শিল্প ও সাহিত্য
পাতা প্রকাশনি, প্রকাশক আলেয়া বেগম আলো

প্রসঙ্গ ড. ইসমাত মির্যা’র ‘হুমায়ুন আহমেদ, পরী ও কিছু চিঠি’


সাজু আহমেদ: বই প্রকাশনার জগতে ফি বছর নতুন মৌলিক গ্রন্থ মেলা ভার। বইপ্রেমীদের একমাত্র ভরসা বইমেলা। প্রায় মেলাতেই কিছু কিছু নতুন বই যুক্ত হয়। যা পাঠকদের নতুনভাবে সমৃদ্ধ করে। সেই তালিকায় অতি সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ড. ইসমাত মির্যা রচিত নতুন একটি ব্যতিক্রমী গ্রন্থ ‘হুমায়ুন আহমেদ, পরী ও কিছু চিঠি’। গত বছর একুশে বই মেলা উপলক্ষে পাতা প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের প্রকাশক আলেয়া বেগম আলো। বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাাহিত্যিক, নাট্যকার, নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ এর ব্যক্তিগত জীবনের প্রেম এবং প্রেমঘটিত কতিপয় চিঠি এবং তার এক গুণমুগ্ধ ভক্তের বয়াণে রচিত গ্রন্থটি বিশেষ কারণেই আলোচনায় এসেছে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে তো বটেই বিভিন্ন মাধ্যমে এই গ্রন্থটি নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। সেই সুবাধে লেখক ড. ইসমাত মির্যা’র পাশাপাশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাতা প্রকাশনিও আলোচনায় রয়েছে। যেমনটি চর্চায় রয়েছেন স্বয়ং প্রকাশক আলেয়া বেগম আলো। আলোচকরা বলছেন সৃজনশীল প্রকাশনী হিসেবে ড. ইসমাত মির্যা’র ‘হুমায়ুন আহমেদ পরী ও কিছু চিঠি’ গ্রন্থটি পাতা প্রকাশনির একটি শ্রেষ্ঠ কাজ। এ রকম আরও অনেক বৈচিত্রময় তথ্যবহুল গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে মৌলিক সৃজনশীলতা ধরে রাখতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। যা তাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে আরও ঋদ্ধ করবে। ড. ইসমাত মির্যা’র ‘হুমায়ুন আহমেদ পরী ও কিছু চিঠি’ গ্রন্থটিতে কি আছে ?
বইটি পাঠ করে জানা যায় হুমায়ূন আহমেদ তখন মাত্র শিক্ষকতা শুরু করেছেন। পরী (ছদ্মনাম) নামের একজন সুন্দরী মেয়েকে তিনি পছন্দ করেন। তিনি তাঁর বিভাগের আরেক ছাত্রী মহুয়ার মাধ্যমে পরীকে বিবাহের প্রস্তাব পরীর পরিবারের কাছে পাঠান। পরীর পরিবার থেকে স্যারের বাসায় তারা কথাও বলতে যান। স্যারের মায়ের সাথে দেখা করে আসেন তারা। তারা সময় নেন। ‘না’ও করেন না ‘হ্যা’ ও করেন না। মহুয়ার মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান প্রদান চলতে থাকে। মহুয়া স্যারের সম্পর্কে ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি শিক্ষক, ভালো লেখক, ভালো উপন্যাস লেখেন, পরীকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন ইত্যাদি বিষয়। এদিকে পরীর মা মহুয়াকে চিঠি দেন সেটা মহুয়া স্যারকে বলেন। স্যারের কথামতো আবার পরীর পরিবারকে চিঠি দেন। মহুয়া পরীদের বাসায় স্যার খুব আশা করেছিলেন যে পরীর পরিবার একদিন রাজি হবে। এদিকে পরীও সরাসরি কিছু বলে না। স্যারও না। স্যার আরেকটা চিঠিতে আক্ষেপ করে লিখেন মহুয়াকে, আমার চেহারা যদি অন্তত জাফর ইকবালের মত সুন্দর হতো তাহলে হয়ত পরী আমাকে পছন্দ করতো। এদিকে স্যারের আর্থিক অবস্থা তখন অতটা স্বচ্ছলও ছিলো না। শেষ পর্যন্ত একদিন পরীর পরিবার থেকে মহুয়াকে জানায় পরীর এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় স্যার খুব আঘাত পান। মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন। আর দীর্ঘ সময় চিঠি আদান প্রদান করতে করতে তিনি মহুয়ার উপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। একটা সময় যুক্তি দিয়ে বিচার করেন সুন্দরীর চেয়ের বুদ্ধীমতি নারী জীবনসঙ্গী হিসেবে উত্তম। সেই বিচারে মহুয়াকে প্রস্তাব করেন জীবনসঙ্গী হতে। মহুয়া কয়েকটি কারণ দেখিয়ে স্যারকে-ফিরিয়ে দেন- এবং জরি নামক মেয়েটিকে বিয়ে করতে বলেন। জরি হলো বয়সে ছোট স্যারের একজন ভক্ত। যে স্যারের লেখার অনেক বড় ভক্ত। স্যারের লেখা পড়ে স্যারকে পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু সে বয়সে স্যারের প্রায় ১৫ বছরের ছোট। স্যার প্রথমে তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। যে ও তো একটা বাচ্চা মেয়ে ওকে আমি বিয়ে করবো না। সেই জরির ফুপু এসে স্যারকে আকুতি জানায় আপনি আমার ভাতিজিকে বাঁচান। মহুয়াই বারবার জরিকে বিয়ে করতে তাগাদা দেয়। এই ঘটনাকালীন সময়ের স্যারের হাতের লেখা ও স্বাক্ষরিত ৮ টি চিঠি, পোস্ট অফিসের খাম ও পরীর মায়ের চিঠি, পরীর বোনের চিঠি মহুয়ার লেখা অনেকগুলো চিঠি হুবহু সংযোজন করা হয়েছে ‘হুমায়ূন আহমেদ পরী ও কিছু চিঠি’ বইতে। এই সত্য ঘটনা বইটিতে প্রমাণসহ ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা দেয়া আছে। এছাড়া স্যারের বিয়ে হওয়া পর্যন্ত ঘটনা আছে বইটিতে। বইটি লিখেছেন মহুয়া নিজে। মহুয়ার ডাক নাম । মূল নাম ড. ইসমাত মির্যা, পরবর্তীতে যিনি পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডিও করেছেন। চিঠিগুলো ৫০ বছর ধরে অপ্রকাশিত ছিলো। সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য বইটি একটি অমূল্য সম্পদ। বিশেষ করে যারা হুমায়ুন আহমেদ ও তার লেখা ভালোবাসেন তাদের জন্য খুবই জরুরী একটি বই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বইটি পাঠ করে মোঃ আব্দুল আজিজ খান নামে একজন লিখেছেন ‘প্রিয় ইসমাত! বইটা পড়লাম বললে ভুল হবে বরং গোগ্রাসে গিললাম। মাঝখানে সুইজারল্যা- থেকে শালিকার ফোনে অনেকটা সময় কেটে গেল। নয়ত আরো আগেই শেষ হতো। এর আগে এক সিটিংয়ে আর কোন বই শেষ করিনি। তবে আপনারটা শেষ করলাম। খুবই ভাল লেগেছে। অসম্ভব সুন্দর লিখেছেন। নায়িকাই যখন লেখকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় যখন লেখাটা সহজ নয় বরং কঠিন। আপনি এই কঠিন কাজটাই করেছেন। হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে অনেক না জানা কথা জানা গেল। যারা হুমায়ুন আহমেদ নিয়ে গবেষণা করবে তাদের এটি কাজে লাগবে। সংকোচ না করে সত্য প্রকাশ করায় আপনাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। পরীর পরিচয়টা জানার অপেক্ষায় রইলাম। কয়েকটি বানানসহ কয়েকটি মুদ্রণপ্রমাদ আছে। দাগিয়ে রেখেছি। ভাল থাকুন। ধন্যবাদ’।
তবে সবচেয়ে ভালো লিখেছেন এস এম নওশের নামে একজন ডাক্তার। তিনি লিখেছেন ‘দেশ বরেণ্য জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছুই নেই। উনি একাধারে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক, লেখক চিত্র পরিচালক এবং নাট্য নির্মাতা। আমরা সবাই জানতাম উনি উনার লেখার অন্ধ ভক্ত ক্লাস টেন পড়ুয়া কিশোরির প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করেন। আসলে বিষয় টি তা ছিল না। ড. ইসমাত মীর্যার বই থেকে আমরা জানতে পারি হুমায়ুন আহমেদ প্রথম প্রেমে পড়েন উনারই এক ছাত্রী যিনি লেখিকার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন। যাকে বইতে ছদ্ম নাম দেয়া হয়েছে পরী। এই পরী নামটা কিন্তু উনার বিভিন্ন বইতে এসেছে। তার মানে পরী নাম টা উনার ঠিক কাল্পনিক নয়। উনার একটা লম্বা টিভি সিরিয়াল ছিল ‘নক্ষত্রের রাত’। সেখানেও পরী নামের চরিত্র ছিল। বইটি পড়ে ব্যক্তি হুমায়ুন আহমেদকেও অনেক টা যেন জানা যায়। প্রচন্ড রকম খেয়ালি না হলে কেউ কি তার ছাত্রীদের সিগারেট গিফট করে? আমার জানা নেই। উনার মোটা ফ্রেমের চশমার কাচ ছিল পাওয়ার লেস। কারণ তা না হলে উনাকে শিক্ষক শিক্ষক লাগছিল না। উনি খুব সেই মেয়েটিকে পেতে বলা যায় দিওয়ানা হয়ে গেছিলেন এক প্রকার প্রথম প্রেম। সেই মেয়েটির জন্যে এই প্রস্তাব ছিল ঢেঁকি গেলার মত। না পারছেন ফেলতে না পারছে উগড়াতে কারণ তার অন্য একটা পছন্দ ছিল। যা ই হোক মেয়েটি কৌশলে তাকে বলা যায় এক প্রকার ছ্যাকা ই দিয়ে দেয়। যা ভুলতে তিনি প্রস্তাব দেন এই বই এর লেখিকাকেই উনার জীবন সঙ্গিনী হতে। লেখিকা নিজেও অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং দূরদৃস্টি সম্পন্ন ছিলেন। তিনি তাঁর প্রস্তাব সু কৌশলে এড়িয়ে যান এবং তার বান্ধবীর কাজিন, ক্লাস টেন পড়–য়া কিশোরি যে কিনা হুমায়ুন আহমেদের লেখা পড়ে তাকে অন্ধের মত ভালোবেসে ফেলে তাকেই বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করেন। হুমায়ুন আহমেদ শেষ অবধি সেই মেয়েকেই বিয়ে করেন। এই বইতে বেশ কিছু চিঠি সংযোজিত আছে তার মধ্যে অনেকগুলো চিঠি হুমায়ুন আহমেদের নিজ হাতে লেখা ও স্বাক্ষরিত। ১৯৪/৭৫ সালে লেখা। তারমানে প্রায় ৫০ বছর আগের অপ্রকাশিত চিঠিগুলো। অবাক হয়ে যাই লেখিকা এত বছর ধরে চিঠি গুলা সংরক্ষণ করে গেছেন। তবে কি তাঁর মনের গোপন কোণে অই বরেন্য লেখকের প্রতি বিশেষ অনুভূতি ছিল? প্রশ্ন জাগে। বই এর প্রডাকশন মান দাম অনুপাতে অতো টা সন্তোষজনক নয়। যে দাম রাখা হয়েছে তাতে আরো ভাল মানের কাগজ দেয়া যেত। বাইন্ডিং একটু যেন নড় বড়ে। এটা হতে পারে মেলা উপলক্ষে প্রচুর কাজের চাপ ছিল বাইন্ডারদের। বইটি কে বলা যেতে পারে লেখিকার এক বিশেষ স্মৃতি কথা। চমৎকার লেখনি। যত সামান্য মুদ্রণ প্রমাদ রয়েছে বটে তবে সেটা আমলে নেয়ার মত নয়। ১০০% নিখুত কি আর সব হবে? বইটিতে পুরোনো কিছু ছবি দেয়া হয়েছে। এমন কি সেই ছদ্মনামের পরীর ও। বইটির শেষে এসে আমার মনে হল যেন আরো কিছু বলার ছিল কিন্তু তড়িঘড়ি করেই এর সমাপ্তি টানা হয়েছে। মনে হল লেখিকা কিছু বলতে গিয়েও যেন বলেননি বা বলতে পারেন নি। জীবন সায়াহ্নে এসে এরকম স্মৃতিকথা লেখিকার এক অনবদ্য উদ্যোগ বলা যায়’।

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জরুরি নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজন...

বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কিছু করবো না

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কিছু করবে না সরকার ব...

মণিপুরে ভয়াবহ সংঘাত, নিহত ৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের মণিপুরের জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলা...

ইকুয়েডরকে উড়িয়ে দিল ব্রাজিল

স্পোর্টস ডেস্ক : ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য লাতিন আমেরিকা বাছাইয়ে...

গণভবনকে জাদুঘর বানাতে কালকের মধ্যে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরে আগামীকালের মধ্য...

সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট বাজারে সাঈদু...

সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট ল...

ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরও ৩ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্...

সীমান্তে পিঠ প্রদর্শন করবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিজিবিকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন...

চাঁদাবাজি করলে ব্যবস্থা নিতে বলেছি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজার কারসাজি নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা