের এক ব্যক্তি। ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’ নামে তার একটি দল রয়েছে। কাছাকাছি নাম রাখায় তিনি আইনি নোটিশ পাঠান। তবে এই নিয়ে সমস্যা দেখছেন না জনতা পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

আজ শনিবার আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ নতুনধারা জনতার পার্টি’র। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম লেখা রয়েছে। তারা হলেন এ টি এম মমতাজুল করিম, মুহাম্মাদ আবদুল আহাদ নূর, রেজাউল হক, ইশারুল হোসেন, মিজানুর রহমান, মো. ওসমান গনী প্রমুখ।

জনপ্রিয় পার্টি, জাগ্রত পার্টি, আ-আম জনতা পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দলের নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে ১৭ এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি, যার প্রধান ডেসটিনির মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। ১২ বছর কারাভোগের পর গত ১৫ জানুয়ারি জেল থেকে বের হন এবং তিন মাসের মাথায় নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে হাজির হন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিগত সময়গুলোতেও রাজনৈতিক দল গঠনের প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে ৯৩টি আবেদন জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।

এবারো এখন পর্যন্ত ৬৫টি দল নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো দলের নাম গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের নামগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা।

ইসি সূত্র জানায়, এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫০টি। আরো ৪৬টি দল নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। এই দলগুলোর বেশির ভাগই নামসর্বস্ব। তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। ইসি নিবন্ধনের সময় বাড়ানোয় ধারণা করাই যায়, নিবন্ধন পেতে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা আরো বাড়বে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই এসব দলের উৎপত্তি বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, নির্বাচন এগিয়ে এলে এ ধরনের দল গঠনের তোড়জোড় দেখা যায়। একই সঙ্গে এর পেছনে থাকে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের হীন উদ্দেশ্যও।

রাজধানীতে ভ্যানচালক মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘বাংলাদেশে মনে করেন ১০ জনেও দল করন যায়। যার যার মতো খালি দল বানাইতাছে আর করতাছে। এগিলির কোনো ইস্টিমেট আছে? এগিলা দল আমরা ভ্যান গাড়িয়ালারাও বানাইতে পারি।’

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমা উল হুসনা সুপ্তি বলেন, ‘স্টুডেন্টদের সংগঠন বাদে ওইভাবে কোনো কিছু দেখা হয়নি।’

চাকরিজীবী তাহমিনা সালমা বলেন, আমি আমজনতা বলে বাংলাদেশের সবাইকেই বুঝি। কিন্তু এটা আবার দল?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ্ বলেন, ছাত্ররা (জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তরুণেরা) ভালো-মন্দ যাই হোক, একটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ে এসেছে। সেদিক থেকে তাদের একটা কিছু করার যৌক্তিকতা ছিল। কিন্তু এখন যেসব রাজনৈতিক দল আসছে, সেগুলো রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যই আসছে। এসবের নেপথ্যে কোনো মহলের জল ঘোলার প্রয়াসও থাকতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এর আগেও আমরা দেখেছি যখন নির্বাচনের গন্ধ এসে নাকে লাগে, তখন হঠাৎ করেই এমন অনেক দল গজিয়ে ওঠে ব্যাঙের ছাতার মতো।

তিনি বলেন, এ ধরনের দল তৈরির প্রবণতা দেখা গিয়েছিল এরশাদের আমলেও। এরশাদের আমলে বড় দলগুলো এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে সহযোগিতা করেনি বা করতে চায়নি, তখন এরশাদ দেখাতে চেয়েছিল যে দেশে প্রচুর রাজনৈতিক দল আছে। সুতরাং তারা নির্বাচনে এলেতো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, এখন একটি বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে সবার মধ্যে যে রাজনীতি করলে খুব দ্রুত লাভবান হওয়া যায়। রাজনীতি করলে খুব দ্রুত টাকাপয়সা কামানো যায়, আর ব্যক্তিগত প্রভাব খাটানো যায়- এটি ভেতরের উদ্দেশ্য আর কি।

তিনি বলেন, মূল যেটি সেটি হচ্ছে এটির পেছনে একটি রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয় জড়িত আছে।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

শিল্পী বিপাশা গুহঠাকুরতা স্মৃতি পুরস্কার পাচ্ছেন ড. পরিতোষ মণ্ডল

এ বছর শিল্পী বিপাশা গুহঠাকুরতা স্মৃতি পুরস্কার পাচ...

ভ্যাঙ্কুভারের কাছে হেরে বিদায়ের শঙ্কায় মায়ামি

ভ্যাঙ্কুভারের কাছে হেরে কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়ন্স কাপের সেমিফাইনালে থেকে বিদায়ের...

বাইক দুর্ঘটনায় প্রেমিক-প্রেমিকা নিহত

চট্টগ্রামের রাউজানে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তরুণ ও ত...

ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-এর আত্মপ্রকাশ

ঢাকাই সিনেমার একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন...

পাকিস্তানি অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে ‘ঢিল’ মারার অভিযোগ

পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) গতকাল মুলতান সুলতানসের ১৬৮ রান তাড়া করতে নেমেছি...

জারাকে আইনি নোটিশ, ক্ষোভ ঝাড়লেন ফারিয়া

অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচি...

ভালুকায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোর বেহাল দশা!

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের কাঁশর...

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাব দ্রুত পাস করার জোর দাবি জানিয়েছে তামাক...

বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে পুণ্ড্র বিশ্ববিদ্যালয়

আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে বগুড়ার পুন্ড্র ব...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা